ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল আরএসএস-সংশ্লিষ্ট ‘রাষ্ট্রীয় মুসলিম মঞ্চ’ আসন্ন ঈদুল আজহায় পশু কুরবানি না করে কেক কেটে ঈদ উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার লক্ষনৌতে এক সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রীয় মুসলিম মঞ্চের উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের আহ্বায়ক মুসলিমদের উদ্দেশে এ আহ্বান জানান।
আজ (বুধবার) গণমাধ্যমে প্রকাশ, সংগঠনটির আহ্বায়ক ঠাকুর রাজা রইসের দাবি, “রাসুল সা. বলেছেন, গাছপালা, পশু-পাখির ওপরে রহম করলে আল্লাহ্ তার ওপর রহম করবেন। তার আদেশ বিবেচনায় পশু কুরবানি হওয়া উচিত নয় কারণ তার প্রাণ রয়েছে।”
তাকে জিজ্ঞেস করা হয় গাছপালারও প্রাণ আছে তাহলে কি সবজিও খাওয়া চলবে না? কিন্তু তিনি এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি।
সংগঠনটির অওয়ধ এলাকার আহ্বায়ক ‘গাভী কুরবানি হারাম’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয় ইসলামে কি আগে থেকেই গরু, ছাগল কুরবানি নিষিদ্ধ রয়েছে? এ প্রশ্নে তিনি নিরুত্তর ছিলেন।
তাদের মতে, তিন তালাকের মতো পশু কুরবানিও নিষ্ঠুরতা। একুশ শতকে সমাজের নিষ্ঠুরতা থেকে বের হতে হবে বলে তাদের অভিমত।
মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের সহ-আহ্বায়কের দাবি, ঈদে কুরবানিকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের মধ্যে অন্ধবিশ্বাস ছড়িয়ে রয়েছে। মুসলিমরা নিজেদের ঈমানদার বলে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর পথে চলতে গিয়ে তারা বিভ্রান্ত হয়ে গেছে।
ঈদ উৎসবের মুখে উত্তর প্রদেশের মুসলিমরা সঙ্কটের মধ্যে রয়েছেন। রাজ্যটিতে অবৈধ পশুর নামে পুলিশ পশু ব্যাপারীদের ধরপাকড় করছে। প্রশাসনিক কঠোরতায় কুরবানির পশু মুসলিম সমাজের মানুষদের পর্যন্ত পৌছাচ্ছে না। এজন্য কুরবানি নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, অল ইন্ডিয়া জামিয়াতুল কুরেশির উত্তর প্রদেশ শাখার প্রেসিডেন্ট ডা. ইউসুফ কুরেশি উত্তর প্রদেশের মুখ্যসচিবের কাছে এক স্মারকলিপি দিয়ে কুরবানির পশু বিক্রেতাদের পুলিশ হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেছেন।
কুরেশি বলেন, ‘উত্তর প্রদেশে ছাগল এবং মহিষ কুরবানি হয়। এসব পশুর উপরে কোনোপ্রকার নিষেধাজ্ঞা নেই। তা সত্ত্বেও পুলিশ পশু ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে।’
গত বৃহস্পতিবার হাপুড়ে পুলিশ দু’জন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করাসহ তাদের ১০টি মহিষও আটক করে নিয়ে যায়। মিরাটেও এরকম ঘটনা ঘটেছে।
ইউসুফ কুরেশি বলেন, ‘৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কুরবানির পশু আনা ও নিয়ে যাওয়া লোকদের যাতে হয়রানি না করা হয় সেজন্য আমরা সরকারকে বলেছি। কারণ ইসলামে কুরবানি করা এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সরকারের উচিত মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতির কথা মাথায় রেখে কুরবানির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’
বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে সেখানে গো-রক্ষকদের সক্রিয়তা বাড়ায় নানাভাবে সমস্যার মধ্যে পড়েছে সেখানকার মুসলিমরা। রাজ্যে বন্ধ হয়েছে বেআইনি কসাইখানাও।