ভৌগোলিক কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা সহজ নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
আজ (বুধবার) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মালদ্বীপ এরইমধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। বাংলাদেশ এ রকম কিছু করবে কি না- জানতে চাইলে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘মালদ্বীপ ও মিয়ানমারের মধ্যে ভৌগোলিকভাবে যথেষ্ট দূরত্ব আছে। কিন্তু আমরা নিকট প্রতিবেশী।’
রোহিঙ্গা নির্যাতনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমার মায়ের বয়সী বৃদ্ধাকেও মিয়ানমারের নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য কোলে করে সীমান্ত পার করে এখানে নিয়ে আসা হচ্ছে। কোমলমতি শিশুরা বাঁচার জন্য কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে দলে দলে আসছে। দৃশ্যগুলো সত্যিকার অর্থে মর্মান্তিক। আমরা যেভাবে আশ্রয় দিচ্ছি, মানবিক সাহায্য দিচ্ছি এভাবে যদি বিশ্বের অন্য দেশগুলো দুর্যোগকে ভাগাভাগি করে নিত, তবে তাদের দুর্ভোগ অনেক কমে যেত।’
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির নোবেল পদক প্রসঙ্গে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এটা কি শান্তির নমুনা? তিনি কোন গুণাবলির কারণে শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন? নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা করা হচ্ছে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁর মধ্যে মানবিক গুণাবলি দেখছি না।'
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সু চির শান্তির নমুনা বিশ্ববাসী দেখেছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মানবিক দিক বিবেচনায় এ দুর্যোগ, দুর্ভোগ ভাগাভাগি করে নেওয়া উচিত। আমাদের সামর্থ্য সীমিত। মানবিক দিক বিবেচনায় যতটুকু সম্ভব, ততটুকু করেছি।’ এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্ববাসীর উচিত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো।’
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে দমন অভিযান শুরুর পর প্রতিদিনই হাজার রোহিঙ্গা বিপদসংকুল নদী ও সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার হিসাব মতে, গত ১৩ দিনে বাংলাদেশে দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
মিয়ানমার সরকারের বরাত দিয়ে জাতিসংঘ গত ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর গত এক সপ্তাহে ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৭০ জন‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী’, ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, দু’জন সরকারি কর্মকর্তা এবং ১৪ সাধারণ নাগরিক। তবে নীরিহ রোহিঙ্গা নিহতের সংখ্যা এর কয়েকগুণ বলে নিরপেক্ষ সূত্রগুলো মনে করছে।