রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


টেকনাফমুখী রোডমার্চের ব্যাপক প্রস্তুতি; সিলেট থেকে দুইশতাধিক গাড়ি ছাড়বে কাল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতাউর রহমান খসরু
আওয়ার ইসলাম

মিয়ানমারের মুসলিম গণহত্যার বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে পুরো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সর্বদল ও মতের মানুষ এ অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করে আসছে।

গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠন তার প্রতিবাদ সভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এদের অধিকাংশই ইসলামি দল।

কোনো কোনো ইসলামি দলে দেখা দিয়েছে ব্যতিক্রম উদ্যোগও। তারা দলীয় ব্যানার ছেড়ে সামাজিক সংগঠনের ব্যানার বেছে নিয়েছেন মানবিক এ আন্দোলনের জন্য। এমনি একটি উদ্যোগ হিউম্যানিটি ফর রোহিঙ্গা। সংগঠনটি রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে আগামীকাল সিলেট থেকে মিয়ানমার অভিমুখে রোডমার্চ করবে।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে রোডমার্চের ৯৫ ভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মিলেছে প্রাশসনের অনুমতিও। সবকিছু ঠিক থাকলে, আগামীকাল সকাল ১০ টায় সিলেট থেকে দুই শতাধিক গাড়ি নিয়ে শুরু হবে রোডমার্চ।

হবিগঞ্জ ও বি-বাড়িয়ার দারুল আরকামে দুটি সমাবেশ করে ফেনীতে রাত্রীযাপন। ফেনী থেকে শুক্রবার আবার মিয়ানমার অভিমুখে শুরু হবে আবার রোডমার্চ। দুই শতাধিক গাড়ি নিয়ে রোডমার্চ শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত তাতে হাজারের উপর গাড়ি যুক্ত হবে বলে আশা করছেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

হিউম্যানিটি ফর রোহিঙ্গার উদ্যোক্ততা সুনামগঞ্জের সাবেক সাংসদ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী

তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম নতুন এ উদ্যোগের লক্ষ্য কী? তিনি বলেন, ‘হিউম্যানিটি ফর রোহিঙ্গা মিয়ানমারের নিপীড়িত মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির স্বার্থরক্ষার জন্য করা হয়েছে। আমরা দেশে ও দেশের বাইরে এই ব্যানারে জনমত গড়ে তোলার জন্য কাজ করবো। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হওয়ার পর্যন্ত হিউম্যানিটি ফর রোহিঙ্গা কাজ করে যাবে।’

সংগঠনের এই মুহূর্তের লক্ষ্য হলো, রোডমার্চই। এটার পর রোহিঙ্গাদের স্বার্থ নিয়ে আরও দীর্ঘ মেয়াদী কাজ করার ইচ্ছে আছে বলেন জানান চেয়ারম্যান শাহীনূর পাশা চৌধুরী।

দলীয় ব্যানার থাকার পরও কেন ভিন্ন কিছু করার প্রয়োজন অনুভব করলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘দলীয় ব্যানারে সব কাজ করা যায় না। সরকারও উদারভাবে তা গ্রহণ করে না। চরমোনাই পীর এর আগে দলীয় ব্যানারে লংমার্চ করতে চাইলেও সরকার করতে দেয় নি। দলীয় ব্যানারে সব মানুষ এক হতে পারে না। আমি চাই এ সামাজিক ব্যানারে দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে মানবতার পক্ষের সব মানুষ যেনো এক হতে পারে, কাজ করার সুযোগ পায়। তারা সবাই সাড়াও দিচ্ছে।’

তিনি জানান হিউম্যানিটি ফর রোহিঙ্গা’র ডাকে সাড়া দিয়েছেন সর্বশ্রেণির মানুষ। সিলেটের সব দলের নেতারা মানবিক এ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের অনেক সক্রীয় নেতাও রোডমার্চে অংশ নিবেন। অংশ নিবেন সংখ্যালঘুদের অনেকেই।

তবে তার জমিয়তের কাছে তার প্রত্যাশা অনেক বেশি। তিনি মনে করেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-ই এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

আন্তর্জাতিক পরাশক্তিদের দ্বৈত ভূমিকার কারণে রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যত ও রোহিঙ্গা কেন্দ্রিক আন্দোলনের সাফল্য নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে অনেকের মাঝে। বিশেষত মিয়ানমার সরকারের অঘোষিত প্রধান অং সাং সুচির ভাষণের পর অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেছেন। এমন মুহূতে রোডমার্চের যৌক্তিকাত কতোটুকু?

অ্যাডভোকেট শাহীনূর পাশা মনে করেন, এবারের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। সুচি আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করার চেষ্টা করলেও শেষ পযন্ত তা পারবেন না। তার ভাষায়, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেভাবে সাড়া জেগেছে তাতে আমি আশাবাদী। মিয়ানমার অন্তত তাদের নাগরিকত্ব ও মৌলিক অধিকার প্রদানে সম্মত হবে। তবে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। মুসলিম দেশের জণগনের উচিৎ সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করা।’

রোডমার্চের মাধ্যমে হিউম্যানিটি ফর রোহিঙ্গা ঠিক কাকে কী বার্তা দিতে চাচ্ছে? রোড মার্চ কি আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য? নাকি সরকারের প্রতি কোনো বার্তা তারা দিতে চান?

‘আমরা দুটি দিকই সামনে রেখেছি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের উদ্যোগ যেনো সফল হয়, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ যেনো রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবনযাপনের বিষয়টি উপেক্ষা না করেন সেটা আমরা চাই।’-বলেন শাহীনূর পাশা।

এ সময় তিনি সরকারকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ‘সরকারের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। প্রধানমন্ত্রী যে তাদের সমস্যার সমাধান না হওয়া পযন্ত তাদের আশ্রয় দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন -তা প্রসংশনীয় তবে আমি মনে করি, সরকারের আরও কিছু করার ছিলো। আপনি যদি তুর্কি ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান ভূমিকা মিলিয়ে দেখেন তাহলে পার্থক্য বুঝতে পারবেন।’

অন্য অনেকের মতো অ্যাডভোকেট শাহীনূর পাশা মনে করেন মিয়ানমারে সামরিক হস্তক্ষেপ অযৌক্তিক নয়। তার পরামর্শ হলো, ‘বাংলাদেশের সরাসরি সামরিক না করলেও জাতিসংঘ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং বাংলাদেশ এজন্য তাদের ভূমি ব্যবহার করতে দিতে পারে।’

মুসলিম বিশ্বের নেতাদের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৬ দফা প্রস্তাব


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ