অনুবাদ: আরিফ বিন মুমিন
পরিচয়পত্র
নিবন্ধিত করো
আমি আরব
আমার পরিচয়পত্র নম্বর ৫০,০০০
আমার বাচ্চা-কাচ্চা আটটা
নয় নম্বরটা গ্রীষ্মের পরেই আসছে।
শুনে তোমার রাগ লাগছে?
নিবন্ধিত করো
আমি আরব
আমি পাথরখনিতে শ্রমিকদের সাথে কাজ করি
আমার বাচ্চা-কাচ্চা আটটা।
পাথরের কাজ করে তাদের রুটি, কাপড় ও খাতা-কলমের ব্যবস্থা করি।
তারপরও তোমার দরজায় গিয়ে ভিক্ষা করি না
তোমার শান বাঁধানো সিঁড়ির ধারে ছোট হতে যাই না।
শুনে তোমার রাগ লাগছে?
নিবন্ধিত করো
আমি আরব
আমি উপাধি ছাড়া একটা নাম
আমি এমন দেশের মেহনতি মানুষ, যে দেশের সবকিছু প্রচণ্ড ক্ষোভ নিয়ে বেঁচে আছে।
আমার শেকড় গাঁথা হয়েছে
কালের জন্মের পূর্বে
সময়ের সূচনার পূর্বে
বেড়া ও ডুমুর ফলের পূর্বে
ঘাসের অংকুরোদ্গমের পূর্বে
আমার বাবা কৃষক পরিবারের
বনেদি নেতৃ-পরিবারের নয়।
আমার দাদাও ছিলেন কৃষক
বংশ-পরিচয়হীন।
বইপত্র পড়া শুরু করার আগে তিনি আমাকে সূর্যের মহত্ত্বের পাঠ দিয়েছেন
আমার ঘর প্রহরীর কুঁড়েঘরের মতো
কাঠ ও বাঁশের তৈরি।
আমার ঘর দেখে তোমার ভালো লাগবে?
( মাহমুদ দরবেশ। জন্ম ১৩ মার্চ ১৯৪১ সালে ফিলিস্তিনের বারওয়া গ্রামে। ফিলিস্তিনির জাতীয় কবি, দ্রোহের কবি, স্বাধীনতা সংগ্রামের কবি। ১৯৪৮ সালে ৮ বছর ববয়সে লেবাননে শরণার্থী হন। ১৯৪৯ সালে শান্তি-চুক্তির পর দেশে ফেরেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত বেশ কয়বার ইসরায়িলি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। ছাড়া পেয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন পাড়ি জমান। মিসর, লেবানন, ফ্রান্স ঘুরে দেশে ফেরেন।
আজীবন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। ছিলেন ফিলিস্তিন লেখক-সাংবাদিক জোটের সভাপতি। সম্পাদনা করেন কারমাল নামক ম্যাগাজিন। তাঁর কবিতায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা, শ্রমজীবী মানুষের দুঃখ-কষ্ট মূর্ত হয়ে ওঠে।
এ ক্ষণজন্মা প্রবাদপুরুষ ৯ আগস্ট ২০০৮ সালে ইহলীলা সাঙ্গ করেন। পরিচয়পত্র কবিতাটি তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা।)