আমিনুল ইসলাম হুসাইনী : ‘আমরা বন্ধু হই চলমান জীবনের চাওয়া ও চাহিদার দাবীতে; তাই দিনবদলের মত আমাদের বন্ধুবদল হয় খুব সহজে। কোন বন্ধুত্ব এখন বার্ধক্যের মুখ দেখে না, এমনকি দেখে না যৌবনেরও মুখ, তার আগেই বন্ধুত্বের মৃত্যু হয়, কখনো শুধু মুখের বিবাদে, কখনো ছুরি-খঞ্জরের সংঘাতে।’
উবায়দুল হক খান সম্পাদিত ‘প্রতিভার’ তৃতীয় সংখ্যাতে উঠে এসেছে কওমি লেখকদের বটবৃক্ষ, ‘এসো কলম মেরামত করি’ গ্রন্থের মতো আরো অসংখ্য অনন্য গ্রন্থের জনক, লাখো তারুণ্যের স্বপ্নদ্রষ্টা আদিব হুজুরখ্যাত লেখক মাওলানা ‘আবু তাহের মিছবাহ’- এর ‘বন্ধু ও বন্ধুত্ব’ শিরোনামের এ গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধটি।
‘এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়’ স্লোগানকে সামনে রেখে জানুয়ারি ২০১৬ সালে আত্মপ্রকাশ হয় প্রতিভার প্রথম সংখ্যা। বার্ষিক এ লিটলম্যাগটির দ্বিতীয় সংখ্যাও প্রকাশ হয় জানুয়ারি ২০১৭-এ। সে ধারাবাহিকতার ক্রমান্বয়েই জানুয়ারি ২০১৮-এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে প্রতিভার তৃতীয় সংখ্যা।
পরিচ্ছন্ন অঙ্গসজ্জা ও সমৃদ্ধি বিষয়-বৈচিত্র্য প্রতিভার স্বভাবজাত বিষয় হলেও, বর্তমান সংখ্যাটিকে নানা দিক দিয়ে ব্যতিক্রমধর্মীই মনে হবে। কারণ, মননে, সৃজনে, নন্দনে, শিল্প ও সাহিত্যের বাতিঘর প্রতিভার বর্তমান সংখাটিতে রয়েছে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ আলেমে দীন মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী, কওমি ঘরানার লেখকদের অহংকার আবু তাহের মিছবাহ, গদ্যশিল্পী ও প্রবীণ সাংবাদিক শরীফ মুহাম্মদ, প্যারাডক্সিকাল সাজিদের লেখক আরিফ আজাদসহ নন্দিত লেখকদের গুরুত্বপূর্ণ লেখা।
আর তরুণ গদ্যশিল্পী জুবায়ের রশীদ লিখেছেন, বই নিয়ে দারুণ গদ্য। ‘বই হোক জীবনের আরশি’ শিরোনামের এ মুক্ত গদ্যের শুরুতেই লেখক অংকন করেছেন, ‘রূপ সৌন্দর্য ও অাভিজাত্যের আলো ঠিকরে বের হচ্ছে প্রাসাদের প্রতিটি ইট প্রস্তরখণ্ড থেকে। প্রাসাদের ভেতরে আছে বালক একজন। তার আকাশ দেখতে সাধ জাগল হঠাৎ। শরতের স্বচ্ছ রাজহাঁসের সাদা পালকের মতো আকাশ। প্রথমে একটি ছিদ্র দিয়ে আকাশ দেখল।
আকাশের সামান্য একটুই দেখতে পেল। তারপর দক্ষিণের জানালার কপাট খুলে আকাশের রূপ মুগ্ধতা অবলোকন করল আরো কিছুটা। কিন্তু নাহ, পিপাসা কিছুতেই কাটছে না। আগ্রহ ঢের বাড়ছে। এবার ভেজানো দরজা পেরিয়ে সরাসরি ছাদে উঠল। প্রত্যক্ষ করল আকাশের আদিগন্ত সৌন্দর্য। হৃদয়ের কানায় কানায় ভরে উঠল তার আকাশ দেখার সাধ। ঠিক তেমনি বই। বই আমাদের জীবনে, প্রতিটি মানুষের বেলায় সেই অনন্ত আকাশ দেখার মতোই।’
প্রতিভার ‘কবি ও কবিতা’ পাতায় কবিতা লিখেছেন বর্তমান সময়ের আলোচিত কবি ও ছড়াকার জিসান মেহবুব। তার প্রেমের কবিতা ‘মনে করুক’। কবি এখানে তার বিরহের ঝাপি খুলে ধরেছেন-
তুমুল বেগে বৃষ্টি নামুক
মন হয়ে যাক বড্ড কামুক।
সয় না যে আর দগ্ধ দুপুর
রিনি ঝিনি বাজুক নূপুর।
কবি আমি ভাবনা মাতাল
অবারিত মনের চাতাল।
স্মৃতিতে আজ দেবো চুমুক
কে কী ভাবে অমুক তুমুক।
আকাশ ভেঙে বৃষ্টি ঝরুক
কেউ আমাকে মনে করুক।
এছাড়াও, ‘কবি ও কবিতা’ পাতায় লিখেছেন ‘জন্মভূমি’ সুলতান আফজাল আইয়ূবী, ‘সবুজের ‘সমারোহে’ফাতেমাতুয যাহরা স্মৃতি, ‘স্বপ্ন’ খালেদা আক্তার অনন্যা, ‘রাসুল এলেন বলে’ জনি হোসেন কাব্যসহ আঠারোজন কবি। গল্প লিখেছেন নবীন-প্রবীণ কথাসাহিত্যিকগণ।
প্রতিভার প্রতিভাধর সম্পাদক উবায়দুল হক খান প্রতিভার এ সংখ্যাটিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নবীন-প্রবীণ লেখকদের একত্রিত করেছেন। প্রতিভার পাতায় পাতায় তুলে ধরেছেন তাদের অসাধারণ সৃজনশীলতা। পত্রিকাটি পড়তে গিয়ে পাঠক হারিয়ে যাবে সেই ফেলে আসা রঙিন দিনগুলোর আনন্দময় রোদেলা দুপুর, অথবা পড়ন্ত বিকেলের ঝিরিঝিরি বাতাসের মোহনায়। এক এক জন লেখকের এক এক ধরনের লিখনীতে পাঠক হবেন বিমোহিত, আবেগে উদ্বেলিত। সাহিত্য সাময়কিটি পড়ে পাঠক দারুণ এক সুখানুভূতি অনুভব করবে তা বলা যায় নিঃসন্দেহেই।
সম্পাদকের কাছে প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি কারও স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতির তোয়াক্কা না করে প্রতিভার প্রতি তাঁর এ টান যেন বাঁচিয়ে রাখেন অনেক অনেক দিন। সুন্দরের স্রষ্ট্রার কাছে প্রার্থনা, প্রতিভা বেঁচে থাকু এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে।