কাউসার মাহমুদ: ইসলাম এক ঐশী ধর্ম। ওহী থেকে আহরিত এ ধর্ম আবদ্ধ নেই গন্ডির বৃত্তে। অপরাধের নিকষ আঁধারে যখন পৃথিবীর সবকটা গলি, রাজপথ, উপত্যকা মুমূর্ষু প্রায়।
অজ্ঞতা মূর্খতা আর অত্যাচারের সেকি নৃশংস চিত্র পৃথিবী পাড়ায়। শত শত বছর ধরে লাগাতার চলে আসা অবাধ্য, উন্মাসিক লাগামছাড়া জীবনাচারে যখন নিজেরাই অতিষ্ট।
আর কত! শেষবধি, এক চিলতে শান্তি, সামান্য স্বাধীনতা এবং নির্ভার জীবনের আবেদনে পাথুরে জমিন গুলোরও ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা মানুষের সাথে । ঠিক তখনই স্নিগ্ধ সুন্দর ভোরের মত নতুন করে পৃথিবীতে আগমন ঘটে আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলামের। যার ঘোষণা আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন।
নবী মুহাম্মদ সা. কে তামাম দুনিয়ায় এ ধর্মকে পৌঁছে দেয়ার মহান দায়িত্ব দেয়া হয়। যেন মানুষ ফিরে আসে এক আল্লাহর কাছে। তারা বুঝতে পারে সত্য জীবনকে। তাদের ভেতর যেন জাগরূক হয় মহা সত্যের বোধ। রাসুল সা.ও আল্লাহর রহমতে এ দীনকে পৌঁছে দিয়েছেন ঠিকঠিক। পুরোটা জীবন উৎসর্গ করে গেছেন মানুষের হেদায়েতের জন্য।
আরব আজম সহ তাবৎ পৃথিবীতে এ দীনকে পরিপূর্ণ পৌঁছে দিয়ে তিনি শাহাদাত আঙুলি উচিয়ে বিদায় হজ্বে বলেছিলেন, হে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন আমি আপনার দীনকে পরিপূর্ণ পৌঁছে দিয়েছি।
সাথে তিনি তার উম্মতের কাছেই এর দায়িত্বভার নিযুক্ত করে গেছেন। কল্যাণময় ধর্মের প্রথম কল্যাণযুগ থেকে অদ্যাবধি উম্মতে মুহাম্মদি এ কাজ আঞ্জাম দিয়ে এসেছেন। কিন্তু পবিত্র এ কাজে অলসতার দরুন সর্বশেষ উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এসে মুসলমানদের সামগ্রিক অধপতন শুরু হয়।
ধর্মহীনতার অশুভ অন্ধকারে ডুবে যায় এ এলাকার সকাল সন্ধা। সে সঙ্কটকালে যে ক’জন মনিষী আলোর মশাল নিয়ে এগিয়ে এসেছেন তাদের অন্যতম একজন স্বার্থক ব্যক্তিত্ব হলেন হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.।
তাকে সে যমানার মুজাদ্দিদ বলা হতো। ইসলামের দাওয়াতের মাধ্যমে তিনি আধারে আলো জ্বালিয়েছিলেন। তার সেই দাওয়াতি আন্দোলনকেই আমরা দাওয়াত ও তাবলীগ নামেই চিনি। কিংবদন্তি এ আলেম ইসলাম ধর্মের মৌল বিষয় দুটি তার দাওয়াতি কাজে সামনে রাখেন।
পূর্ববর্তীদের অনুকরণে প্রান্তিকাতাহীন স্ট্র্যাকচার উম্মতের সামনে পেশ করেন। একদিকে দাওয়াতি কাজে কিতাবুল্লাহ রিজালুল্লাহর গুরুত্ব। অন্যদিকে রাসুল প্রেরণের প্রধান তিন উদ্দেশ্য তালিম,তাবলীগ, আত্মশুদ্ধির সমগুরুত্ব প্রতিভাত।
তিনি মনে করতেন, তাবলীগের ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে তালিমের উপর। সেই মহান দাঈ এবং ওলীর হিরন্ময় জীবনী ‘মাওলানা ইলিয়াস রহ. আওর উনকী দীনী দাওয়াত’ নামে লিখেছেন ইতিহাসের আরেক স্বনামধন্য পুরুষ সাইয়্যেদ আবুল আবুল হাসান আলী নদবি রহ.।
মূল্যবান এ জীবনি গ্রন্থটি বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য অনুবাদ করে পাঠের সুযোগ করে দিয়েছেন মাওলানা আবুল ফাতাহ কাসেমী। অনুবাদে ‘মাওলানা ইলিয়াস রহ. এবং দাওয়াত ও তাবলীগ’ শিরোনামে বইটির নাম করণ করা হয়েছে।
সহজ, সুখপাঠ্য ও প্রাঞ্জল ভাষায় অনুবাদকৃত এ মূল্যবান গ্রন্থটি পাঠ করে ভারসাম্যহীনতার বহমান এ নষ্ট সময়ে প্রত্যেক দাঈ, আলেমকে তাদের দাওয়াতের পথ-পদ্ধতির উপর নযর বুলানো উচিৎ।
বিশেষ করে সাধারণ মুবাল্লিগ সাথিদের এ কিতাব পড়ে মুযাকারা করা উচিৎ। এতে হযরতযী ইলিয়াস রহ. এর চিন্তা-চেতনা ও দাওয়াতি কর্মপদ্ধতির পূর্ণ বিবরণ রয়েছে।
বইটি প্রকাশ করেচে দেশের অভিজাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘মুন্তাখাব প্রকাশনী’। বইটির পাঠকমহলে সাড়াও ফেলেছে বইটি।
এসএস/