বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


বাংলাদেশের বিপদে সর্বোচ্চ দানকারী যে ব্যক্তি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রোকন রাইয়ান

বাংলাদেশের উপর বয়ে যাওয়া ভয়ঙ্কর ঘুর্নিঝড় সিডরের কথা নিশ্চয় ভুলবে না কেউ। ভয়ঙ্কর এ ঘুর্ণিঝড়ে যখন লণ্ডভণ্ড দেশের দক্ষিণাঞ্চল, চারদিকে লাশের মিছিল, কান্না আর হাহাকার, অন্য বস্ত্র ও চিকিৎসার তীব্র সংকট তখন যেন আল্লাহর পক্ষ থেকে এক দানের সুখবর এল।

খবর এল কোনো এক ব্যক্তি নিজের নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সিডর আক্রান্তদের সহায়তার জন্য ১৩ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় এক হাজার ৪৬ কোটি টাকা) দান করেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো ব্যক্তির এটিই ছিল সর্বোচ্চ দান। নিশ্চয়ই কৌতূলহ হচ্ছে কে এই মাহ দানবীর? এ কোন স্বার্থে দান করলেন তিনি। যার নাম সূত্র নিউজ কিছুই চান না।

এ কৌতূহল সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্তাদেরও। সেই কৌতূহলের জট খুলে দীর্ঘ আট বছর পর।

সঙ্কটে এমন সহায়তাকারী মহান এ দানবীর ছিলেন সৌদি আরবের তখনকার বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ। যিনি ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ইন্তেকাল করেন।

বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৩ কোটি ডলারের দাতা হিসেবে সৌদি আরবের প্রয়াত বাদশাহর নাম প্রথমবারের মতো জানান, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-আইডিবির প্রেসিডেন্ট ড. আহমদ মোহাম্মদ আলী।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বয়ে যায় ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড় সিডর। এতে প্রাণ হারান কয়েক হাজার মানুষ।

সর্ব প্রথম এটি আঘাত হানে দূর্বলারচরে। মূর্হূতেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সব। পর্যায় ক্রমে এটি আঘাত হানে বরিশালের সকল উপকূলে। পিরোজপূর, পটুয়াখালী, ভোলা, সাতক্ষীরা, লক্ষীপুর, ঝালকাঠি সহ বাংলাদেশের প্রায় ৩১টি জেলায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য- প্রচণ্ড সে আঘাতে তুলার মত উড়তে থাকে বাড়ি ঘর, গাছ পালা। যেন কিয়ামতের দিনে হাশরের ময়দান।

টেলিভিশন ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সিডরে আক্রান্তদের দুর্দশা ও ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য দেখে কেদেছে বিশ্ববাসী। তেমনি মর্মাহত হয়েছেন সৌদি আরবের তখনকার বাদশাহ আবদুল্লাহ। তার হৃদয়ও কেপে উঠেছিল ব্যথার যন্ত্রণায়।

বাদশা আবদুল্লাহ তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেন অসহায়দের জন্য বড় ধরনের সহায়তা করবেন। সেটি জানান আইডিবির প্রেসিডেন্ট ড. আহমেদ মোহাম্মদ আলীকে। সিডর আক্রান্তদের সহায়তায় ১৩ কোটি ডলার দান করতে চান।

ইসলামের শিক্ষা- দান করো এমনভাবে যেন ডান হাত দিলে বাম হাতও না জানে। সেই শিক্ষা থেকেই বাদশা আবদুল্লাহ এ দানের ক্ষেত্রে একটি শর্ত জুড়ে দেন। কে এই অর্থ দান করেছে, তা গোপন রাখতে হবে। কোনোমতেই তাঁর নাম বলা যাবে না।

ড. মোহাম্মদ আলীও নাম-পরিচয় গোপন রাখার আশ্বাস দেন। বাদশা আবদুল্লাহ পরদিনই বাংলাদেশের জন্য পুরো ১৩ কোটি ডলার পৌঁছে দেন আইডিবির কাছে। তিনি ব্যক্তিগত অর্থ-সম্পদ থেকে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দান করেন বাংলাদেশকে।

২০০৭ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এই বিপুল অর্থ দানকারীর নাম শুধু একজনই জানতেন। তিনি আইডিবির প্রেসিডেন্ট ড. আহমেদ মোহাম্মদ আলী। বাদশাহর অনুরোধ রাখতে গিয়ে কারও কাছে প্রকাশ করেননি তিনি।

তবে গত জানুয়ারি মাসে সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ মারা যাওয়ার পর আইডিবি প্রেসিডেন্ট প্রথমবারের মতো বাদশাহর ভাই ও সন্তানদের কাছে বিষয়টি খোলাসা করে বলেন, বাংলাদেশে সিডর আক্রান্তদের ১৩ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়া অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিটি ছিলেন তাদেরই বাদশাহ। সেই অর্থে বাংলাদেশে স্কুল-কাম-শেল্টার হোম নির্মাণ হচ্ছে।

বাদশা আবদুল্লাহর দানের ওই ১৩ কোটি ডলারের মধ্যে ১১ কোটি ডলার দিয়ে উপকূলীয় এলাকায় নির্মাণ করা হয় ১৭৩টি স্কুল-কাম-আশ্রয়কেন্দ্র। বাকি দুই কোটি ডলার দিয়ে সিডর আক্রান্ত কৃষক ও জেলে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কৃষি উপকরণ সরবরাহে বিনাসুদে ঋণ দেয়া হয়।

সামরিক দিক থেকে সৌদি-ইরান কে বেশি শক্তিশালী?


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ