[রবিউল আউয়াল মাস উপলক্ষে আওয়ার ইসলাম আয়োজন করেছিল নবীজিকে চিঠি লেখার প্রতিযোগিতা। এতে কয়েকশ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। পুরস্কার দেয়া হয় ৩০ জনকে। ১ম পুরস্কার বিজয়ী পান ১০ হাজার টাকার বই। ১ম পুরস্কার পেয়েছেন জামিয়া কারিমিয়া রামপুরার শিক্ষার্থী ইমদাদুল্লাহ সাজ্জাদ।
ব্যতিক্রমী এ আয়োজনের সহযোগিতায় ছিল শাহীন শিক্ষা পরিবার, রকমারি ডটকম, মাকতাবাতুল ইসলাম, মাদানী কুতুবখান ও মাদারাসাতুল হিকমাহ ঢাকা। আওয়ার ইসলাম পাঠকদের জন্য ১ম পুরস্কার বিজয়ীর চিঠি প্রকাশ করা হলো]
তোমাকে, হে হৃদয়োদ্যানের পুষ্পিত মালাকর!
الصلاة والسلام عليك يا رسول الله الصلاة والسلام عليك يا حبيب الله
الصلاة والسلام عليك يا شفيع المذنبين الصلاة والسلام عليك يا رحمة للعلمين
হে প্রিয় আহমদ!
হৃদয়ে ভালোবাসার সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন হে প্রিয় মুহাম্মদ!
জানো!
ওই পূব দিগন্তে প্রতিদিন সূর্য হাসে হৃদয়কে লালিম করে।
সন্ধ্যায় আবার মনের পশ্চিম কোণে আল বিদা বলে জগতের সকল সৌন্দর্যকে ধারণ করে। আঁধারের বোরখা যখন ঢেকে ফেলে পৃথিবীর শরীর, হারিয়ে যাওয়া শাদা বেলুনের মতো খেজুরগাছের মাথায় ভাসে তখন জোছনাধোয়া চাঁদনি। আলো-আঁধারির ফাঁকে ফুলবাগিচার পুষ্প-ঘ্রাণে যখন থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে, লালিম মনে চাঁদনি রাতে কার মন তখন ঘরে থাকে বলো?
ফুলের ঘ্রাণে জোনাকির ঝাড়বাতির পিছে কার না তখন মন ছুটে যায় বলো?
কিন্তু জানো, হে প্রিয় মুদ্দাসসির!
এই স্বর্গীয় সৌন্দর্যের মাঝেও আমার তখন ভালো লাগে না। কিচ্ছু ভালো লাগে না। কারণ, হে প্রিয় মুযযাম্মিল! তুমি যে নেই পাশে। তাহলে কী হবে বলো এতসব সৌন্দর্য দিয়ে?
হে প্রিয় মুযাক্কির!
যদি তুমি থাকতে, কত কথা বলতাম তোমার সাথে, বদ্ধ হৃদয়ের কপাট খুলে!
সুখ-দুঃখের।
আনন্দ-বেদনার। প্রাপ্তি-বঞ্চনার।
কত কথাই না বলতাম!
হায়! কত না হতভাগা আমি!
না পেলাম তোমার সাক্ষাত।
না পেলাম তোমার মোলাকাত।
আহ! কতই না আনন্দের হতো! যদি হতাম আরবের কোনো শিশু, আমার পাপড়ি-ঠোঁটে বুলিয়ে দিতে তুমি, তোমার সোনালি হাতের মায়াবি পরশ!
কিংবা হতে পারতাম যদি, মদিনার ওই স্বাগত মিছিলের কোনো সৌভাগ্যবান কিশোর, তলাআল বাদরু আলাইনা'র সুরে বিমোহিত করে তোমায়, মুগ্ধ নয়নে দেখতাম শত পূর্ণিমার উদয়।
হে প্রিয় সিরাজাম মুনিরা!
আর কতদিন! আর কতদিন দূরে থাকবে বলো! একটু এসো, অন্তত একবার এ আশিকের হৃদয়-জগতকে আলোকিত করো।
হে প্রিয় আবুল কাসিম!
জানো, যখন রবিউল আউয়াল আসে, প্রতি ভোরে আমি হাসি- সুহাসিনী ভোরের চেয়েও মুগ্ধতা-ছড়ানো-হাসি।
কিন্তু তারপর, উঠতে উঠতে সূর্য যখন আরো ওপরে উঠে যায়, আমার ঠোঁট থেকে তখন সকল হাসির ঝিলিক মুছে যায়। আমার হাসি-হাসি মুখখানায় তখন একমরু দুঃখ-হতাশা ছেয়ে যায়।
এই জগতের সকল সৌন্দর্য তখন যেন ম্লান হয়ে যায়। দশ পৃথিবীর সুখপাখিরাও তখন আমার মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে পারে না। কিন্তু কেনো এই বেদনাময় বদলে যাওয়া? সে শুধু তোমার বিরহে, হে প্রিয় আল আমিন! সে শুধু তোমাকে হারানোর বেদনায়।
হে প্রিয়!
বলতে বড় সঙ্কোচ হয়, তবু বলি। জানো, আমাদের অবস্থা এখন বড় দুঃখময়।
খন্দকের পাথর-খণ্ডে তুমি যে রোম-পারস্যের বিজয়-ঝিলিক দেখেছিলে, আমরা তা হারিয়ে ফেলেছি, হে প্রিয় আল ফাতিহ!
যেখান থেকে তুমি গমন করেছিলে মহান প্রভুর প্রেম-সান্নিধ্যে, সেই আল কুদস; সেই জেরুসালেম এখন...।
এগুলো ছাড়াও আমাদের স্পেন-তুর্কিস্তান...
আমাদের ইরাক-হিন্দুস্তান...
আমাদের জাহান এবং মুসলিমজাহান...।
আহ! আর বলতে পারছি না প্রিয়!
নিজ মুখে নিজ পরাজয় আর কত বলা যায়!
আপন চোখে আপন অধঃপতন আর কত দেখা যায়!
আহ! আমাদের তুমি ক্ষমা করে দিয়ো প্রিয় মুতাহহার!
রাগ করো না। অভিমান রেখো না।
তাহলে যে আমরা...!
হে প্রিয় শাফীউল মুযনিবীন!
কত হতভাগাকে তো সেদিন তুমি নিয়ে যাবে মহাদুঃখের কিনার থেকে চিরসুখের মিনারে।
হে প্রিয় হিজাযী!
এই অধম কি সেদিন পাবে ঠাঁয়, একটুখানি, সেই মিছিলে।
হে প্রিয় শাফী!
ভুলে যাবে কি সেদিন এই অভাগারে!
ছেড়ে যাবে কি সেদিন ওই উষ্ণাগারে!
হে প্রিয় সাকিয়ে কাউসার!
কত মরুতৃষিতকে তো সেদিন তুমি চিরতৃপ্ত করবে অগ্নিতৃষ্ণা থেকে। এই অধম কি পারবে সেদিন ভাগীদার হতে, এক পেয়ালা ভালোবাসার!
হে প্রিয় সাকী!
মুখ তুলে তাকাবে তো সেদিন?
আলকাউসারের ভালোবাসায় সিক্ত করবে তো সেদিন?
হে প্রিয় আহমদ!
আমি সেই করনি কিংবা রেফায়ি নই।
হতে পারি নি জামি কিংবা সাদির মতোও।
তাই বলে কি পাবো না তোমার দিদার!
অনন্ত কাল কি দূরে থাকবে তোমার আমার ভালোবাসার সাক্ষাত!
হে প্রিয় মুহাম্মদ!
ওই যে, আমার সামনে হুইল চেয়ারে তোমার এক আশিক। মাথা-মুখে গুচ্ছ গুচ্ছ কাশফুল। শুকনো ঠোঁটে ঝলমল করছে নিষ্পাপ শিশুর নির্মল হাসি। শুনেছি, এই সৌভাগ্যবানও দিদার পেয়েছে তোমার, ত্রিশোর্ধবার।
আমি এখনো আশায় রয়েছি হে প্রিয় মুহাম্মদ!
তাকিয়ে থাকি রক্তিম অস্তাচলে, সূর্য ডুবে আবার যখন জোছনাধোয়া চাঁদনি হাসে, তোমায় পাবার আশায় আবার নতুন করে বুক বাঁধি। তবুও হে প্রিয় হাবিব! একবার কাছে এলে না!
অঙ্কুর ঝরে আবার যখন নতুন করে মুকুল ধরে; সুবাস হারিয়ে পুষ্প যখন নতুন করে সুবাস ছড়ায়, তোমায় কাছে পাবার অনন্ত আশা তখন আবার ময়ূরের মতো পেখম মেলে। তবুও হে প্রিয় মাহবুব!
একবার দেখা দিলে না! একবার ধন্য করলে না!
তাদের ভালোবাসা ছিলো আকাশছোঁয়া;
আমার ভালোবাসা হয়তো জমিনঘেঁষা। তবুও হে প্রিয় আহমদ!
হৃদয়ের যেখানে থাকে গুচ্ছ গুচ্ছ ভালোবাসা, তার সর্বোচ্চ আসনে রয়েছো তুমি, হে আমার হৃদয়রাজ্যের রাজকুমার!
হে প্রিয় মুসতফা!
কিছু কথা হলো, আর কত কথা রয়ে গেলো! এই অল্প আয়োজনে, এই স্বল্প পরিসরে সব কি আর বলে শেষ করা যায়!
হে প্রিয়!
হতে পারি নি তাদের মতো। তাই বলে কি বঞ্চিত থাকবো তোমার দিদার থেকে! এসো না হে প্রিয়তম! একবার! অন্তত একবার, স্বপ্নের বাতায়ন পথে দেখা দাও হে প্রিয় মুসতফা!
ধন্য করো তোমার ভালোবাসার পরশে, হে প্রিয় মুজতবা!
হে আমার প্রিয়তম! তুমি আসবে। আসবেই তুমি____ সে আশায় বুক বেঁধে রইলাম, হে প্রিয়! প্রিয়তম!
নাম: ইমদাদুল্লাহ সাজ্জাদ পিতা: হাফেজ মুহাম্মদ সাজ্জাদ হুসাইন
কেশবপুর, যশোর।
মাদরাসা: জামিয়া কারীমিয়া আরাবিয়া রামপুরা, ঢাকা-১২১৯
জামাত: কাফিয়া, বয়স: ১৯ বছর
নবীজিকে চিঠি লিখে পুরস্কার জিতল যারা