সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ঢাবিতে আন্দোলন: দ্রুত বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন

ঢাকার সাত কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তি নিয়ে বহু হাঙ্গামা ঘটে গেলেও আজ পর্যন্ত এর কোনো সুরাহা হলো না। এ নিয়ে আন্দোলনে এক শিক্ষার্থীর চোখ গেল, শিক্ষার্থীরা যৌন নিপীড়নের শিকার হলেন এবং শেষ পর্যন্ত উপাচার্যের কার্যালয় অবরোধ ও ভাঙচুর এবং ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটল। কিন্তু সাতটি কলেজের অসহায় ছাত্রছাত্রীদের দিকটি কারও কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে হয় না। যদিও এই সংকটের পেছনে সাত কলেজ বা এর শিক্ষার্থীদের কোনো দায় আছে বলে আমাদের জানা নেই।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ঢাকার যে সাত কলেজ ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- ঢাকা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, ইডেন কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও মিরপুর বাঙলা কলেজ। বাস্তবতা পর্যালোচনায় এটা স্পষ্ট, এই অধিভুক্তকরণের সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত ছিল না।

কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব একাডেমিক কর্মকাণ্ডের বাইরে প্রায় পৌনে দুই লাখ শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেওয়া সামান্য কোনো বিষয় নয়। তাছাড়া কেন অধিভুক্তকরণ করতে হলো, কী স্বার্থ ছিল, এ বিষয়গুলো আলোচনার ব্যাপার এ কারণে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীরা চাপে পড়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

৪০ হাজার শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে। এতসংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে এমনিতেই নানা চাপে থাকতে হয়। শিক্ষক, শিক্ষা উপকরণের ঘাটতি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মলগ্ন থেকেই।

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নানা পর্যায়ে অধিভুক্তি বদল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসির পরস্পরকে দোষারোপের যে বক্তব্য গণমাধ্যমে এসেছে, তাতে এর পেছনে তাদের ব্যক্তিগত রেষারেষির বিষয়টিও অগ্রাহ্য করা যায় না।

তাহলে কি ধরে নেওয়া যায়- এই বাস্তবতাবর্জিত সিদ্ধান্ত অথবা দুই ভিসির ব্যক্তিগত রেষারেষির শিকার হয়ে চলেছেন সাত কলেজের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী।

প্রসঙ্গত, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধিভুক্তি বদল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়ার পর বছর না ঘুরতেই এই কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা এক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। তারা পরীক্ষার ফল প্রকাশ চান, তারা পরীক্ষা দিতে চান, তারা ক্লাস করতে চান। তাদের এই ন্যায্য দাবির সুরাহা কেউ দিতে পারছে না। ফল প্রকাশ না পাওয়ায় এই শিক্ষার্থীদের অনেকে যেমন নতুন শিক্ষাবর্ষে ক্লাস শুরু করতে পারছেন না, তেমনি সময়মতো পরীক্ষা না হওয়ায় তাদের শিক্ষাজীবন দীর্ঘায়িত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে হামলার ঘটনায় দায়ী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, দোষীদের শাস্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচে আহতদের চিকিৎসা করা, প্রক্টর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচির সময় ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা প্রত্যাহার এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে গতকাল সোমবারও প্রগতিশীল ছাত্রজোটের আহ্বানে ছাত্র ধর্মঘট পালিত হলো। এদিন সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে তালা দিয়ে অবস্থান নেয় প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা।

ঘোষণা অনুযায়ী প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ধর্মঘটে সমর্থন দিয়ে মাঠে ছিল ‘নিপীড়ন বিরোধী’ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ছাত্রজোটের ধর্মঘটে সমর্থন ছিল বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের। উল্লেখ্য, এ আন্দোলনের মূলে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজের অধিভুক্তি।

এক্ষেত্রে বলতে হচ্ছে, অন্য কোনো কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিতে চাইলে, তাতে শিক্ষার্থীদের অভিমত নেওয়া প্রয়োজন ছিল। যা করা হয়নি সাতটি কলেজ অধিভুক্তকরণের ক্ষেত্রে। আবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা দেওয়ার অধিকারও অন্য কোনো সংগঠনের নেই। প্রযোজনে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারতেন। কিন্তু আন্দোলন দমাতে অন্য একটি ছাত্র সংগঠনের সহায়তা নিতে হবে কেন? কেন এ নির্ভরতা?

সবদিক বিবেচনায় বলতে হয়, অধিভুক্ত না করার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে, তা ন্যায়সঙ্গত বলেই ধরে নেওয়া যায়। কারণ প্রশাসনও অধিভুক্তকরণ নিয়ে ভুল পরিকল্পনার কথা স্বীকার করছে। অথচ শিক্ষার্থীদের দাবি মানল না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা একটি ন্যায্য দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছে, কিন্তু প্রশাসন তা আমলেই নিল না। এ নিয়ে বিতর্কিত ভূমিকা রাখল।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একেবারে নিম্নশ্রেণির আচরণ করল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিল। আন্দোলনকারীদের পুলিশে দেওয়া হলো। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ আচরণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করার কথা নয়।

মনে রাখা চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই ঘটুক তার একটা নূন্যতম আদর্শ থাকতে হবে। কারণ, এখানেই নীতি ও আদর্শের চর্চা হয়, তত্ত্বের জন্ম হয়, গবেষণা করে সত্য খুঁজে বের করা হয়। এর ব্যত্যয় হলে দেশ ও জাতি মুখ থুবড়ে পড়বে। বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে অনাস্থার জায়গা তৈরি হবে। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। আমরা চাই এমন এক ক্যাম্পাস যেখানে সুর, তাল, লয় থাকবে কিন্তু অসুর থাকবে না।

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন : কবি, কলাম লেখক ও সাংবাদিক
সহযোগী সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ