আওয়ার ইসলাম: আগের রাতে মা মারা গেছেন। কিন্তু পরীক্ষা না দিলে যে পিছিয়ে যাবে একটা বছর। সে কারণে মায়ের লাশ বাড়িতে রেখেই পরীক্ষা দিতে হলো সুমাইয়া আক্তার ও ইভানা হান্নান রিম্বিকে।
দুজনই এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। ফরিদপুরের সালথা ও কুমিল্লার বুড়িচংয়ের এ দুই মেয়ের ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষা ছিল সোমবার। হতভাগা মেয়ে দুটি পরীক্ষার ঠিক আগের রাতে হারায় তাদের মাকে। বাড়িতে মায়ের লাশ রেখেই পরীক্ষা দিতে আসা এ দুই মেয়ের কান্না সংক্রমিত হয় হলের অন্যদের মাঝেও। সবার সহানুভূতি ও সান্ত্বনায় চোখের জলে পরীক্ষা শেষ করে তারা।
সকালে পরীক্ষা দিতে সুমাইয়া আক্তার যখন সালথা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়, তখন তার চোখে বাঁধভাঙা অশ্রু। বারবার কান্নায় ভেঙে পড়লেও সহপাঠী ও কেন্দ্র সচিবদের সহযোগিতায় ওই ছাত্রী পরীক্ষা শেষ করে। এ সময় সালথা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রে শোকের ছায়া নেমে আসে। এক হাতে চোখ মুছতে ও অন্য হাত দিয়ে লিখতে দেখা যায় সুমাইয়াকে। সংবাদ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মাদ মোবাশ্বের হাসান পরীক্ষাকেন্দ্রে ছুটে গিয়ে সুমাইয়াকে সান্ত্বনা দেন।
জানা যায়, সুমাইয়া আক্তার ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর গ্রামের মো. সহিদ মোল্যার মেয়ে ও সালথা উপজেলার আটঘর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। রোববার রাতে সন্তান প্রসবকালে ঢাকার একটি হাসপাতালে সুমাইয়ার মা সেলিনা বেগম (৩১) মারা যান।
সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সুমাইয়ার মায়ের লাশ বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে। মায়ের লাশ বাড়িতে রেখেই পরীক্ষায় অংশ নেয় সুমাইয়া। আটঘর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহিদুর রহমান খান জানান, বেলা ১১টায় সুমাইয়ার মায়ের লাশ দাফন করা হয়।
একই রকম হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রামপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রেও। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিহারা ইউনিয়নের মুগদুধ গ্রামের আবদুল হান্নানের মেয়ে ইভানা হান্নান রিম্বি বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি এলাকায় নানার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করে। সে নাজিরাবাজার দা হলি কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
রোববার রাতে ইভানার মা তাছিলিমা বেগম (৩৫) ক্যান্টনমেন্ট থেকে বাবার বাড়িতে যাওয়ার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কালাকচুয়ায় হোটেল বিরতির সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি অ্যাম্বুলেন্সের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। মায়ের মৃত্যুশোকে ভেঙে পড়া ইভানা সকালে কেন্দ্রে যায় পরীক্ষা দিতে। খবর পেয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শাহ পরান আজাদ উপস্থিত হয়ে শোকাহত মেয়েকে সান্ত্বনা দেন।
‘শিগগির তাজমহলকে তেজ মন্দির বানানো হবে’