আওয়ার ইসলাম: মিয়ানমারের ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য বর্বরতা, হত্যাযজ্ঞ ও নারী-শিশু নির্যাতন বন্ধের দাবিতে ১১ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ, ১২ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা উদ্ধাস্ত শিবিরে ত্রাণ তৎপরতা ও লঙ্ঘরখানার কার্যক্রম শুরু এবং ১৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম।
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
বিক্ষোভে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, মিয়ানমারের মুসলমান নারী-পুরুষ ও শিশুদের উপর অং সান সুচির সামরিক জান্তাদের জুলুম-নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ইতিহাসের সব জুলুম নির্যাতনকে হার মানিয়েছে। এমন বর্বরতা বিশ্ববাসী কখনো দেখেনি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর আয়োজিত বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, উত্তর সভাপতি অধ্যক্ষ শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, দক্ষিণ সেক্রেটারী মাওলানা এবিএম জাকারিয়া, হাফেজ সিদ্দিকুর রহমান, নুরুজ্জামান সরকার, ক্বারী সাইদুল ইসলাম আসাদ।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী, প্রকৌশলী আশরাফুল আলম, যুবনেতা কেএম আতিকুর রহমান, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, আলহাজ্ব আলতাফ হোসেন, শ্রমিক নেতা মাওলানা খলিলুর রহমান, ছাত্রনেতা জিএম রুহুল আমীন।
মুফতি ফয়জুল করীম রোহিঙ্গাদের স্থায়ী সমস্যা সমাধনে কফি আনান কমিশন বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিক সকল সুবিধা প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘের নেতৃত্বে শান্তি রক্ষীবাহিনী প্রেরণ করতে হবে। রোহিঙ্গা অঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টিকারী ঘাতক অং সান সুচির আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার করতে হবে।
তিনি বলেন, অং সান সুচি বার বারই এক কথা বলছে, “রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়, বাঙ্গালী সন্ত্রাসী” যদি রোহিঙ্গারা বাঙ্গালী হয়, আরাকান বাংলাদেশের অংশ এবং আরাকানকে বাংলাদেশে ফেরত দিতে হবে। না হলে প্রয়োজনে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে মুসলমানরা আরাকানকে উদ্ধার করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বুঝিয়ে দিবে।
মাওলানা মাদানী বলেন, মুসলিম গণহত্যা বন্ধে বিশ্বমুসলিমকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে ওদের হিংস্রতা আরো বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, অং সান সূচি অশান্তি সৃষ্টিকারী, শান্তি নোবেল সে পেতে পারে না। জাতিসংঘের নোবেল ফেরত নেয়া উচিত। ইরাক, ফিলিস্তিন জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অমান্য করেছে বলে ফিলিস্তিন ও ইরাকে শান্তি বাহিনী প্রেরণের নামে সে দেশগুলো শেষ করে দিয়েছে। এখন মিয়ানমার জাতিসংঘের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাংগুলি দেখাচ্ছে এজন্য মিয়ানমারে কেন জাতিসংঘ শান্তি রক্ষীবাহিনী প্রেরণ করছে না। তাহলে কি জাতিসংঘ মুসলিম নিধন সংঘে পরিণত হয়েছে?
তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের স্টিমরোলার বন্ধ না করলে প্রয়োজনে বাংলাদেশের ঈমানদার জনতা বার্মা দূতাবাস ঘেরাও করতে বাধ্য হবে।
অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী-পুলিশ ও রাখাইন বৌদ্ধদের দ্বারা বর্বরোচিত রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা, ধর্ষণ, বাড়ী-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতন চালিয়ে বার বার মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের সকল প্রকার নাগরিক ও মানবিক অধিকার হরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যা ও ধর্ষণের বিচার এবং মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যে মানবিক বিপর্যয় রোধ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। রোহিঙ্গা মুসলমান নারী, পুরুষ ও শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করে মিয়ানমার সরকার জুলুমের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দীন বলেন, রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে ঘুরে ঘুরে দেখেছি তারা অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের উপর মিয়ানমার সরকারের জুলুম নির্যাতনের কথা শুনলে চোখের পানি ধরে রাখা যায় না। মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যা, ধর্ষণ এবং তাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনার পর জাতিসংঘসহ সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষ তার প্রতিবাদ করলেও মিয়ানমার সরকার তাতে কর্ণপাত করছে না।
তিনি বলেন, সৌদী আরব, মিশরসহ মুসলিম বিশ্বকে এহেন বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হওয়ার দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা ইমতিয়াজ আলম বলেন, মিয়ানমারের জান্তা সামরিক বাহিনী যেভাবে বর্বরতা করছে তাতে কোন পশুও পশুর উপর এত হিংস্র আঘাত করে না। ওরা জীব-জানোয়ারকেও হার মানিয়েছে।
তিনি বলেন, তুরস্কের ফাস্ট লেডি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে এসে তাদের দু:খ দুর্দশার কথা শুনে কেঁদেছেন, তাদের আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের ফাস্টলেডিদের সেখানে যাওয়ার সুযোগ হয় না? মুসলমান নারী, শিশুদের হত্যা-নির্যাতনে তাদের হৃদয় কাঁদে না। তিনি বাংলাদেশ সরকারকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালতে অং সান সুচির বিরুদ্ধে মামলা করার আহ্বান জানান।