সম্পাদক, ডেইলি মাই নিউজ (আরবি) ও মাসিক আলহেরা
মিডিয়ার বিস্ময়কর উন্নতি বর্তমান বিশ্বকে একটি গ্লোবাল ভিলেজে রূপান্তরিত করে দিয়েছে। মিডিয়া বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে এ কথা কারোরই অজানা নয়। বিশ্বময় শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় যেমন মিডিয়ার ভূমিকা রয়েছে, তেমনি অশান্তি ও নৈরাজ্য সৃষ্টির ক্ষেত্রেও মিডিয়া কম দায়ী নয়। তবে পরিতাপের বিষয় মিডিয়াকে সা¤্রাজ্যবাদী পশ্চিমারা ও অসভ্য ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-চেতনার অধিকারী ইসলামবিদ্বেষীরা যেভাবে কাজে লাগাচ্ছে ও তার অপব্যবহার করছে তা রীতিমত উদ্বেগজনক। অপরদিকে ইসলামীপন্থীরা ভাবছে মিডিয়া থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই কল্যাণ। তাই তারা মিডিয়া ও তথ্যপ্রযুক্তিকে শত্রুদের রহম ও করমের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। ইসলামবিদ্বেষীরা লিখছে, তারা পড়ছে। এই সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি তথ্যপ্রযুক্তি ও সংবাদমাধ্যমগুলোকে মিথ্যাচারের ভারে আক্রান্ত করে তথ্য সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা এ সুযোগ পরোপুরি কাজে লাগাচ্ছে। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা নিজস্ব ধর্ম ও মতামতকে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে দিচ্ছে। নিজেদের ভাব-ভাবনা অনুভব-অনুভূতি, মত-পথ পেশ করছে অন্যদের কাছে। মুসলমানদেরকে তারা সুকৌশলে এসব অঙ্গন থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে। শত্রুদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে মুসলমানরা আজ ভয়ানক এক সঙ্কটের জালে জড়িয়ে পড়েছে। কোথাও তাদের আশ্রয় নেয়ার জায়গা নেই। সব ক’টি মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর একের পর এক বিপদের ঘনঘটা বিস্তার লাভ করছে। সমগ্র বিশ্বে মুসলমানেরাই সবচেয়ে বেশি অপদস্ততা ও অসহায়ত্বের শিকার। অপরদিকে কাফের মুশরিক ও নাস্তিকরা সারা বিশ্বে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মুসলমানদের ওপর তারা বিভিন্নভাবে ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে।
মোটকথা বর্তমান বিশ্বে মুসলমানরা খুবই নাজুক একটি সময় পার করছে। মুসলমানদের সরলতাকে পুঁিজ করে কাফের মুশরিক ও নাস্তিকরা একে একে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো দখল করছে। তাদের নগ্ন আগ্রাসনের শিকার হয়ে আফগানিস্তান হারিয়েছে আপন স্বকীয়তা, আর ইরাক হারিয়েছে তেল সম্পদের মূল্যবান ভা-ার। এসব দেশের শিক্ষাÑসংস্কৃতি জিম্মি হয়ে আছে ইহুদিÑখ্রিস্টানদের হাতে। ইহুদিÑখ্রিস্টানদের ইসলাম বিদ্বেষ এত ভয়ানক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তারা এখন মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সা. এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে, চলচ্চিত্র নির্মাণ করে রাসুল সা. এর পবিত্র চরিত্রকে কালিমালিপ্ত করার মত ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। প্রতিনিয়ত মুসলিম জনপদ কোনো না কোনো মজলুম মুসলমানের রক্তে রক্তাক্ত হচ্ছে। সুতরাং দাওয়াতের কাজে তথ্যপ্রযুক্তি ও মিডিয়ার ব্যবহার মুসলিম উম্মাহর জন্য একান্ত জরুরি। বর্তমান প্রযুক্তির যত ধরন সম্ভব সবকিছুকেই ইসলামের দাওয়াতে ব্যবহার করা সময়ের দাবি, যুগের দাবি। রাসুল সা. এর যুগে তো বর্তমানের প্রচলিত প্রচারমাধ্যম ছিল না। সে যুগে যদি এসব তথ্যপ্রযুক্তি থাকত তাহলে অবশ্যই রাসুল সা. তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্বীন প্রচার করতেন। তার যুগে যে মিডিয়া ছিল তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন তিনি নিজেই। সে যুগে সবচেয়ে বড় মিডিয়া ছিল পাহাড়ে ওঠে মানুষের নাম ধরে ধরে ডাকা ও তাদেরকে সর্তক করে দেয়া। তিনি সাফা পাহাড়ের ওপরে উঠে বিভিন্ন গোত্রের নাম ধরে ধরে ডেকে তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
রাসুলুল্লাহ সা. কখনও মিডিয়াকে উপেক্ষা করেননি। সে যুগে যে পরিমাণ মিডিয়া ছিল তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন রাসুলুল্লাহ সা.। কিন্তু বর্তমানে ইসলামপন্থীদের মিডিয়ার প্রতি উপেক্ষা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, মিডিয়া কখনও ইসলামের ক্ষতি করতে পারে না। মিডিয়া তো যন্ত্র মাত্র। মিডিয়াকে যেভাবে চালানো হয় সেভাবেই চলে। মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামের কালজয়ী আদর্শের মহিমা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া যায়। আজ মিডিয়ার মাধ্যমে পশ্চিমাদের অশ্লীল বিনোদন আমাদের সমাজকে গ্রাস করে চলছে। তা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু বিনোদন, নৈতিক শিক্ষা ও চারিত্রিক মূল্যবোধে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। তাই জরুরি হয়ে পড়েছে আমাদের ধর্ম ও নৈতিকতার অনুকূলে টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ করা। ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, ইন্টারনেট প্রভৃতির সাহায্যে ইসলামের সৌরভ ও সৌন্দর্য পৌঁছে দেয়া বিশ্বের ঘরে ঘরে, জনে জনে। আমরা সবাই জ্ঞাত আছি প্রচার ছাড়া কোনো কিছুই প্রসারিত হয় না। আধুনিক যুগে দাওয়াতি কাজে গতি সঞ্চারের জন্য মিডিয়া অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এক সময় সমগ্র বিশ্বে ইসলামই বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও সভ্যতার প্রচলন ঘটিয়েছে। পৃষ্ঠপোষকতা করেছে এবং নেতৃত্ব দিয়েছে। তখন তাদের ঈমানি জোর, আত্মিক জোর ও জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার আগ্রহ ছিল প্রবল। কিন্তু বর্তমানে ইসলামপন্থীরা মিডিয়াকে ইসলামবিদ্বেষীদের রহম-করমের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। আজ যদি কিছু যোগ্য আলেম সেখানে থাকত তাহলে অবশ্যই ইসলামের পক্ষে, দাওয়াতের পক্ষে জোরালো ভূমিকা পালন করা যেত। ইসলামের কথা সাধারণ জনগণের কাছে সহজেই পৌঁছে দেয়া যেত।
প্রিন্ট মিডিয়ায় ইসলামের কিছু ভূমিকা থাকলেও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ইসলামের কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে। অথচ সংবাদ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রিন্ট মিডিয়ার চেয়ে বহুগুণে বেশি শক্তিশালী ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া। প্রিন্ট মিডিয়ায় যেখানে সংবাদ পাওয়ার জন্য একদিন অপেক্ষা করতে হয় সেখানে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া মুহূর্তে সংবাদ পৌঁছে দেয় সারাদেশে। যদি ইসলামপন্থীরা এই সুবর্ণ সুযোগটি কাজে লাগান তাহলে তারা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়ও ইসলামের পক্ষে ভূমিকা রাখতে পারেন।