রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যত্রতত্র ব্রাকের ব্যানার; জনমনে ক্ষোভ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

এম ওমর ফারুক আজাদ টেকনাফ ও উখিয়া থেকে ফিরে

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সেনা চৌকিতে হামলার তথাকথিত অভিযোগের ভিত্তিতে শুদ্ধি অভিযানের নাম করে মুসলিমদের উপর নির্যাতন শুরু করে সে দেশের সেনাবাহিনী। তাদের সাথে যোগ দিয়েছে সাধারণ বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা চালাচ্ছে হত্যাযজ্ঞ।

তাদের হত্যা-ধর্ষণ ও লুটপাটের মহোতসব শুরু হলে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে চলে আসে প্রায় ৫লক্ষ রোহিঙ্গা। স্বাধীনতার পর এ বছরের রোহিঙ্গা সমস্যাই বাংলাদেশের উপর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ও মানবিক বিপর্যয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

কিন্তু শান্তিকামী ও মানবপ্রেমিক বাংলাদেশী জনগণ ও সরকার এই চরম মানবিক বিপর্যয়ের চ্যালেঞ্জকে যেভাবে বুক পেতে নিয়েছে তা আন্তর্জাতিক মহলে প্রসংশিত ও আলোচিত হয়েছে। রোহিঙ্গারা যখন নিজেদের সব ছেড়ে খালি হাতে বাংলাদেশে স্থান নেয়, তখন তাদের পাশে এসে দাঁড়ায় সাধারণ জনগণ থেকে নিয়ে রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক ও সেচ্চাসেবি সংগঠন। সরকার সীমান্ত উন্মুক্ত করে স্থাপন করেন মানবতার বিশ্বব্যাপী এক দৃষ্টান্ত।

কিন্তু গত ২২ সেপ্টেম্বর টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন শরনার্থী ক্যাম্পে ঘুরে একটি বিষয় অবাক করেছে। আশপাশের মানুষদের কাছেও বিষয়টি ভালো লাগেনি। কুতুপালং, বালুখালী, থ্যাংখালী, লেদা ক্যাম্পগুলোতে যত্রতত্র চোখে পড়েছে ব্রাক নামের একটি এনজিও সংগঠনের ব্যানারের ছড়াছড়ি।

রাস্তার পাশে পাশে যেসব ক্যাম্প রয়েছে সেগুলোতেই ব্যানার টাঙানো হয়েছে বেশি। তাছাড়া রাস্তার পাশের বড় বড় গাছে কার্যক্রমের কোন উল্লেখ না করে শুধুমাত্র ইংলিশ নামে "ব্রাক" নামের বিজ্ঞাপনের হিড়িক পড়েছে।

যেসব ব্যানার ক্যাম্পে রয়েছে সেগুলোর কোনটিতে রয়েছে "জরুরি স্বাস্থ সেবা", মেডিকেল টিম" ইত্যাদি লেখা। কিন্তু খবর নিয়ে দেখা গেছে অনেক ব্যানারের আশপাশে কার্যত কোন কার্যক্রম নেই। তাছাড়াও রাস্তার পাশে যেভাবে ব্যানার টাঙানো হয়েছে পাহাড়ের উপর কিংবা ক্যাম্পের ভেতরে ব্যানারের উপিস্থিতি কম।

রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন মানবিক,সামাজিক ও অরাজনৈতিক-রাজনৈতিক সংগঠন কাজ করলেও তাদের কার্যক্রমে ব্রাকের মত এভাবে ব্যানারের ছড়াছড়ি অপ্রতুল। এসবের পেছনে ব্রাকের হেতু কি তা নিয়ে সচেতন মহলে বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

এসব নিয়ে অনলাইন এক্টিভিস্টরা আলোচনা সমালোচনা করছেন। তাদের মত, ব্রাকের এসব কার্যক্রম মূলত সরকার ও জনগণের অবদানকে ম্লান করার জন্যে অশুভ পায়তারা। তারা বিশ্বের কাছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একচ্ছত্র নিজেদের অবদান তুলে ধরতে চাইচে, যদিওবা সাধারণ জনগণ ও সরকার যে যার অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছে।

তারা বলেন, এভাবে চোখ ধাঁধানো ব্যানার প্রচারণার মাধ্যমে তারা বিশ্বকে কোন একটি ম্যাসেজ দিতে চাচ্ছে। তিনি ব্রাকের এসব ব্যানার অপততপরতা বন্ধে কক্সবাজার জেলা প্রসাশকের নিকঠ আবেদন জানান।

এ ব্যাপারে কথা হয় ইয়ুথ ভয়েস বাংলাদেশের চট্টগ্রাম নগর কমিটির সদস্য সমাজকর্মী জাওয়াদুল করীমের সাথে। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে শরনার্থী শিবিরে কাজ করে যাচ্ছেন।

ব্রাকের এভাবে ব্যানার প্রচারণার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্রাক দৈনিক কত লক্ষ টাকার কার্যক্রম পরিচালনা করছে? অথচ যত্রতত্র তাদের ব্যানার টাঙিয়ে তারা বুঝাতে চাচ্ছে যেনো রোহিঙ্গাদের সব দায় দায়িত্ব তারাই নিয়ে নিয়েছে। অথচ অনেক সংগঠন আছে যারা দৈনিক দশ লক্ষ টাকার উপরে কার্যক্রম পরিচালনা করে কিন্তু তারা ব্রাকের মতো এভাবে কাজের চেয়ে ব্যানার প্রচারণা করে না।

তিনি বিশেষত উল্লেখ করেন আলেমদের কার্যক্রমগুলোকে। তিনি বলেন, আমি অনেক আলেমকে দেখেছি যারা সেই শুরু থেকে এক ক্যাম্প থেকে আরেক ক্যাম্পে মানবতার টানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, প্রতিদিন দিচ্ছেন লাখ লাখ টাকার ত্রাণ সহায়তা। কিন্তু তাদের কোন ব্যানার নেই। প্রচারণার চেয়ে তারা কাজকেই বেশি প্রধান্য দিচ্ছেন।

কিন্তু ব্রাকের এভাবে ব্যানার প্রচারণার আসল উদ্দেশ্য কি তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন কোন দেশে মানবিক কিংবা প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘড়ে তখন কেউ তাদের কাছে ছুটে আসে সেবার তাগিদে আর কেউ আসে তাদের নিয়ে ব্যাবসা করতে। ব্রাক এভাবে কাজের চেয়ে ব্যানার প্রচারণা করে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। যাতে করে দাতা সংস্থাগুলো তাদের ত্রাতা ভেবে কোটি কোটি টাকা ডোনারেশন দেয়।

আর এতে করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকার ও জনগণের অবদান ম্লান হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন অনেক প্রত্যক্ষদর্শী ও সচেতন মহল।

তাই সচেতন মহল মনে করেন জেলা প্রসাশক যেনো দ্রুত এই অশুভ পঁয়তারার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন।

রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী ক্যাম্প উদ্বোধন করলেন মাহমুদ মাদানি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ