শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
‘খালেদা জিয়াকে প্রধান উপদেষ্টার সম্মান দেয়া সততার পুরস্কার’ ফ্যাসিস্ট সরকারের সব অন্যায়ের বিচার হবে : ডা. জাহিদ কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা

চার বছর পর যৌতুকের ৯০ হাজার টাকা ফেরত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম :  একটি হার্ডওয়্যার দোকানের কর্মচারী, নাম তার এরশাদ আলি। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা নিয়ে সে সমাজের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। চার বছর পর বিয়ের সময় যৌতুকের নেওয়া টাকা ফেরত দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এলাকায় সে এখন আলোচনার ঝড় তুলেছে। এ ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারীর জলঢাকা পৌর শহরের সবুজপাড়া এলাকায়।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) এরশাদের শাশুড়ি রাবেয়া বেগম গনমাধ্যমকে বলেন, ‘মেয়ের সুখের জন্য বিয়ের সময় জামাইকে ৯০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। পুরো টাকাটা জামাই গত শুক্রবার ফিরিয়ে দিয়েছে।’

এরশাদ আলী জলঢাকা পৌর এলাকার সবুজ পাড়া মহল্লার আতিয়ার রহমানের ছেলে। তিনি উপজেলা শহরের ভাই ভাই হার্ডওয়্যার নামের এক দোকানের কর্মচারী। চার বছর আগে তিনি জলঢাকার চ্যারেঙ্গা গ্রামের সুলতান আলীর মেয়ে রোজিনা বেগমকে বিয়ে করেন। ওই সময় রোজিনার পরিবারের কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা নেয় এরশাদ আলীর পরিবার।

এরশাদ আলী জানান, বিয়ের দিনই তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, শ্বশুর ও শাশুড়ির কাছ থেকে নেওয়া ৯০ হাজার টাকা একদিন ফেরত দেবেন। এরশাদ আলী বলেন, ‘বিয়ের সময় আমি যৌতুক নিতে চাইনি। আমার পরিবার আমাকে যৌতুক নিতে বাধ্য করেছিল। তাই বিয়ের পরদিনই স্ত্রীকে জানাই, একদিন যৌতুকের টাকাটা ফেরত দেবো।’

তিনি জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি একটু একটু করে টাকা জমাতে শুরু করেন। চার বছর পর ৯০ হাজার টাকা হলে তা ফেরত দেন শাশুড়িকে। তিনি বলেন, ‘শাশুড়ি প্রথমে টাকাটা নিতে রাজি হননি। তবে আমি তাকে রাজি করাই।’

এরশাদ আলী জানান, ‘যৌতুক দেওয়া-নেওয়া দু’টোই অপরাধ। যৌতুকের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় অনেকেই।’

এরশাদ আলীর বাবা আতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ভিটে-মাটি ছাড়া আমার কোনও জায়গাজমি নেই। ছেলেরা দোকানপাটে কাজকর্ম করে সংসার চালায়। আমি না বুঝে তখন যৌতুক নিয়েছিলাম। ছেলে তা ফেরত দিয়েছে।’

স্ত্রী রোজিনা বেগম জানান, আড়াই বছর আগে আমাদের ঘর আলোকিত করে শিশু কন্যা ফাতেমা। বিয়ের পর হতে স্বামী বার বার বলত, যৌতুক নেওয়া অপরাধ। রোজিনা আমি এই যৌতুকের দায় হতে যেন তাড়াতাড়ি মুক্ত হতে পারি। তুমি শুধু দোয়া করিও।

এরশাদের বড় শ্যালক মিজানুর রহমান (৩৯) বলেন, ‘আমি ঢাকায় রিকশা চালাই। শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) বাড়ি এসেছি। আমার ভগ্নিপতি যৌতুকের টাকা ফেরত দেওয়ায় আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর তা হলো আমিও বিয়েতে ১৫ হাজার টাকা যৌতুক নিয়েছিলাম, সে টাকাটা ফেরত দেবো। আগামী ৬ মাসের মধ্যে ওই টাকা ফেরত দেবো।’

এ ঘটনাটির সত্যতা স্বীকার করে শ্বাশুড়ি রাবেয়া বেগম বলেন, এমন জামাই কয়জনের ভাগ্যে জোটে? তিনি আরও বলেন, আমার জামাইয়ের এমন কাজে আমি গর্বিত। রোজিনার বিয়ের সময় জমি বন্ধক ও গরু বিক্রি করে জামাইয়ের অভিভাবকদের হাতে নগদ ৯০ হাজার টাকা যৌতুক হিসেবে দেই। চার বছর পর একটি গরুসহ সেই টাকা জামাই আমাকে ফেরত দিল। আমি জামাইয়ের জন্য দোয়া করি। এমন সন্তান যেন দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে জন্মে।

ওই এলাকার মসজিদের ইমাম আকবর আলি জানান, এ এক বিরল ঘটনা। এরশাদের এমন মহৎ উদ্যোগ দেখে আমাদের সমাজকে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ।

জলঢাকা ভাই ভাই ট্রেডার্সে স্বত্ত্বাধিকারী আজহার আলী জানান, শুধু কর্মচারি হিসেবে নয়, ব্যক্তি এরশাদ একজন সৎ ছেলে। তার এমন কাজ সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। দেশে যৌতুক ব্যধি দূর হবে এবং যৌতুককে মানুষ ঘৃণা করতে শিখবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল হক প্রধান বলেন, ‘যৌতুকের টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। এটি একটি ভাল উদ্যোগ, মহতি কাজ। ছেলেটা নিঃসন্দেহে একটা ভালো কাজ করেছে। তাকে দেখে গ্রামের লোকজন সচেতন হবে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম বলেন, ‘এরশাদ আলী কাজটা নিঃসন্দেহে একটি ভাল কাজ। আইন দিয়ে শতভাগ যৌতুক নির্মূল করা সম্ভব নয়। এরশাদের মতো সবাইকে যৌতুক নেওয়ার প্রবনতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ