সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে আমরা কী খাচ্ছি?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন

রাষ্ট্রের নাগরিকের পাঁচ মৌলিক অধিকারের একটি খাদ্য অধিকার। নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা এর মধ্যেই পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশে এ অধিকার নানাভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। উৎপাদন, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতের বিভিন্ন ধাপে খাদ্যদ্রব্যে নানা ধরনের রাসায়নিক মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে ব্যবহার করা হচ্ছে।

অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবস্থাপনাগত কারণে অনিরাপদ হয়ে পড়ছে খাদ্যদ্রব্য। ফলে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও নিরাপদ খাদ্য মানুষের নাগালের বাইরে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য আইন ও বিধিমালার খুব যে অভাব তা নয়। দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনায় না-কি জড়িত ১৮টি মন্ত্রণালয় ও সংস্থা।

সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ আরও ৪৮৬টি প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে জড়িত। রয়েছে ১২০টি আইন ও প্রবিধানমালা। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছেটা কী?

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে জমিতে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার। কীটনাশক ব্যবহার করতে গিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কৃষক মাত্রা না বুঝে মাঠে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে থাকে। মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে অনেক সবজিই খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে। প্রশ্ন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে আমাদের কী খেতে হয় বা হচ্ছে?

সম্প্রতি খাদ্যদ্রব্যে ভেজালের যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে তা হলো ফরমালিন। সব ধরনের খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে প্রিজারভেটিভ হিসেবে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে। অথচ ফরমালিন এমন এক রাসায়নিক যা কখনই খাদ্যের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু পঁচন রোধের নামে অসাধু ব্যবসায়ীরা এ রাসায়নিকটি ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছেন। দুধ, মৌসুমী ফলসহ মাছ-মাংস এবং অনান্য খাদ্যেও ফরমালিন মেশানোর প্রবণতা রয়েছে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক জরিপ প্রতিবেদনে রাজধানীর পথ খাবারের ৯০ শতাংশের মধ্যে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর জীবাণু থাকার যে তথ্য ওঠে এসেছে তা শিউরে ওঠার মতো।

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- বিভিন্ন বাজার থেকে সংগৃহীত ১৮টি করে খোলা ও নয়টি ব্র্যান্ডের সয়াবিনে, একই সংখ্যক খোলা ও ১৩টি ব্র্যান্ডের সরিষার তেলে এবং সমসংখ্যক খোলা ও ২০টি ব্র্যান্ডের ঘি পরীক্ষা করে মাত্র একটি ব্র্যান্ডের ও দুটি খোলা সয়াবিনের নমুনা মানসম্মত পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তিনটি সাধারণ সেমাই ও ১০টি লাচ্ছা সেমাইয়ে মানসম্মত মাত্রার চেয়ে কম প্রোটিন ও আয়রন পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগৃহীত ১৫০টি সবজির নমুনা পরীক্ষা করে ৪৫টিতে পাওয়া গেছে বিভিন্ন রকম কীটনাশক। ভালো করে ধুয়ে ফেলার পর ছয়টি সবজিতে কীটনাশক অক্ষত পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যে ক্ষতিকর উপাদান থাকা এবং মানহীনতার যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা উদ্বেগজনক। সবচেয়ে আতঙ্কিত হওয়ার বিষয় হলো, পথ খাবারের ৯০ শতাংশেই ই-কোলাই, সালমোনেলা, ইস্ট মোল্ডের মতো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর জীবাণু থাকার বিষয়টি।

এক্ষেত্রে বলতেই হয়- দেশে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ক্ষমতায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা প্রদান ও দক্ষ জনবল নিয়োগের মাধ্যমে সংস্থাটিকে শক্তিশালী করে তোলা প্রয়োজন। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে শক্তিশালী করা না হলে যতই সমস্যার কথা বলা হোক, তা সমাধানের উপায় বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে।

খাদ্যে ভেজালের চেয়েও দূষণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কাঁচাবাজারগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রাখার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে সচেষ্ট হতে হবে। এক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনকে নিজ নিজ কর্মপরিধি তৈরি করতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত পরিদর্শনের আওতায় আনতে হবে।

ইনস্টল করতে ক্লিক করুন এখানে

এসডিজির সঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পুষ্টি, শিক্ষাসহ বহুমাত্রিক বিষয় জড়িত। তাই নীতিনির্ধারকদের কাছে এ বিষয়গুলো উপস্থাপন করে শুধু ভেজাল প্রতিরোধই নয়, দূষণ প্রতিরোধেও পদক্ষেপ নিতে হবে। সবার জন্য নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি এসডিজির একটি অন্যতম লক্ষ্য। ১৬ কোটি জনগণের এ দেশে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জও বটে।

দেশে খাদ্যকে নিরাপদ রাখতে যে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে এবং এটি বাস্তবায়নে যে কর্তৃপক্ষ রয়েছে, সে সংস্থা যেন সুষ্ঠুভাবে তাদের জনগুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম চালাতে পারে, তা নিশ্চিত করতে সরকারকেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। কেবল আইন ও কর্তৃপক্ষই শেষ কথা নয়, প্রতিটি মানুষকেও সচেতন হতে হবে নিরাপদ খাদ্য ক্রয় ও পরিভোগের ব্যাপারে।

সবার সম্মিলিত সচেতনতার মাধ্যমেই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উৎপাদক, বিপণনকারী, ভোক্তা সবাইকেই সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে আইনের যথাযথ প্রয়োগ।

লেখক : কবি, কলামিস্ট ও সাংবাদিক
সহযোগী সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম

নতুন রাষ্ট্রপতির সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ