পিস টিভির কর্নধার এবং বিতর্কিত ইসলামিক ভাষ্যকার জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ইডি যেসব অভিযোগ এনে তাঁকে দেশ ছাড়া করেছে, সেইসব অভিযোগকে প্রায় চ্যালেঞ্জ জানালেন প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্টের অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতি মনমোহন সিং।
বিচারপতি মনমোহন সিং প্রশ্ন তোলেন, ইডি কি জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে না? সরাসরি তিনি ইডির আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, আসারাম বাপুর বেলায় ‘আপনারা কি করেছেন ?’
বিচারপতি বলেন, ‘আমি অন্তত ১০ জন তথাকথিত বাবার নাম করতে পারি, যাদের প্রত্যেকের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার মতো সম্পত্তি রয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকের নামেই ফৌজদারি দণ্ডবিধির মামলা চলছে। তাঁদের বিরুদ্ধেও কি আপনারা এভাবে ব্যবস্থা নিয়েছেন?’
এই বলে মঙ্গলবার শুনানিতে বিচারপতি ইডিকে জানিয়ে দেন, ডা: জাকির নায়েকের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যাবে না। একই অভিযোগে ভিন্ন বিচার করা যাবে না। বিচারপতি বলেন, ডঃ জাকির নায়েক তাঁর ভাষণে তরুণদের সন্ত্রাসবাদী কাজে উৎসাহ জুগিয়েছেন, এমন কোনো তথ্য প্রমাণ ইডি পেশ করতে পারে নি।
ইডি-র আইনজীবী বিচারপতিকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে, জাকির নায়েকের ভাষণে প্রচুর ছেলে জঙ্গি হয়ে গিয়েছে। তখনই বিচারপতি বিরক্তি প্রকাশ করে এই মন্তব্য করেন। এর আগে ইন্টারপোল ডঃ জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে এনআইএ-র রেডকর্নার নোটিশ খারিজ করে দিয়েছিল। তখনও যেমন এনআইএর কপালে ভাঁজ পড়েছিল মঙ্গলবারও সেভাবেই ইডির অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে ইডি-র মুখ পোড়ে। বিচারপতি আসারামের সঙ্গে ডঃ জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের তুলনা করতে চেয়ে ইডি-র আইনজীবীকে বলেন, গত ১০ বছরে আপনারা আসারামের সম্পত্তি করতে কিছুই করেননি, অথচ সেই আপনারাই দ্রুত ডঃ জাকির নায়েকের সম্পত্তির দখল নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
তাছাড়া এই মামলায় এখনো পুরো চার্জশিটই দেওয়া হয়নি। তার আগেই আপনারা জাকির নায়েকের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে চায়ছেন কেন? বিচারপতি ইডির আইনজীবীকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনারা এমন কারো মন্তব্য রেকর্ড করেছেন কী যে জাকির নায়েকের ভাষণ শুনে উত্তেজিত হয়েছে? ২০১৫ সালে ঢাকায় জঙ্গি হানার ক্ষেত্রে জাকির নায়েকের রেকর্ড করা ভাষণ কী ভূমিকা নেয় তারও কোনো বিশদ তথ্য পেশ করেননি আপনারা? মনে হচ্ছে নিজেদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য আপনারা তাঁর ৯৯ শতাংশ ভাষণকে বাদ দিয়ে ১ শতাংশ ভাষণের উপর নির্ভর করে রয়েছেন। আপনারা কি তাঁর ভাষণ শুনেছেন? আমি কিন্তু অনেক ভাষণ শুনেছি। আমি আপনাদের বলতে পারি, এখনো অবধি কোনো আপত্তিকর কিছু পাইনি। তাই জাকির নায়েকের মুম্বাইয়ের বাণিজ্যিক সম্পত্তি এবং চেন্নাইয়ের স্কুল দখল করতে পারবে না ইডি।
বিচারপতি পরিস্কার জানিয়ে দেন, স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে হবে। ইডি ইতিমধ্যেই জাকির নায়েকের তিনটি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। তার মধ্যে এই দুটি সম্পত্তিও রয়েছে। আপাতত ইডি ওই বাজেয়াপ্ত কার্যকর করতে পারবে না। এদিন নায়েকের আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে জানান, ডঃ জাকির নায়েকের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আগে তাঁকে জানানো পর্যন্ত হয়নি।(দৈনিক কলম)