আওয়ার ইসলাম: টাঙ্গাইলের গোপালপুরে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে নিখোঁজ হওয়া মাহদী হাসান বাবু (১৫) নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানিয়েছেন তার মা।
পরিবারের ধারণা তাকে কৌশলে কোন নিষিদ্ধ দলে ভিড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আজ শনিবার গোপালপুর প্রেসক্লাবে এ আকুতি জানান এক দম্পতি।
উপজেলার ধোপাকান্দি গ্রামের মাহদীর মা ময়না বেগম জানান, গ্রামে ফেরি করে চুড়ি আর মালা বিক্রির টাকায় সংসার চলে না। অতি কষ্টে একমাত্র ছেলে মাহদী হাসান বাবু এবং মেয়ে বন্যা আখতারের পড়াশুনা করান।
মাহদী বরুরীয়া মাদ্রাসা থেকে কোরআনে হাফেজ হওয়ার পর সেখানে হোস্টেলে থেকে কিতাব বিষয়ে পড়াশোনা করছিল। বেশ কিছুদিন ধরে তার মধ্যে ভাবান্তর দেখা যায়।
মা ও বোনকে কঠোরভাবে পর্দা মেনে চলার নসিহত শুরু করে। গত ১৭ ডিসেম্বর হোস্টেল থেকে বাড়ি ফিরে নতুন পায়জামা-পাঞ্জাবী ও পাগড়ী পরিধান করে মায়ের মোবাইল সাথে নিয়ে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়। ফোন রিসিভ না করায় আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। দুদিন পর সন্ধান চেয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়।
ময়না বেগম অভিযোগ করে জানান, খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন পার্শ্ববর্তী শাহপুর গোরস্থান পাড়া নুরানি মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতি আব্দুল খালেকের সাথে ওই মাদ্রাসা হোস্টেলে দুদিন গোপনে অবস্থান করার পর নিরুদ্দেশ হয় মাহদী। বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে মাহদীকে উদ্ধার করার নামে ময়না বেগমের নিকট থেকে বেশ কিছু টাকাপয়সা হাতিয়ে নেন মুফতি খালেক।
নিরুদ্দেশ হওয়ার ২৩ দিন পর ময়না বেগম গত ৮ জানুয়ারি গোপালপুর থানায় জিডি করেন। স্থানীয় ইউপি মেম্বার আলম হোসেন বাধা দেয়ায় তিনি জিডিতে মুফতি খালেকের ভূমিকার কথা উল্লেখ করতে পারেন নি বলে ময়না বেগম জানান। থানায় জিডির খবর পেয়ে মুফতি খালেক গত ১০ জানুয়ারি গুটু শেখ নামক এক কবিরাজকে নিয়ে ময়নার বাড়িতে হাজির হন। আয়না পড়ার মাধ্যমে নিরুদ্দেশ মাহদীর খোঁজ দেয়ার কথা জানান।
ময়না বেগমের ভাষায়, 'মুফতির উপস্থিতিতে কবিরাজ গুটু দুহাতে কথিত অলৌকিক আয়না (গ্লাস) মেলে ধরে বলতে থাকেন, 'মারহাবা, মাহদীর সন্ধান পাওয়া গেছে। পাকা দাড়িওয়ালা কামেল ব্যক্তিরা তাকে বেহেস্তি খাবার খাওয়াচ্ছেন। শত শত পবিত্র হুজুর দ্বারা সে এখন পরিবেষ্টিত। মাহদী শীঘ্রই ধর্মীয় অবতার ইমাম মাহদী হয়ে বাড়ি ফিরে আসবেন।'
এভাবে কবিরাজ ও মুফতি চক্র মাহদীর ফিরে আসার ভুয়া আশ্বাস দেন। কিন্তু পঁয়ত্রিশ দিন পার হলেও বুকের ধন ফিরে না আসায় তিনি ভেঙে পড়েন। তার সাথে বা তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কারো কোনো বিরোধ নেই। যে কারণে ছেলে মাহদী গুম, খুন বা নিখোঁজ হতে পারে।
ময়না বেগম আরও অভিযোগ করেন, পুলিশ গতানুগতিকভাবে তদন্ত করায় রহস্য উদঘাটিত হচ্ছে না। মুফতি খালেককে জিজ্ঞাসাবাদ বা আটক করার দাবি জানান। তিনি মিডিয়া কর্মীদের সামনে বুকফাটা আর্তনাদ করতে করতে জানান, 'লোকে কানাকানি করছে আমার সোনার বাবা নাকি জঙ্গিতে নাম লিখাইছে।
গুম হোক, নিখোঁজ হোক আমার বুকের মানিককে চাই। আমার বাবাকে এনে দেন।' এ সময় তার সাথে স্বামী ফজলুল হকও উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে গোপালপুর থানার ওসি হাসান আল মামুন জানান, নিরুদ্দেশ হওয়ার বিষয়টি এখন নতুন আঙ্গিকে তদন্ত করা হবে। প্রকৃত ঘটনা কী তা তদন্ত শেষ না করে বলা যাচ্ছে না।
সূত্র্র: ইত্তেফাক
এইচজে