আওয়ার ইসলাম: জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অভিযোগ হিসেবে বলা হয়েছে ইউনেস্কোর ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান রয়েছে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নুয়ার্ট এই ঘোষণা দেন।
আলজাজিরার খবরে বলা হয়, ফ্রান্সের প্যারিসভিত্তিক সংস্থাটিতে স্থায়ী প্রতিনিধির পরিবর্তে ‘পর্যবেক্ষক মিশন’ পাঠানোর কথা জানিয়েছেন নুয়ার্ট।
ইউনেস্কোর বিদায়ী মহাপরিচালক ইরেনা বোকোভা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ায় তিনি ‘গভীরভাবে ব্যথিত’। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই আচরণে বোঝা যাচ্ছে, ইউনেস্কো কখনোই দেশটির কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।
এ বিষয়ে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরভিত্তিক সেক্যুলার বুদ্ধিজীবীদের সংগঠন প্যালেস্টিনিয়ান ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের (পিএনআই) মহাসচিব মুস্তফা বারগৌতি বলেন, এই সিদ্ধান্ত থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন ইসরায়েলের প্রতি ‘সম্পূর্ণ পক্ষপাতদুষ্ট’।
বারগৌতি ফোনে আলজাজিরাকে বলেন, ‘এই ধরনের আচরণে কাঙ্ক্ষিত কোনো ফল আসবে না এবং এটি লজ্জাজনক।’
‘শিগগিরই বা দেরিতে হলেও তারা জাতিসংঘের প্রতিটি সংস্থায় ফিলিস্তিনকে দেখবে। এর পর কি যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বা বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থা (ডব্লিউআইপিও) থেকে নিজেদের সরিয়ে নেবে? এর মধ্য দিয়ে তারা নিজেদেরই ক্ষতি করবে।’
মিত্র রাষ্ট্র ইসরায়েলের বিরোধিতা সত্ত্বেও ২০১১ সালে ফিলিস্তিনকে ইউনেস্কোর পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওই বছর তারা ইউনেস্কোতে অর্থ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল।
তবে সেই সময় পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনটি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়নি। বৃহস্পতিবার দেশটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সংগঠন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিল।
এর আগে ইউনেসকোর নেওয়া একের পর এক সিদ্ধান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিল।
২০১১তে ইউনেসকো ফিলিস্তিনিদের পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রতিবাদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সে বছর ওই সংস্থায় তাদের যে আর্থিক সহায়তা করার কথা ছিল, তা করেনি।
ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি পাওয়া পশ্চিম তীরের প্রাচীন হেবরন শহর।
গত বছর ইউনেসকো জেরুসালেমের একটি ধর্মীয় স্থান সম্পর্কে একটি বিতর্কিত প্রস্তাব গ্রহণ করে, যাতে ওই পবিত্র স্থানের সঙ্গে ইহুদীদের সম্পর্কের কথা একেবারেই উল্লেখ করা হয়নি।
তার প্রতিবাদে ইসরায়েল ইউনেসকোর সঙ্গে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়।
এ বছরের গোড়ায় ইউনেসকো পশ্চিম তীরের প্রাচীন শহর হেবরনকে যেভাবে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করেছিল, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তারও কড়া সমালোচনা করেছিলেন।
তবে 'ফরেন পলিসি' সাময়িকী বলছে, ইউনেসকো থেকে আমেরিকার প্রত্যাহারের পেছনে শুধু ইসরায়েলকে সমর্থন জানানোই নয়, অর্থ সাশ্রয় করার উদ্দেশ্যও আছে।
ইউনেসকো এই মুহুর্তে সংস্থার নতুন প্রধান নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যস্ত।
ইরিনা বোকোভার জায়গায় সংস্থার প্রধান হিসেবে কে আসবেন, তা নিয়ে কাতার ও ফ্রান্সের দুই সাবেক মন্ত্রী- যথাক্রমে হামাদ বিন আব্দুলাজিজ আল-কাওয়ারি ও অড্রে অজুলে-র মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা চলছে।