সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


‘রোহিঙ্গা নিপীড়নের কথা শুনলে হৃদয় ফেটে যায়’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মাদ শোয়াইব : সন্ত্রাসী মিয়ানমারের নিপীড়নের মুখে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশের আসা রোহিঙ্গাদের সরেজমিনে দেখতে এসে কঠোর ভাষায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান। এসময় তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বুকে টেনে আবেগাপ্লুত হয়ে অঝোর ধারায় কাঁদেন।

তিনি রোহিঙ্গা বস্তিতে পৌঁছলে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি তৈরি হয়। তার কাছে নিজেদের দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অনেকে তার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যে পাশবিক আচরণ করা হচ্ছে তা অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয়। কোনো হৃদয়ের জন্য তাদের অবস্থা নিজ চোখে দেখলে স্থীর থাকা সম্ভব নয়। তাদের সঙ্গে করা নৃশংসতার কথা শুনলে  হৃদয় ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়। অথচ এমনটা ঘটছে বিশ্ব-চোখের সামনে। বিশ্ব নেতারা এর দায় এড়াতে পারে না।

পরিদর্শনকালে তিনি সদ্য অনুপ্রবেশ করা কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেন। মিয়ানমারে নৃশংসতার শিকার রোহিঙ্গা নারীদের কাছ থেকে নির্যাতনের বর্ণনা শুনেন এমিনি এরদোগান। তাকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রোহিঙ্গারা। এ সময় রোহিঙ্গাসহ উপস্থিতদের চোখ টলমল করছিল। তখন এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়।

পরিদর্শন শেষে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে তুরস্ক সরকার। একই সাথে নির্যাতিত মুসলিম রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানান তিনি। তিনি বিশ্ববাসীকে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া ও তাদের কাছে মানবিক সহায়তা পাঠানোর আহবান জানান। তিনি বলেন, আমাদের সবারই ছেলে-মেয়ে রয়েছে। রোহিঙ্গা নিষ্পাপ শিশুদেরকে আমরা এভাবে রেখে দিতে পারি না। আমরা এখানে এসেছি বিশ্ববিবেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে। তুরস্কের ফার্স্ট লেডি রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় অধিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নেও সহায়তা করবেন বলে জানান।

এদিকে কক্সবাজার থেকে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগানের উখিয়া-টেকনাফের যাতায়াত পথে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসন। একইভাবে তার পরিদর্শন এলাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

তুর্কি ফার্স্ট লেডিকে স্বাগত জানিয়ে সড়কগুলোকেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও যানজটমুক্ত রাখে স্থানীয় প্রশাসন।

বেলা আড়াইটায় তিনি কক্সবাজারের উদ্দেশে কুতুপালং ক্যাম্প ত্যাগ করেন। এ সময় ক্যাম্প এলাকাসহ আশেপাশে বিপুল পরিমাণ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিলেন।

কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি ম্যানেজমেন্ট কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুর জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি।

ক্যাম্পে তিনি ৪০ মিনিট সময় ছিলেন। তার সফর সঙ্গী ছিলেন তার ছেলে বিলাল এরদোগান, পরিবার ও সমাজ বিষয়ক মন্ত্রী ফাতেমা বাতুল সায়ান কায়া, ক্ষমতাশীন এ কে পি পার্টির উপ-প্রধান রওজা কাকজি কান, তুর্কি সহযোগিতা ও সমন্বয় সংস্থা (টিআইকা) এর প্রধান সরদার তুশাম, দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা (এজিএফ) প্রধান মুহাম্মাদ গুলোলো উগলু, রেড ক্রিসেন্টেরর মহাপরিচালক ইবরাহীম আলতান ও অন্যান্য কর্মকর্তাগণ।

সূত্র : আল মুজতামা

মিয়ানমারের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্নের আহবান বিশটিরও বেশি সংগঠনের

মুহাম্মাদ শোয়াইব : তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার আহবান জানিয়েছে ‘রবিততু উলামায়িল মুসলিমীন’, ‘জমইয়্যাতু আরকা’, ‘আল ইনসানিয়্যাহ’সহ বিশটির বেশি ইসলামি সংগঠন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে যোগদান করেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওলামায়ে কেরাম। মিশর, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, সুদান, ইরাক, লেবানন, মরোক্কোসহ আরও অনেক দেশ। পাশাপাশি তুরস্কে সক্রিয় বেশ কিছু ইসলামি সংগঠন। তারা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের উগ্র বৌদ্ধ সেনাবাহিনীর পৈশাচিক আক্রমণ ও গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও মিয়ানমারের ওপর কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের আহ্বান জানান।

সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের অংশগ্রহণে এই সম্মেলনে মিয়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করারও দাবি জানানো হয়।

নেতারা বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য ‘ইনসান ভাকফি’র সঙ্গে আমরা সবাই মানবিক সহায়তা অংশ গ্রহণ করব।

‘রবিততু উলামায়িল মুসলিমীন’ এর মহাসচিব শেখ মুহাম্মাদ বলেন, বিশটিরও অধিক বিভিন্ন ইসলামি ও মানবিক সংগঠন রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাঁচানোর জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান। পাশাপাশি মানবাধিকার রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, তথ্য সরবরাহের জন্য মিডিয়া ও মানবিক সাহায্যের জন্য বিভিন্ন সাহায্য সংস্থাকে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রবেশের অনুমতি দান করার আহবান জানান।

নেতারা বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসা, তাদের সব ধরনের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করা সবার ঈমানি দায়িত্ব। বিশেষত ইসলামি বিশ্বের জন্য এটা খুবই জরুরি।

তারা আরও বলেন, আমরা তুর্কি সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই। প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ভূমিকা খুবই প্রশংসনীয়। তিনি ইদের ছুটির সময় এই সঙ্কট নিয়ে বিভিন্ন মুসলিম দেশের নেতাদের সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এমনকি জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। এরদোগান বলেছেন, এ মাসের শেষে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুটি তুলবেন।

তাছাড়া তিনি গত মঙ্গলবার মিয়ানমারের সবচেয়ে ক্ষমতাবান রাজনৈতিক নেত্রী অং সান সূচিকে ফোন করেছিলেন। তার সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছেন।

ফোনালাপে এরদোগান অতিরিক্তি বাহিনী ব্যবহার না করার এবং বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি না করার প্রতি জোর দিয়েছেন। ফোনালাপে মি এরদোগান মিস সুচির কাছে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ নিয়ে উদ্বেগ এবং নিন্দা জানিয়েছেন।তিনি মিস সুচিকে বলেন- রোহিঙ্গা সঙ্কট পুরো মুসলিম বিশ্বের জন্য গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, “নিরপরাধ মানুষের ওপর সন্ত্রাসীর তৎপরতার নিন্দা করছে তুরস্ক। মিয়ানমারে যে মানবিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে সেটি উদ্বেগ এবং ক্ষোভের বিষয়।”

তুরস্কের সরকারি বার্তা সংস্থা আনাদলু জানিয়েছে, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে এবং কথা বলতে প্রেসিডেন্ট এরদোগান তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলুকে বাংলাদেশের পাঠিয়েছেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের অবস্থা স্বচোক্ষে দেখার জন্য একটি প্রাইভেট বিমানে করে ঢাকায় এসেছেন এরদোগানের স্ত্রী ও তুর্কি ফার্স্ট লেডি এমিনে এরদোগান।

সম্মেলনে নেতারা আরও বলেন, এসব মাজলুম মুসলমানকে এভাবে রেখে দিলে দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহর গজবের কারণ হতে পারে। বিশ্বনেতারা যদি এই ভয়ংকর গণহত্যা বন্ধ করতে না পারে তাহলে এটাই প্রমাণিত হবে, তারাও এতে শরিক রয়েছে। সব ইসলামি সাহায্য সংস্থা, এসোসিয়েশন অফ দ্য ইসলামিক ওয়ার্ল্ডসহ বিশ্বের সব ইসলামি সংস্থা, সংগঠন, আইন ও গণমাধ্যম সংগঠনসমূহের উচিত এসব দুর্বলদের সহযোগিতায় নিজেদের সর্বশক্তি ব্যয় করা।

আজকের জুমায় বিশ্বের সব দেশের খতিবদেরকে জুমার খুতবায় মিয়ানমার সম্পর্কে মানুষকে সর্তক করার এবং মানবিক বিপর্যয়ের কথা তুলে ধরার আহবান জানানো হয়েছে। সাথে সাথে প্রতিটি দেশে এই গণহত্যার প্রতিবাদে মিছিল মিটিং ও বিক্ষোভ আয়োজন করারও আহবান জানানো হয়েছে।

এই সম্মেলনে বিশটিরও অধিক ইসলামি সংগঠন মিয়ানমারকে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করার জন্য বিশ্ব নেতাদেরকে আহবান জানান। এসব সংগঠনের অন্যতম হলো, ‘রবিততু উলামায়িল মুসলিমীন’, ‘আল ইত্তেহাদুল আলামী লি উলামায়িল মুসলিমীন’, ‘রবিততু উলামায়ি আসিয়া’, ‘রবিততু উলামায়ি আফরিকা’, পাকিস্তানের ‘জমিয়তে ইত্তেহাদুল উলামা’, ‘আল হারাকাতুল ইসলামিয়া লিল মুহামাত’, সিরিয়ার ‘মাজলিসু শুরা আহলিশ শাম’, ‘হাইআতু উলামায়িল মুসলিমীন’ ও ‘রবিততু দুআতিল কুওয়িত’।

সূত্র : আল মুজতামা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ