রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ যাচ্ছে গ্রাম থেকেও

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবু নাঈম আশরাফ: স্মরণকালের ভয়াবহ নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলিমরা৷ বার্মা সরকারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়ে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা এসে আশ্রয় নিয়েছে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে৷

বাংলাদেশ সরকারও এবার যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখিয়ে খুলে দিয়েছে সীমান্ত৷ ফলে, নৃশংসতা শুরুর পর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা দলে দলে আসছে বাংলাদেশে৷ শরণার্থীদের সংখ্যা এরই মধ্যে চার লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানাচ্ছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো৷

রোহিঙ্গাদের সাহায্যের জন্য বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র উদ্যোগী হলেও, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন দল ও সংগঠনও ব্যাপকভাবে চালাচ্ছে ত্রাণ কার্যক্রম৷ কোথাও ব্যক্তিগতভাবে, কোথাও আবার দলীয় ও সাংগঠনিক ব্যানারে আপামর জনসাধারনের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হচেছ ত্রাণসামগ্রী৷ থেমে নেই গ্রামীণ জনগোষ্ঠীও৷

সামর্থবান থেকে শুরু করে গ্রামের হতদরিদ্ররাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে দান করছেন রোহিঙ্গা মুসলিম ভাইবোনদের দু'মুঠো অন্ন যোগান কাজে৷

ঢাকার নিকটবর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জ থেকেও যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী৷ জেলার কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সভাপতি, মাওলানা আব্দুল কাদিরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে, শহরের বিভিন্ন স্থানে চলছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম৷

মোবাইলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আওয়ার ইসলামকে জানান, মাওলানা মূসা কাসেমীর নেতৃত্বে এই মূহূর্তে তাদের একটি টিম ত্রাণ নিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান করছেন৷ বিতরণ শেষে আজই তাদের ফেরার কথা রয়েছে৷ এরপর আগামী সোমবার আরো একটি প্রেরণের জোর প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি৷

মাওলানা আব্দুল কাদির জানান, এর আগে গতবছর সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে গত রমজান পর্যন্ত তারা প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন৷ এরমধ্যে রয়েছে নগদ টাকা, সবধরণের খাদ্যসামগ্রী ও কাপড়চোপর রয়েছে৷ এছাড়া বেশ কটি টিউবয়েলও বসানো হয়েছে৷

এদিকে জেলার ফতুল্লা থানায় পৃথকভাবে চলছে ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম৷ আলইমদাদ পাঠাগার ও সমাজসেবা সংস্থা এবং মুসাফিরের কাফেলা নামের দুটি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে এ সংগ্রহাভিযান চালাচ্ছে৷

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুসাফিরের কাফেলার কর্ণধার ওমর বিন আব্বাস আওয়ার ইসলামকে বলেন, নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছি৷ ইতোমধ্যেই আমরা উভয় সংগঠনের পক্ষ থেকে লিফলেট ছেপে বিতরণ করছি এবং মোট দশটি পয়েন্টে জনসাধারণের কাছ থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করছি৷'

ওমর বিন আব্বাস জানান, গত নভেম্বর-ডিসেম্বরজুড়ে যখন বার্মা বাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গাদের দমন-পীড়ন শুরু হয়, তখনো তারা ত্রাণ সংগ্রহ করে পাঠিয়েছিলেন৷

তিনি বলেন, সেবার আমরা এক লক্ষ বিশ হাজারেরও বেশি নগদ টাকা, ৩৪ বস্তা চাল এবং প্রায় ৩০ টন নতুন-পুরাতন শীত বস্ত্র হাটহাজারী মাদরাসা মারফত বিতরণ করেছি৷

এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ থেকে আরো অন্তত পাঁচ-ছয়টি টিম শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে ত্রাণ করছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে৷

এসব ছাড়াও প্রতিটি জেলা উপজেলাভিত্তিক তরুণদের সমাজসেবামূলক সংগঠন বা মাদরাসা স্কুলগুলো নিজেরা ত্রাণ সংগ্রহ করে পাঠাচ্ছে রোহিঙ্গা অঞ্চলে। মানবিক বিপর্যয়ের এ মুহূর্তে তরুণ ও তৃণমূল সমাজের এগিয়ে শুভ লক্ষণ।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ