শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


বঙ্গবন্ধুর বাড়ি নিয়ে শামস সাইদের উপন্যাস ‘ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

যিয়াদ বিন সাঈদ

ধানমন্ডি ৩২ নম্বর। একটি উপন্যাস। রাজনৈতিক ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি বর্ধিত কলেবরে নির্মাণ। দক্ষ নির্মাতা শামস সাইদ এর রচয়িতা। ৩২ নম্বর রোড ধরে হেঁটে গেলে ৬৭৭ নম্বরের একটি সুরম্য ইমারত যে দেখা যায়, যার পাশে সারাক্ষণ মানুষের সরবতা। পাখিদের কিচিরমিচির। গাছে গাছে পাতাদের কল্লোল। পরবর্তীতে যাদুঘর হয়ে যাওয়ায় যেখানে দেখা যায় মুখ কালো করে সমগ্র দেহ-মনে বিষাদের পষ্ট ছাপ নিয়ে মানুষেরা এদিকওদিক যাচ্ছে, প্রত্যক্ষ করছে পৃথিবীর মানচিত্রে ফুটে থাকা এক ইতিহাস, এক ট্র্যাজেডি, এরই নাম বত্রিশ নম্বর।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বাড়িটিতে ১৯৭৫ সনের ১৫ অগাস্ট ঘাতকদের হাতে প্রাণ দিয়েছিলেন। পরদেশে পরবাসী হয়ে শোকসন্তপ্ত মানুষকে অকূল দরিয়ায় নিমজ্জিত করেছিলেন।

এমনই ইতিহাসখ্যাত বাড়িটিকে উপজীব্য করে শামস সাইদ নির্মাণ করেছেন একটি দীর্ঘ উপন্যাস। এ ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুর্দান্ত সব কল্পনা। আছে না জানা অনেক তথ্য-উপাত্ত।

উপন্যাসের ভাষায় এবং আনন্দ বেদনার ভেতর দিয়েই শামস সাইদ পাঠককে জানিয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন এক ইতিহাস। সুদীর্ঘ এক ট্র্যাজেডি। যে ইতিহাস একজন বাঙালীকে আবশ্যকীয় ভাবে জেনে নিতে হবে। বুঝে নিতে হবে। তাই তিনি আরাম করে লোকমা তুলে খাইয়ে দিতে চেয়েছেন পাঠককে। চেয়েছেন বাংলাদেশের এ অপূর্ণ ক্ষেত্রটি পূর্ণতায় ভরপুর করতে।

শামস সাইদ ঠিক কী কারণে এমন একটি বাড়িকে কেন্দ্র করে উপন্যাস লিখতে গেলেন; তা নিয়ে আমাদের ভাবিত হৃদয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। কিন্তু বইয়ের পাতা যখন ওল্টাতে থাকবে, গোচর হতে থাকবে সব দৃশ্যপট, তখনই পাঠকের কাছে সকল অন্ধকার সরে গিয়ে ফুটে ওঠবে এক সোনালি সূর্য।

৩২ নম্বরের এই বাড়িটির বাকিংহাম প্যালেস, হোয়াইত হাউজ, ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট, রাইসিনা হিল কিংবা ক্রেমলিনের মত সরকারী কোনো মর্যাদা ছিলোনা। ছিলো না দেয়ালে সেঁটে থাকা কোনো নেইমপ্লেট। কিন্তু এই বাড়িটি বাঙালি জাতির হৃদয়ে গেঁথে আছে অনন্য এক মর্যাদা নিয়ে। প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে প্রেমের এক সুরম্য দালান হয়ে।

পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বাড়ি নজিরবিহীন। ১৯৬২ সালে যখন আইয়ুব খানের সামরিক শাসন শুরু হল, নিপীড়িত বাঙালির মনে তখনই দানা বাঁধতে থাকলো অসন্তোষ। শেখ মুজিবুর রহমান গণমানুষের নেতা হয়ে উঠলেন। সে সময়ে ৩২ নম্বরের এ বাড়িটি ছিলো মুক্তির প্রতীক। বাঙালির ভরসা ও আশ্রয়স্থল।

৬২ তে ‘আইয়ুব বিরোধী আন্দলোন,’৬৬তে ছয় দফা,‘৭০এর নির্বাচন আর ৭১এর ‘অসহযোগ আন্দোলন- এসব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বঙ্গবন্ধু যত পরিকল্পনা এবং পরামর্শ করেছেন, তার সবই এ বাড়িটিতে। ৭১ এর উত্তাল দিনগুলোতে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের ভিড় করতো এ বাড়িতে। আর রেসকোর্সের সেই যে উত্তপ্ত কণ্ঠস্বর, তার রূপরেখা তিনি এখানে বসেই তৈরি করেছিলেন।

২৩ মার্চ এ বাড়িতেই স্বাধীন বাংলার লাল সবুজ পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিলো। এ বাড়ি থেকেই বঙ্গবন্ধু বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্যে সংগ্রামের বীজ বোপন করে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সাত কোটি বাঙালীর প্রাণে প্রাণে।

পৃথিবীর ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল এক বাড়িকে উপজীব্য করে লেখক শামস সাইদ পাঠকের কাছে মেলে ধরেছেন এ উপন্যাসকে। এ উপন্যাসকে পাঠকের দ্বারস্থ করতে তার প্রচণ্ড ধৈর্য ও দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হয়েছে।

২ লক্ষ ১৭ হাজার শব্দ লিখে তিনি একবার হারিয়ে ফেলেছিলেন পুরোটাই। তবুও তিনি থেমে যাননি। নিরলস প্রচেষ্টা করে তিনি পৌঁছুতে পেরেছেন গন্তব্যে।

সুবিশাল এ উপন্যাসটি লেখার পেছনে নিশ্চয় তার প্রচণ্ড ভালোবাসা ছিলো। পাঠকের প্রতি প্রেম ছিলো। নচেৎ তিনি একবার হারিয়ে যাবার পরও কেন তার প্রচেষ্টাকে দমিয়ে ফেললেন না?

তাই আমার মনে হয় দেশ কে ভালোবেসে লেখকের এ প্রেমকে নিজের মাঝে লালন করে আমাদের প্রত্যেককেই ‘ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর’ সংগ্রহ করা নিতান্ত আবশ্যকীয় এক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। লেখকের এ প্রচেষ্টার পূর্ণ প্রতিদান তিনি পাবেন।

বইঃ ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর। লেখকঃ শামস সাইদ
প্রকাশনীঃ অন্বেষা প্রকাশন। প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ
নামলিপিঃ সাইফ সিরাজ। মূল্যঃ ৬০০

বইমেলায় আসছে রাকিব আল হাসানের দূরত্বমা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ