সুনামগঞ্জের তাহিরপুর হাসপাতালে অবিশ্বাস্য মূল্যে রোগীদের খাবার সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছেন এক ঠিকাদার। তিনি পণ্যের যে দাম নিয়েছেন বর্তমান প্রজন্মের কোনো মানুষের এই এত কম দামে পণ্য কেনার সৌভাগ্য হয়নি।
ওই ঠিকাদার পাঁচ টাকা লিটারে দুধ সরবরাহের চুক্তি করেছেন। যদিও সরকারি মিল্কভিটা প্রতি লিটার দুধ বেচে ৬৪ টাকায়। আবার গুড়া দুধের দাম কেজিপ্রতি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা হলেও ওই ঠিকাদার তা দেবেন পাঁচ টাকা দরে।
একইভাবে পাঁচ টাকা কেজি দরে কিসমিস সরবরাহের চুক্তি হয়েছে। একই দামে ঠিকাদার দেবেন প্রতি প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই।
ঠিকাদার কই, মাগুড়, শিং এবং টেংরা মাছ সরবরাহ করবেন ১৪০ টাকা কেজি দরে। অথচ বাজারে এই মাছগুলোর দাম কেজিপ্রতি ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা।
একইভাবে বাজারে দেড় হাজার টাকা কেজি দরের এলাচ ঠিকাদার দেবেন ৮৫ টাকায়। বাজরে দেশি মুরগির (পা, মাথা, গিলা, কলিজা ও নাড়িভুড়ি ছাড়া) দাম ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা হলেও ঠিকাদার তা দেবেন ২৬০ টাকায়। এই দামে বাজারে ব্রয়লার ছাড়া অন্য কোনো মুরগি পাওয়া যায় না।
একইভাবে হলুদ, শুকনো মরিচ, ধনিয়াসহ বিভিন্ন মসলার দামও দেওয়া হয়েছে বাজার দরের চেয়ে অর্ধেক।
হাসপাতালের কর্মীরা জানিয়েছেন, খাবারের এ রকম দাম দেখিয়ে কার্যাদেশ নিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এতে তাদের কী স্বার্থ তা বুঝে উঠতে পারছে না কেউ।
হাসপাতালে খাদ্য সরবরাহের দরপত্রে এবার অংশ নিয়েছিল নয়টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সর্বনি¤œ দর দেয় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার দাদা এন্টারপ্রাইজের মালিক নবী হোসেন।
ওই প্রতিষ্ঠানের দরপত্রে উল্লেখ করা খাবার তালিকার ২৮টি পণ্যের দামের মধ্যে একটিরও বর্তমান বাজার দরের সাথে মিল নেই।
এত কম দামে কীভাবে এবং কেন খাদ্য সরবরাহ করা হবে, কী তার স্বার্থ-এসব বিষয়ে জানতে নবী হোসেেেনর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি মামলায় তিনি কারাগারে আছেন।
দরপত্রের বিধান অনুযায়ী সর্বনিধুনিক দরদাতা কার্যাদেশ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেলেও তার উল্লেখিত দর যদি অস্বাভাবিক হয়, তাহলে সেটা বাতিল করা যায়। কিন্তু দাদা এন্টারপ্রাইজের এই দর অস্বাভাবিক হলেও তা বাতিল করেনি দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি।
দরপত্রে অংশ নেয়া সানি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান খেলু মিয়া এ বিষয়ে গত ১৫ জানুয়ারি তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন।
খেলু মিয়া বলেন, ‘যে দর দিয়ে কার্যাদেশ নিয়েছেন, তার সঙ্গে বর্তমান বাজারদরের মিল নেই। অতীতে কোনো এক সময় এই দরে পণ্য পাওয়া যেত। তাহলে ওই ঠিকাদার কীভাবে এমন অবাস্তব মূল্য দিয়ে রোগীদের খাওয়াবে? আর এত কম মূল্য থাকার পরও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষই বা কেন তাকে নির্বাচন করলেন?’।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্ণেন্দু দেব বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তাহিরপুর হাসপাতালের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইকবাল হোসেনও বলছেন, প্রতিটি পণ্যের দামই বাজারপরের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তাহলে কেন কার্যাদেশ দেয়া হলো- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দরপত্র রেডি করে নিয়ম অনুযায়ী আমরা সুনামগঞ্জ পাঠাই। পরে এগুলো সিভিল সার্জন অনুমোদন করেন।’
জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন আশুতোশ দাস বলেনম ‘টেন্ডারে সর্বনিধুসিক দরদাতা হিসাবে তাদেরকে (দাদা এন্টারপ্রাইজ) কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। এই দরে খাবার সরবরাহ করতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর না হয় তারা সারেন্ডার করবে।’ উৎস : ঢাকা টাইমস।