উবায়দুল্লাহ সাআদ: ঢাকার জামেয়া মাদানিয়া বারিধারায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমীর আহ্বানে সমমনা ইসলামি দলসমূহের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর বর্বরোচিত হামলা, হত্যা, ধর্ষণ, উচ্ছেদ, লুটতরাজ ও বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বৈঠকে ৬ টি ইসলামি দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। দলগুলো হলো, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, মুসলিম লীগ ও ইসলামী ঐক্যজোট (রকীব)।
বৈঠকে বলা হয়, শত বছর যাবত দফায় দফায় রোহিঙ্গা নিধন মিয়ানমারের সরকার ও জনগণের একটা রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব সংস্থা ও দেশগুলো শুধু প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। মিয়ানমার সরকারের কাছে বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমারেখারও কোন মর্যাদা নেই। তাদের হেলিকপ্টার, গানশিপ বারবার আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে এবং তাদের বন্দুকের গুলি আমাদের দেশের অভ্যন্তরে পতিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের জনগণ চুপ থাকতে পারে না। অসহায় রোহিঙ্গাদের থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং মিয়ানমার সরকারের জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। পাশাপাশি আমাদের সিমান্তরেখা অবমাননা করার সমুচিত জবাব দিতে হবে।
উপস্থিত নেতৃবৃন্দ শিগগির মিয়ানমার অভিমুখে লংমার্চ, মহাসমাবেশ ও মিয়ানমারের দূতাবাস ঘেরাওসহ নানাবিধ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রাথমিকভাবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও শুক্রবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং ঘোষিত কর্মসূচি সফল করার জন্যে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গা মুসলমানদের আর্থিক সাহায্যে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ সভাপতি মাওলানা জহিরুল হক ভূঁইয়া, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, অর্থ-সম্পাদক মাওলানা মনীর হুসাইন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফূজুল হক, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান এডভোকেট মাওলানা এম এ রকীব, মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করীম, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা তাফাজ্জুল হোসেন ও খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরীয়ত মাওলানা শাহ আতাউল্লাহর ছেলে মাওলানা শাহ সানাউল্লাহ।
নেতৃবৃন্দ শিগগির আরও বড় কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে।
রোহিঙ্গাদের দেখতে বাংলাদেশে আসছেন এরদোগানের স্ত্রী
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনা দেখে সারা বিশ্ব উদ্বিগ্ন। সেই উদ্বেগ থেকেই রোহিঙ্গাদের দেখতে বাংলাদেশে আসছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়িব এরদোয়ানের স্ত্রী ও তুর্কি ফার্স্ট লেডি এমিনে এরদোয়ান।
বুধবার দেশটির উপ প্রধানমন্ত্রী হাকান কাভুসোগলু এ কথা জানিয়েছেন। তুর্কি ফার্স্ট লেডি বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশে পৌছানোর কথা রয়েছে।
জানা গেছে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রীর এএইচএম মাহমুদ আলীর সঙ্গে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করবেন। ঢাকা ত্যাগের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এমিনে এরদোয়ান।
গত ২৪ আগস্ট নতুন করে সহিংসতা শুরুর পরে জাতিসংঘের হিসাবে প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মঙ্গলবার এই বিষয়ে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।
মিয়ানমারের বড় শহরগুলোতে হামলার ছক
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তাদের দেশের অভ্যন্তরে জঙ্গি হামলা চালানোর জন্য বাইরের একটি দেশে বসে ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে আর এই উদ্দেশ্যে জঙ্গিদের তালিমও দেওয়া হয়েছে। তবে দেশটি কারা, তারা সেটি উল্লেখ করেনি। খবর বিবিসি বাংলার
প্রশাসনিক রাজধানী নেপিদও থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জারি করা একটি বিবৃতিতে জানানো হয়, বিদেশের মাটিতে বসে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে হামলা চালানোর এই ছক কষা হচ্ছে।
বিবৃতিতে মিয়ানমার সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে থাকে বলে বলা হয়েছে, এবং সেই দেশে কর্মরত মিয়ানমারের কিছু লোককে এই হামলায় কাজে লাগানো হচ্ছে বলেও দাবি করা হয়েছে। তবে সেই দেশটির নাম বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়নি।
এই বিবৃতির ভাষ্য অনুযায়ী, ষড়যন্ত্রকারী সেই দেশটি থেকে মিয়ানমারের কিছু লোককে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে মাসচারেক আগে তৃতীয় আরেকটি দেশে পাঠানো হয়েছিল বলেও তারা জানতে পেরেছে।
এই তালিমপ্রাপ্ত জঙ্গিরা ঘরে বানানো বোমা-বিস্ফোরক আর মাইন তৈরিতে দক্ষ হয়ে ফিরে এসেছে। এখন তারা মিয়ানমারে জঙ্গি হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও সেনাবাহিনী দাবি করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাখাইন প্রদেশের বুথিডং-মংটও অঞ্চলে ‘বাঙালি ইস্যু’তে যা ঘটছে, সে ব্যাপারে সারা দুনিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এই হামলাগুলোর ছক কষা হচ্ছে।
আর এই হামলাগুলো রাখাইন প্রদেশে নয় বরং নেপিদও, ইয়াঙ্গুন, মান্দালে বা মওলামাইয়িনের মতো দেশের বড় বড় শহরেই করার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে সেনাবাহিনী জানতে পেরেছে।