সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর
কবি
একুশ শতকের শুরুর দিকেই প্রতিভাত হয়ে গিয়েছিলো— কম্যুনিজমের দিন শেষ। এখন শুধু গো টু প্যাভিলিয়ন বাকি।
বিলুপ্তপ্রায় কম্যুনিজমের অন্যতম বড় সফলতা— গত শতকে তারা বিশ্ববাসীর জন্য কিছু হিরো টাইপ লিডার ডেলিভারি দিতে পেরেছে। মার্ক্স, লেলিন, চে, মাও, ক্যাস্ট্রো এরা। দুঃখজনক হলো— এ বিপ্লবীগণ বর্তমানে থিউরি আর বাণী চিরন্তনীতে সম্যক স্মরণীয়।
বিশ্বব্যাপী তাঁদের ব্র্যান্ডিংও ভালো। তাঁদের নিয়ে বই, সিনেমা, মজার ব্যাপার হলো— এ ব্র্যান্ডিংয়ের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর অবশ্যই পুঁজিবাদ। পুঁজিবাদের ব্যবসাপণ্যের তালিকা এতোটাই উদার— গিতাপাঠ থেকে শুরু করে ঈশ্বরের ঠিকানা পর্যন্ত এরা উৎপাদন করে!
আরও বড় দুঃখের কথা— যে কম্যুনিজমের উত্থান হয়েছিলো শ্রেণিবৈষম্যের বিলুপ্তির শপথ নিয়ে, সে কম্যুনিজম খুব অল্প সময়ে নানা লিডারের অধীনে আলাদা আলাদা শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে গেলো। সেখানেও মতবাদের চেয়ে ব্যক্তিপূজার বাহুল্য প্রতিষ্ঠিত হলো।
পুঁজিবাদ তো আসলে কোনো সমাজবিপ্লবের মতবাদ বা থিউরিক্যাল ইনফ্লুয়েন্স নয়। ন্যায়সঙ্গত এবং সংগঠিত কোনো বিপ্লবী ধারার অনুপস্থিতিতে সুবিধাভোগী শাসকশ্রেণি ক্ষমতায়নে যে কৌশল অবলম্বন করে, মোটাদাগে সেটাই পুঁজিবাদ। সুতরাং পুঁজিবাদ নিয়ে বলার মতো তেমন কিছু নাই। গণতন্ত্রের বেলায়ও একই কথা বলা যায়। এটা তৃতীয় বিশ্বের জন্য একটা চমৎকার মূলা। পুঁজিবাদকে পরিপুষ্ট করার জন্যই গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা।
পুঁজিবাদকে ওভারকাম করার মধ্যেই গণতন্ত্রের বিলুপ্তি। একটা আরেকটার চাচাতো-জ্যাঠাতো ভাই।
বলতে চাচ্ছিলাম— ভবিষ্যতে সমাজ বদলের নতুন কোনো বিপ্লবী মতবাদ তৈরি হবে কি-না? এ ব্যাপারে আমার দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচক। প্রাযুক্তিক আগামী পৃথিবী সমাজবিপ্লবে নতুন একটা ফরম্যাট নিয়ে আসবে। এখানে থিউরিক্যাল বিপ্লবের তেমন কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। এর পুরোটাই হবে প্রায়োগিক বিপ্লব। যে জাতি বা সংগঠিত জনগোষ্ঠী প্রযুক্তিকে যতো বেশি প্রায়োগিক স্টেজে নিয়ে যেতে পারবে, তার হাতেই থাকবে সমাজবিপ্লবের লাগাম।
এখন কথা হলো— প্রায়োগিক প্রযুক্তির চেহারাটা কেমন হবে? খুব সিম্পল। ফেসবুক দিয়ে সারাদিন লাইক-কমেন্ট আর চ্যাট করা যায়, আবার এই ফেসবুক দিয়েই chal-dal.com আর rokomari.com-এর মতো তৃণমূল পর্যায়ে কোটি টাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা যায়।
ডোমেইন কিনে চটি সাইট খোলা যায়, আবার এক হাজার টাকার ডোমেইন দিয়েই Roar বাংলা কিংবা 10 Minutes School খোলা যায়। বিষয়টা হলো পরিকল্পনার এবং প্রযুক্তিকে আপনি কীভাবে ব্যবহার করবেন, সেটার ওপর।
মিছিল আর সমাবেশের দিন শেষ হয়ে আসছে। আগামী পৃথিবীর রাজা-উজির প্রযুক্তির কোটে। চাল কোথায় দেবেন, এবার ভাবতে থাকুন!
ফেসবুক টাইমলাইন থেকে