শাহনূর শাহীন
সাব এডিটর
ইসলামের পঞ্চম খলিফা বলা হয় ওমর ইবনে আব্দুল আযিয রহ. কে। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর দৌহিত্র ইবনে আযিয রহ. ছিলেন মাতামহের মতোই ন্যায়পরায়ণ শাসক।
তিনিও খোঁজ নিতেন প্রজাদের। প্রজারা সুখে আছে নাকি দুঃখে আছে। প্রজারা কী তার শাসন কাজে সন্তুষ্ট নাকি অসন্তুষ্ট। নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারছেন কিনা।
প্রজারা এ ব্যাপারে কী মূল্যায়ন করছেন এ বিষয়ে জানার জন্য ওমর ইবনে আব্দুল আযিয রহ. রাতের আঁধারে বের হতেন নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে।
খোঁজ নিতেন কী ভাবছেন তার রাজ্যের অধিবাসীরা। ছদ্মবেশে সরাসরি নাগরিকদের সাথে আলাপ করতেন, জানতে চাইতেন শাসক হিসেবে ওমর ইবনে আব্দুল আযিয কতটা দায়িত্ববান। তার পরিচালিত শাসন কাজে নাগরিকদের কোনো অভিযোগ আছে কিনা।
রাগের মাথায় শাস্তি দিতেন না ওমর ইবনে আব্দুল আযিয রহ.
তিনি একবার বিদেশি আগন্তুকদের খোঁজ খবর নেয়ার জন্য ছদ্মবেশে রাস্তায় বের হন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর গোলাম মুযাহিম। গোলাম মুযাহিমকে সঙ্গে নিয়ে তিনি রাস্তায় হাটছিলেন এমন সময় পথিমধ্যে মদিনা থেকে আগন্তক এক মুসাফিরের সাথে দেখা হয়।
মুসাফিরের কাছে তিনি জানতে চান মদিনার অধিবাসীদের কথা। সেখানকার জনগণের অবস।অবস্থা, হাল-হাকিকত জানতে চাইলে আগন্তক বলেন, আপনি চাইলে মদিনার জনগণের সার্বিক অবস্থা জানাতে পারি কিংবা অাংশিক অবস্থাও জানাতে পারি।
খলিফা ইবনে আযিয আগন্তকের কাছে সার্বিক অবস্থা জানতে চাইলেন।
লোকটি বলল, আমি মদিনায় দেখে এসেছি সেখানে কেউ যদি জুলুম করতে চায় তাহলে তাকে কঠোরভাবে দমন করা হয়। পক্ষান্তরে মজলুমদের সাহায্য করা হয়। আগন্তক লোকটি এও বললেন যে, স্বচ্ছলরা প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক আর দরিদ্ররা স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে।
আগন্তুকের মুখে মদিনার অধিবাসীদের জীভন-যাপনের সার্বিক পরিস্থিতির কথা শুনে ইবনে আযিয রহ. বললেন, আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি আমার নিকট পৃথিবীর সব নগরীর এমন অবস্থা হওয়া পৃথিবীর সমস্ত অনু-পরিমাণ সম্পদের চেয়েও উত্তম।
অতঃপর তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে গোলাম মযাহিমকে নিয়ে সেদিনের মতো বাসায় ফিরেন।
খেলাফতের যুগকে ইসলামের ইতিহাসের স্বর্ণযুগ বলা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে ইসলামী ফেলাফতের যুগ ন্যায়ভিত্তিত শাসনের উজ্বল দৃষ্টান্ত। বর্তমান পৃথিবীর ভঙ্গুর শাসন ব্যাবস্থায় ইসলামী সালতানাতের ইতিহাস হতে পারে মুক্তির অন্যতম উপায়।
মুহাম্মাদ সা. কর আদায়কারী নন; দাঈ হিসেবে পৃথিবীতে এসেছিলেন
তাবত পুথিবীর শাসকবর্গ ইসলামী শাসন ইতিহাসে খুঁজে পেতে পারেন উত্তম শাসনের যাবতীয় বৈশিষ্ট। মুসলিম শাসনামলের বিভিন্ন সময়ের শাসকবর্গ ন্যায়পরায়ণতা, উদারতা, প্রজাদের প্রতি দায়িত্ববোধের যে সুমহান আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন পৃথিবী শাসনের ইতিহাসে তা বিরল।
ইসলামী খেলাফতের প্রাথমিক যুগ থেকে শুরু করে উমাইয়া, আব্বাসীয়, তুর্কি, নিকট অতিতে ভারত বর্ষে মুসলিম শাসনের ইতিহাসও বর্তমান বিশ্বের শাসকদের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
সোনালি যুগের সোনালি ইতিহাস হোক পৃথিবীর বর্তমান সময়ের শাসকবর্গের আলোকবার্তিকা। মুক্তি পাক পৃথিবীর ভঙ্গুর শাসনব্যাবস্থা। মুক্তি পাক মজলুম মানবতা।
ফিরে আসুক সোনালি দিনের শান্তির অমিয় বাতাস। পরিশুদ্ধতায় ভরে উঠুক আমাদের সমাজ, আমাদের রাষ্ট্র, আমাদের আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল।
ওমর ইবনে আব্দুল আযিয রহ.এর তিনটি মূল্যবান উপদেশ
তথ্যসুত্র: গল্পে গল্পে ওমর ইবনে আব্দুল আযিয রহ. পৃষ্ঠা-৪৭।
এসএস/