আওয়ার ইসলাম : সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় আরব দেশগুলোকে প্রাচীন যুগের দাস-দাসীর মতোই বিক্রি হচ্ছে বিদেশি নারী গৃহকর্মীগণ। নানা প্রলোভন দেখিয়ে এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র্য দেশসমূহ থেকে নারী গৃহকর্মীদের নিয়ে এক মালিক বিক্রি করে দিচ্ছে অপর মালিকের কাছে।
এজন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ফেসবুকসহ অন-লাইন মিডিয়াগুলো। সম্প্রতি বিবিসের অনুসন্ধানে এমনটিই প্রকাশ পেয়েছে।
বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, তারা এমন একটি ফেসবুক গ্রুপের সন্ধান পেয়েছে যেখানে মানুষজন গৃহকর্মী চেয়ে পোস্টিং দিচ্ছেন। যেমন, এক ব্যক্তি তার পোস্টে লিখেছেন - ‘ডিসেম্বরে বিদেশ ভ্রমণে যাওয়ার আগে এক, দুই বা তিনমাসের জন্য জরুরি ভিত্তিতে একজন গৃহকর্মী প্রয়োজন।’
আরেকজন পোস্ট দিয়েছেন, ‘ভ্রমণ বা পর্যটন ভিসায় এসেছেন, এমন কাউকে গৃহকর্মী হিসাবে খুঁজছি। সর্বক্ষণ বাড়িতে থাকতে হবে।’
ইতিমধ্যেই বিষয়টি সৌদি সরকারের দৃষ্টিতে পড়েছে এবং তারা এ ব্যাপারে তদন্ত করছে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
সৌদি আরব এবং উপসাগরীয় দেশগুলোতে লোকজন রিক্রুটিং এজেন্টদের মাধ্যমেই সাধারণত বিদেশ থেকে নারী গৃহকর্মীদের আনে। অধিকাংশই আসে এশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু গরিব দেশ থেকে। তবে পাশাপাশি তৈরি হয়েছে অনলাইনে কালো বাজার।
বিদেশী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে কাতার-ভিত্তিক এমন একটি সংস্থা মাইগ্র্যান্ট রাইটসের বানি সরস্বতী বলছেন, ‘রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে গৃহকর্মী নিয়োগ অনেক খরচের ব্যাপার, অনেক মানুষ তাই অনলাইনে সোশ্যাল মিডিয়ার আশ্রয় নিচ্ছেন।’
একজন গৃহকর্মী নিয়োগের জন্য ২৫০০ থেকে ৫০০০ ডলার পর্যন্ত ফি দিতে হয়। অনলাইনে লোক পাওয়া গেলে, এই টাকাটা বাঁচে।
সৌদি আরবে অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন একজন বলেছেন, অনেক গৃহকর্মীও রিক্রুটিং এজেন্টকে পাশ কাটিয়ে কালো বাজারে কাজ নিতে আগ্রহী। ‘তারা বেশি মজুরী আদায় করতে পারে। যেহেতু তাদের মনিবদের রিক্রুটিং এজেন্টকে ফি দিতে হয়না, ফলে তারা কিছু বেশি মজুরি দিতে প্রস্তুত থাকে।’
নাওয়াল আল হাউসায়ি নামে একজন সৌদি নারী বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার ফলে বৈধ পথে গৃহকর্মী আনা কঠিন হয়ে পড়ছে। ‘গৃহকর্মীরা বৈধভাবে একবার ঢুকে পড়লে, সে চুক্তি ভেঙ্গে চাকরি ছেড়ে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অন্যত্র দ্বিগুণ মজুরীতে কাজ নিয়ে চলে যাচ্ছে।’
তবে একজন গৃহকর্মী বিবিসিকে বলেছেন, সময়মত বেতন না দেওয়া, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন বন্ধ না হলে, গৃহকর্মীরা পালিয়ে অবৈধভাবে হলেও অন্যত্র কাজ নেওয়ার চেষ্টা করবেই।
সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র খালেদ আবা আলখাইল বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে এধরণের অবৈধ রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি খোলা বেআইনি এবং এমন কাজে জড়িত লোকজনকে ধরতে পারলে তাদের বিচার হবে।
তিনি জানান, গত কমাসে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা এরকম ৯০টি বিজ্ঞাপন তদন্ত করা হয়েছে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি