রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে কি ভারতের দুই জমিয়ত?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাওলাদার জহিরুল ইসলাম
আওয়ার  ইসলাম

ভারতীয় মুসলমানদের সবচে প্রাচীন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠন ‘জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ’। ১৯১৯ সালে হজরত শায়খুল হিন্দ মাহমূদ হাসান দেওবন্দী রহ.-এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় এই সংগঠন৷

শায়খুল আরব ওয়াল আজম হজরত সাইয়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানি রহ. ছিলেন তার একান্ত সহযোগী৷ সংগঠনটি ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনে ঐতিহাসিক অবদান রাখে৷ স্বাধীনতার পর থেকে ভারতীয় মুসলমানদের যে কোনো সংকটে জমিয়ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে৷

মুসলমানদের আকিদা-বিশ্বাস, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা রক্ষা, শিক্ষা-দীক্ষা, জাতীয় পর্যায়ে মুসলিম নেতৃত্ব গঠনে ভূমিকা, মুসলিম যুবকদের অযথা রাষ্ট্রীয় হয়রানি থেকে রক্ষা, মুসলিম নারীদের অধিকার আদায়সহ বিভিন্ন ইস্যুতে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে আসছে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ৷

প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ ৯৯ বছর পর্যন্ত নেতৃত্বের পরিবর্তন আসলেও দলটির মাঝে কোনো বিভক্তি বা ফাটল সৃষ্টি হয়নি৷ কিন্তু ২০০৮ সালে এসে শত বছরের ঐক্যের বন্ধনে চির ধরে৷

তখনকার জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের প্রেসিডেন্ট মাওলানা সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানি ও সেক্রেটারি জেনারেল, মাওলানা মাহমুদ আসআদ মাদানি’র চিন্তায় পার্থক্য দেখা দেয়৷ দু’জনের দর্শন দু’দিকে মোড় নিতে থাকে৷ শেষ পর্যন্ত জমিয়ত দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়৷ দেশের উলামা-তলাবাও দু’গ্রুপে বিভক্ত হয়৷ আম জনতা অনেকটা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে৷

উভয় জমিয়তই ইসলাম, দেশ ও মানবতার জন্য কাজ করে চলে পাল্লা দিয়ে৷ ২০১৫ সালের রমজানে ভারতীয় মুসলমানগণ একটি খুশির সংবাদ শুনতে পান৷ ‘উভয় জমিয়ত নিজেদের চিন্তার পার্থক্য ভুলে গিয়ে দেশ ও জাতির জন্য এক সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছে৷

ঈদের পর দিল্লির হেড অফিসে জমিয়তের (দু’দলেরই) নেতৃবৃন্দ গোল টেবিল বৈঠকে মিলিত হন৷ পরস্পরের মতপার্থক্যের জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন৷ তবে কর্ম-কৌশল নির্ধারণে কিছুটা মতপার্থক্য রয়ে যায়৷ ফলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আর জনগণ শুনতে পায় না৷

যদিও উভয় জমিয়ত নয়া দিল্লির আইটিওতে অবস্থিত একি কেন্দ্রীয় অফিসে যার যার মতো কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমাবেশে সবাই একই মঞ্চে উপস্থিত হচ্ছিলেন৷

কয়েকদিন আগে দিল্লির ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত জমিয়তের(এম) শান্তি সম্মেলনেও দুই মাদানিকে এই মঞ্চে দেখা গেছে৷ ব্যক্তি পর্যায়েও তাদের সুসম্পর্ক বজায় ছিলো৷


সম্প্রতি ভারতের প্রভাবশালী উর্দু দৈনিক ‘রোজনামা খবর’ তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, উলামা-জনতার বহু দিনের আশা আকাঙ্খার প্রতি লক্ষ্য রেখে খুব শিগ্গিরই দুই জমিয়তের মাঝে ঐক্য স্থাপিত হচ্ছে৷

গত কয়েকদিন আগে জমিয়তের একাংশের প্রধান মাওলানা সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানি জমিয়তের অপরাংশ মাওলানা মাহমুদ আসআদ মাদানি বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন৷

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা(জমিয়ত-এম) জানিয়েছেন, আরশাদ মাদানি তার চিঠিতে সবাইকে এক সঙ্গে ইসলাম, দেশ ও মানবতার সেবায় কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য যেহেতু এক ও অভিন্ন তাই পৃথকভাবে নয় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে সবার জন্যই কল্যাণপ্রসূ হবে৷ এবং আমরা এসঙ্গে জমিয়তের শত বার্ষিকি উদযাপন করতে চাই৷’

ওই নেতা বলেন, মাওলানা আরশাদ মাদানির চিঠি গত ২৭অক্টোবর জমিয়তের(এম) ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে পর্যালোচনা করা হয়েছে৷ এতে অধিকংশ নেতা ঐক্যের পক্ষে মত দিয়েছেন৷ এবং এ বিষয়ে খুব শিগ্গরই উভয় জমিয়তের নেতৃবৃন্দ আলোচনায় মিলিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে৷

মাওলানা আরশাদ মাদানি বর্তমান ভারতে অত্যন্ত সম্মানের ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত৷ শুধু মুসলিম নেতারাই নন অমুসলিম ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতারাও তাকে সম্মান করে থাকেন৷ দারুল উলুম দেওবন্দ ও দেওবন্দ এলাকায়ও তার যথেষ্ট কদর রয়েছে৷

অপরদিকে মাওলানা মাহমুদ মাদানিও বর্তমান ভারতে বিচক্ষণ ও দূরদর্শী আলেম হিসেবে ব্যাপক সমাদৃত৷ বিশেষত মিডিয়া জগতে তার প্রভাব সবচে’ বেশি৷ ক’মাস আগে তিনি উলামাদের একটি প্রতিনিধি দলসহ মুসলমানদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণ বিষয়ে  ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে সাক্ষাতও করেছেন৷

এছাড়া যখনই বিশ্বের ৫০০ বা ১০০ প্রভাবশালী মুসলিম নেতার তালিকা প্রকাশ করা হয় সেখানেও তার নাম জ্বল জ্বল করতে দেখা যায়৷

সব মিলিয়ে ভারতীয় উলামা জনতা ও দুই জমিয়ত কর্মী সমর্থকদের এখন একটিই আশা যে, এতো বড় মানুষ আমাদেরকে নিরাশ করবেন না৷ খুব শীঘ্রই উভয় জমিয়ত নেতৃবৃন্দ একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে ইসলাম, দেশ ও মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাবে৷

সূত্র: উর্দু পয়েন্ট


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ