আওয়ার ইসলাম: রোহিঙ্গা সমস্যা একটি জাতীয় সমস্যা। তাই জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব। এ সমস্যার সমাধানে সরকারের কুটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এর সমাধান জাতীয় ভাবেই করতে হবে। এ জন্য সরকারকে বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ সকল দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়তে হবে। এক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থ হলে আজকের জাতীয় কনভেনশনে উপস্থিত নেতৃবৃন্দকে জাতীয় ঐক্য গড়ার দায়িত্ব নিতে হবে।
বুধবার (৪ অক্টোবর) জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত “রোহিঙ্গা গণহত্যা বিশ্ববিবেকের প্রতি চ্যালেঞ্জ ও আমাদের করণীয়” শীর্ষক জাতীয় কনভেনশনে জমিয়ত নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন ইসলামী, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদগণ এসব কথা বলেন।
জাতীয় কনভেনশনে আলেমগণ ১০ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবগুলো হলো, রোহিঙ্গাদের ঈমানি সত্ত্বাকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রোহিঙ্গাদের ধর্মকর্ম পালনে পূর্ণ অধিকার দিতে হবে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের যাতে কোন অপশক্তি, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও দালালেরা হয়রানী করতে না পারে সেদিকে প্রশাসন এবং সোনাবাহিনীকে কড়া নজর রাখতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা এবং ত্রাণ তৎপরতা পরিপূর্ণভাবে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করতে হবে। রোহিঙ্গাদের কঠিন সময়ে দেশের আলেম-উলামা এবং দ্বীনদার শ্রেণির মানুষ সর্বপ্রথম এগিয়ে এসেছে, তাই তাদের ত্রাণ তৎপরতায় সরকারিভাবে সম্পৃক্ত করা ও পরামর্শ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। এনজিওরা যাতে সেবার আড়ালে রোহিঙ্গাদেরকে ধর্মান্তরিত না করতে পারে সেদিকে সরকারের যথাবিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
জাতীয় কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তেব্যে ঢাবির সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজ উদ্দীন আহমেদ বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট প্রশ্নে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের অবস্থান রোহিঙ্গাদের পক্ষে ছিল। ভেটো দিয়েছে রাশিয়া ও চীন। এ দু’টি দেশকেও কুটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের পক্ষে আনার দায়িত্ব সরকারের। তাছাড়া রাশিয়া ও চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক ভাল।
তিনি বলেন, নানা ধরণের চুক্তি হয়েছে এ দুটি দেশের সাথে তাই এ দুটি দেশকে রোহিঙ্গাদের পক্ষে আনা বাংলাদেশের জন্য কঠিন হওয়ার কথা নয়। তিনি কফি আনানের ৫ দফা সুপারিশের উপর গুরুত্বারোপ করে এর ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে জমিয়তের মহাসচিব আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমী বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি একটি জাতীয় ইস্যু। এর সমাধান জাতীয়ভাবেই করতে হবে এজন্য দরকার জাতীয় ঐক্য। সরকার এটা করতে ব্যর্থ হলে আমাদেরকেই তা করতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যূ সমাধানে সরকারের কুটনৈতিক চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। কুটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই রাশিয়া, চীন ও ভারতকে রোহিঙ্গাদের পক্ষে আনতে হবে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক বলে অপপ্রচার চালানো হলেও বাস্তবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক নয়। তাই তাদের সকল প্রকার নাগরিক অধিকারসহ পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই স্বদেশে ফেরত দিতে হবে। রোহিঙ্গা নাগরিক হোক বা অভিবাসী হোক তাদের সকল অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব মিয়ানমার সরকারের। আর এ সমস্যার সমাধান করার মূখ্য সময় এক্ষুনি। এ কাজে সরকার ব্যর্থ হলে এর খেসারত সবাইকে দিতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর পরিস্থিতির ভয়াবহতা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে দেওয়া নিশ্চিত করতে বিশ্বশক্তি সমূহের উদ্যোগ নেওয়ার ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে এবং মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করতে মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিকভাবে অস্ত্র ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারী করে একঘরে করার জন্যও সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমীর সভাপতিত্বে এবং দলের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর সঞ্চালনায় উক্ত জাতীয় কনভেনশনে অন্যন্যাদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন প্রধান আল্লামা শাহ আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, বাংলাদেশ কল্যান পার্টির সভাপতি সৈয়দ ইবরাহীম বীর প্রতীক, জামিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসূফী, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, খেলাফত মজলিসের মহসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমীর ড. মাওলানা ঈসা শাহেদী, ও ইসলামী ঐক্যজোটে মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুল করীম প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়াম্যান এ্যাডভোকেট আব্দুর রাকীব, জামেয়া মোহাম্মাদিয়ার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা আবুল কালাম, জমিয়তের সহ-সভাপতি মাওলানা জহিরুল হক ভূইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের সভাপতি মুফতি নাছির উদ্দিন খান প্রমূখ।
কনভেনশনে প্রস্তাবাবলী পাঠ করেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তাফাজ্জল হক আজীজ।