রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা জন্য ঢাকায় পৌঁছেন মিয়ানমারের মন্ত্রী তিন্ত সোয়ে৷ সোমবার দুপুরে তিনি বৈঠক করবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে৷ আর এই বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া সহ পাঁচটি বিষয়ে জোর দেবে বাংলাদেশ৷
সোয়ের নেতৃত্বে মোট তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল রবিবার দিবাগত রাত ১২ টার পর ঢাকায় আসছেন৷
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সু চি'র অফিসের ইউনিয়ন মন্ত্রী টিন্ট সোয়ে মিয়ানমারের একজন প্রভাবশালী রাজনীতিক এবং রাখাইন বিষয় দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত৷ তিনি একজন পেশাদার কূটনীতিক এবং ১০ বছর ধরে জাতিসংঘে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷
কূটনৈতিক বিষয়ক সিনিয়র সাংবাদিক শেখ শাহরিয়ার জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সোমবার সকাল ১১ টায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মিয়ানমারের মন্ত্রী টিন্ট সোয়ে'র বৈঠক৷ বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিবসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশে না থাকায় তার সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে না৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের উত্তর বলেন, ‘‘বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঁচটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হবে৷
অবিলম্বে রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ করা, মানবিক সহায়তা, সেফ জোন, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া এবং কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এই পাঁচটি প্রস্তাবই তুলে ধরেছেন৷ কিন্তু দ্বিপক্ষীয় হিসেবে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া এবং কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নই গুরুত্ব পাবে সবচেয়ে বেশি৷ অন্যান্য বিষয়ে আরো অনেক পক্ষ জড়িত৷''
এদিকে, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সংবাদ মাধ্যমে গত সপ্তাহে বলেছেন, ‘‘মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হবে৷'' তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি৷ জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করেছে বাংলাদেশ৷ বৈঠকে ওই রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করবে বাংলাদেশ৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বর্তমান অবস্থায় মিয়ানমারের মন্ত্রীর রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ঢাকা সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে৷ কিন্তু কিভাবে? বাংলাদেশে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় মিয়ানমারকে অবস্থান পরিস্কার করতে পারবে৷ আর এর ফলে সমস্যা নিয়ে মিয়ানমারের মনোভাবও সরাসরি বাংলাদেশ জানতে পারবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া, সহিংসতা বন্ধ এবং কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের ওপর অনড় থাকতে হবে৷ মিয়ানমারের নারিকত্ব সংক্রান্ত আইন, নাগরিকত্বের পরিচয় পত্র এসব বিষয়ে বাংলাদেশকে সঠিক অবস্থান নিতে হবে৷ যেসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসেছে তাদের ডকুমেন্টেশনও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷''
এই অধ্যাপক মনে করেন, ‘‘সহসা এই সংকটের অবসান হবেনা৷ বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদে সংকট সমাধানে কাজ করতে হবে৷ বহু পক্ষ অনেক কথা বলবে৷ কিন্তু সবাই কথা বললেও শেষ পর্যন্ত কথায়ই থেকে যায়৷ বাংলাদেশ যেহেতু রোহিঙ্গা সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত তাই আলোচনা ও চাপ প্রয়োগে বাংলাদেশকেই সক্রিয় থাকতে হবে৷''
গত মাসে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে সাইড লাইনের বৈঠকে মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং টুন রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার প্রস্তাব দেন৷ তারই প্রক্রিয়া হিসেবে মিয়ানমারে মন্ত্রী টিন্ট সোয়ে বাংলাদেশে আসছেন বলে জানা গেছে৷ ওই বৈঠকে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিতে জোর দিয়েছে এভং
রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রক্রিয়া নিয়ে মিয়ানমারকে একটি রূপরেখাও দিয়েছে৷
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে রাখাইনে সহিংসতা শুরু হলে মিয়ানমার তিন মাস সময় নিয়েছিল দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবার জন্য৷ জানুয়ারি মাসে মিয়ানমার সরকার ‘কেউ টিন' নামে এক বিশেষ দূতকে কোনও ম্যান্ডেট ছাড়াই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য ঢাকায় পাঠায়৷ তবে সে বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি৷ তবে এবার বাংলাদেশকে অবশ্যই একটি সমাধানের দিকে মিয়ানমারকে নিতে হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন৷
বাংলাদেশে এখন প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছেন৷ মিয়ানমারের রাখাইনে সর্বশেষ ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে এপর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে৷
সূত্র: ডয়েচেভেলে