আওয়ার ইসলাম: নরসিংদীর কিশোরী আজিজাকে পুড়িয়ে হত্যার কারণ উঠে এল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে। সেটি এই সমাজের নৈতিক অধপতনের ব্যাপকতাকে যেন আরেকবার প্রকাশ করে দিল।
অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, কিশোরী আজিজাকে মোবাইল চুরি নয়, চাচির সঙ্গে পরকীয়া প্রেমিকের অপ্রীতিকর ঘটনা দেখে ফেলার কারণেই পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। অভিযুক্ত তমুজা বেগম এমনটিই জানিয়েছেন।
আর ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে আজিজার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা খৈনকুট গ্রামের নিহত স্কুলছাত্রী আজিজা খাতুন (১৩) আবদুস সাত্তারের মেয়ে। সে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রী। বাবা সাত্তার স্থানীয় একটি মুরগির খামারে চাকরি করেন।
শনিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের দগ্ধ অবস্থাতে তার মৃত্যু হয়। নিহতের স্বজন ও পরিবারের অভিযোগ, মোবাইল চুরির অভিযোগে মেয়েটিকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে প্রথমে নির্যাতন ও পরে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
এদিকে সন্তানকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় আজিজার চাচি বিউটি বেগমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে শিবপুর থানায় মামলা করেছেন নিহতের পিতা সাত্তার মিয়া।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিউটি বেগমের মা সানোয়ারা বেগম, তার ভাই রুবেল মিয়া ও তার ফুপু শাশুড়ি তমুজা বেগম। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়।
নিহত আজিজার ভাই সুজন ও মা রেহেনা বেগম জানান, শুক্রবার দুপুরে বাড়ির পার্শ্ববর্তী স্থানে গাছের পাতা কুড়ানোর সময় স্কুলছাত্রী আজিজার চাচি বিউটি বেগম ও তার ভাই রুবেল মিয়া একটি সিএনজি দিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়।
রাত সাড়ে ৮টার বাড়ির অদূরে একটি উচু টিলায় নিয়ে তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে দেয় এবং শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
সুজন আরো জানান, আট-দশ দিন আগে চাচি বিউটি বেগমের একটি মোবাইল সেট চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে। চাচির মা ও অন্য স্বজনরা এর জন্য আজিজাকে সন্দেহ করে। তারা হুমকি দেয়, এক সপ্তাহের মধ্যে মোবাইল ফোন ফেরত না দিলে আজিজাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবে।
পুলিশের হাতে আটক তমুজা বেগম বলেন, গত তিন মাস পূর্বে বিউটি বেগমের স্বামী মালোয়েশিয়া যায়। স্বামী বিদেশে যাওয়ার পর বিউটি বেগম পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। প্রেমিকের সঙ্গে অবাধে মেলামেশা শুরু করে।
এরই মধ্যে বিউটি বেগম সঙ্গে তার প্রেমিকের অবৈধ মেলামেশার দৃশ্য দেখে ফেলেন স্কুলছাত্রী আজিজা। এরপর থেকেই আজিজাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অংশ হিসেবে মোবাইল চুরির নাটক সাজানো হয়।
নিহতের বোন মারুফা বলেন, যে মোবাইল চুরির কথা বলে সেটা চাচির হাতেই ছিল। ইচ্ছে করে আমাদের ওপর অপবাদ দিয়েছে। আমার বোনের হত্যাকারীদের বিচার চাই। তাদের যেন ফাঁসি হয়।
শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সৈয়দুজ্জামান জানান, মোবাইল চুরি নয়, চাচির সঙ্গে পরকীয়া প্রেমিকের অপ্রীতিকর ঘটনা দেখে ফেলার কারণেই আজিজাকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাত ১১টার দিকে বিউটির ফুপু শাশুড়ি তমুজা বেগম বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
মোবাইল চুরির সন্দেহে কিশোরীকে পুড়িয়ে হত্যা