দ্বিতীয়বারের মতো মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সহিংসতার ঘটনা নিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তায়্যিব এরদোগানের সঙ্গে কথা বলেছেন সু চি।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সু চি। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির প্রধান ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির সঙ্গে মঙ্গলবার টেলিফোনে কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। টেলিফোনে আলাপকালে এরদোয়ানকে সু চি বলেন, তার সরকার রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, মানবাধিকার বা গণতান্ত্রিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করার মানে কি হয় তা আমরা অন্যদের তুলনায় বেশ ভালো ভাবেই জানি। আমাদের দেশের সব নাগরিকই তাদের অধিকার রক্ষার দাবিদার, এটা আমরা নিশ্চিত করেছি। এই অধিকার শুধুমাত্র রাজনৈতিক নয় বরং সামাজিক এবং মানবিক প্রতিরক্ষারও দাবিদার তারা।
সুচি দম্ভভরে এও বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর কোনো অত্যাচার হচ্ছে না। বরং সন্ত্রাসীদের স্বার্থে অনেক ভুল তথ্য বা অপপ্রচার চলছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে রোহিঙ্গা মুসলিম নির্যাতন এবং গণহত্যার ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন সু চি।
পশ্চিমা দেশ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে অং সান সু চি একবিংশ শতাব্দীর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। সু চিকে তারা এমন একটি আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন, যেখানে খুব কম মানুষই স্থান পায়।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে তিনি সম্মানীয় এবং পূজনীয় একজন ব্যক্তিত্ব। অনেকেই ভেবেছিলেন, সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে তার দল ক্ষমতায় আসলে দেশের পরিস্থিতি আমূল বদলে যাবে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র জাতি ও ধর্মীয় গোষ্ঠী তাদের অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারবে।
কিন্তু সু চি ক্ষমতায় আসার পরে রোহিঙ্গাদের ভাগ্যে আরো খারাপ পরিণতি ঘটেছে। আর এসব দেখেও নীরব ভূমিকা পালন করছেন এই নোবেল বিজয়ী নেত্রী। তার এমন নীরব অবস্থানকে মেনে নিতে পারছে না বিশ্ব।
সু চি এরদোয়ানের সঙ্গে ফোনে আলাপকালে বলেন, সন্ত্রাসীদের স্বার্থ প্রচারের জন্যই বহু ভুল তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি আরো বলেন, রাখাইন রাজ্যে সন্ত্রাস যেন বিস্তার লাভ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে তার সরকার।
সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নিপীড়ন থেকে বাঁচতে গত দু’সপ্তাহে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার রোহিঙ্গা। সীমান্তে পুলিশের চেক পোস্টে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন করে রাখাইনে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন চেক পোস্টে হামলা চালিয়েছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সু চির ইতিবাচক অবস্থান আশা করছিল বিশ্ব। কিন্তু তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বার বার তার সরকার এবং সেনা বাহিনীর পক্ষেই সাফাই গাইলেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সু চির এমন নীরব অবস্থানকে তার রাজনৈতিক দুর্বলতা হিসেবেই দেখছেন কূটনীতিকরা।