গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মাওলানা আবদুল বাছিত বরকতপুরী রহ. এর স্মরণে জামেয়া ইসলামিয়া কওমিয়া দারুসসুন্নাহ গলমুকাপনের জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় দুআ মাহফিল।
হজরতের ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে একাধিক কুরআন খতম করা হয়। দুআ মাহফিলে মরহুমের সাথী জামেয়ার মুহতামিম শায়খ আবদুশ শহীদ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, আমার চাচা মুহিউসসুন্নাহ আল্লামা ফখরুদ্দিন রহ. এর নিসবতি ভাই হিসেবে তিনি ছিলেন আমার মামা। বয়সে ছিলেন আমার বছর দেড়েকের ছোট।
আমি মক্তব চতুর্থ বর্ষে পড়াকালে চাচাজি বিয়ে করেছিলেন। গলমুকাপন থেকে হেঁটে গহরপুর যাওয়া সেই বরযাত্রীদের মধ্যে আমিও ছিলাম একজন।
তাঁদের পরিবার ছিল সাধারণ শিক্ষিত। দ্বীনী শিক্ষার সাথে কোনোই সংশ্রব ছিল না। তবে হজরতের মা ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক মহিলা। ছিলেন শায়খে বাঘার মুরিদ। মহিয়সী সেই মহিলাই স্রোতের বিপরীতে এসে আপন বড় মেয়েকে তুলে দেন মুহিউস সুন্নাহর হাতে।
তাঁদের পারিবারিক চিরায়ত নিয়মের ব্যতিক্রমে সংঘটিত হয় এই বিয়ে। এসময় হজরতের বয়স ৯/১০ হবে।পড়তেন ক্লাস ফাইভে। বিয়ের অল্প ক'দিন পরই মা তাঁকে তুলে দেন জামাতা মুহিউস সুন্নাহর হাতে। এরপর মুহিউস সুন্নাহ রহ. দরদি পিতার অভিভাকত্ব দিয়ে গড়ে তুলেন আল্লামা বরকতপুরীকে।
ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া বরকতপুরীকে ভর্তি করে দেন মক্তব ছওমে। মক্তব ছওম থেকে আলিয়া ছওম পর্যন্ত তিনি লেখাপড়া করেন জামেয়া দারুস সুন্নাহয়।
এরপর চাচা হজরত ছখরিয়া রহ. বরাবরে পত্র দিয়ে তাঁকে পাঠিয়ে দেন রানাপিং মাদরাসায়। সে পত্র নিয়ে তাঁর সাথে আমিও রানাপিং গিয়েছিলাম। ওখানে এক বছর শিক্ষা সমাপন শেষে চলে যান হজরত হাফেজ্জি হুজুর রহ.এর মাদরাসা লালবাগ কুরআনিয়ায়।
ওখান থেকে চলে যান পাকিস্তানে। ভর্তি হন হযরত আনওর শাহ কাশ্মিরি রহ.এর প্রিয়তম শাগরিদ হজরত ইউসুফ বিন্নৌরি রহ. প্রতিষ্ঠিত বিন্নৌর টাউন মাদরাসায়।
বিন্নৌর থেকে ফিরে আসলে মুহিউস সুন্নাহ তাঁকে উস্তাদ হিসেবে নিয়ে আসেন জামেয়া গলমুকাপনে। এখানে বেশ ক'বছর শিক্ষকতার পর চলে যান জামেয়া গহরপুরে। তারপর জামেয়া ক্বাসিমুল উলূম দরগাহে হজরত শাহজালালে।
ওখানে প্রায় ২৮ বছর খেদমত করার পর আরও বেশ ক'টা মাদরাসায় ইলমে হাদীসের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যান জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।
শায়খুল ইসলাম মদনী রহ. এর দিক নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠিত যে আজাদ দ্বীনী এদারায়ে তালিমকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর রেখে গিয়েছিলেন তাঁর প্রিয়তম ও শ্রদ্ধাভাজন দুলাভাই ও উস্তাদ হজরত ফখরুদ্দীন রহ. হজরত বরকতপুরী সে এদারাকে পৌঁছে গেছেন উন্নতির শীর্ষদেশে।
বাল্যকালের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে এক পর্যায়ে তিনি অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠেন। বলেন, ছোটকাল থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী ও তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন। নেতৃত্বগুণ ছিল তাঁর মধ্যে সহজাত।
যোগ্যতা বলেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন পুরো দেশের হাতে গুণা শীর্ষস্থানীয় আলেমদের একজন। তাঁর মধ্যে ছিল অসংখ্য গুণাবলি। বৃহত্তর সিলেটসহ দেশের দ্বীনী ও ইলমী সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও আন্দোলন সমূহের প্রায় সবগুলোর সাথে কোনো না কোনোভাবে তিনি জড়িত ছিলেন।
তিনি ছিলেন উদার মনের অধিকারী। ছিলেন অগ্রসর চিন্তার অগ্রদূত। আল্লাহ তা'য়ালা তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন। আমীন!
অনুলেখন: মাওলানা আব্দুর রশীদ তারাপাসী
উস্তাদ, জামেয়া দারুস সুন্নাহ গলমুকাপন