সাজিদ নূর সুমন : সম্প্রতি জাপানি গবেষকদের প্রকাশ করা এক রিপোর্ট অনুসারে গত কয়েক দশকে নানা কারণে সমগ্র বিশ্বজুড়েই ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। যে কারণে প্রতিবছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তর সংখ্যা এখন ৫০০ মিলিয়নে এসে ঠেকেছে। শুধু তাই নয়, বিশ শতকের পর থেকে প্রায় ১০০টা দেশে এই ভাইরাল ইনফেকশন প্রায় মহামারির আকার ধারণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে ঘরে বসেই ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা করা যেতে পারে, সে বিষয়ে জেনে নেওয়াটা কি জরুরি মনে হয় না?
একাধিক প্রকৃতিক উপাদানকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই ডেঙ্গু জ্বরকে কাবু করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সাধারণত যে যে উপাদানগুলোর প্রয়োজন পড়বে, সেগুলি হলো
পানি : ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে শরীরে পানির মাত্রা কমতে শুরু করে। তাই এই সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়া একান্ত প্রয়োজন। এমনটা করলে ডেঙ্গুর বেশ কিছু লক্ষণ নিমেষে কমে যায়, যেমন- মাথা যন্ত্রণা, পেশির ব্যথা বা ক্র্যাম্প, ডিহাইড্রেশন প্রভৃতি। প্রসঙ্গত, শরীরে পানির মাত্রা বাড়লে দেহে উপস্থিত টক্সিক উপাদানের মাত্রাও কমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ভাইরাল ইনফেকশনের প্রকোপ কমতে শুরু করে।
নিম পাতা : ডেঙ্গুর মতো ভাইরাল জ্বরের প্রকোপ কমাতে নিম পাতার কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে থাকা বেশ কিছু কার্যকরী উপাদান শরীরে প্লাটিলেট কাউন্ট বাড়ানোর পাশাপাশি শ্বেত রক্ত কণিকার মাত্রা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এখানেই শেষ নয়, দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলে ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রভাবকে দ্রুত কমিয়ে ফেলতেও নিম পাতা সাহায্য করে থাকে।
পেঁপে পাতা : প্লাটিলেট কাউন্ট বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরে ভিটামিন সি'র মাত্রা বৃদ্ধিতে পেঁপে পাতা দারুণভাবে কাজে আসে। সেই সঙ্গে দেহে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়িয়ে তুলে ডেঙ্গু জ্বরের নানাবিধ লক্ষণ কমাতেও এই প্রকৃতিক উপাদানটি সাহায্য করে থাকে। প্রসঙ্গত, প্রতিদিন পেঁপে পাতার রস খাওয়াতে হবে রোগীকে। তবেই উপকার মিলবে।
কমলা লেবুর রস : এতে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কমানোর পাশাপাশি ভাইরাসের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, কমলা লেবুর রস একদিকে যেমন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়, তেমনি শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিনকেও বার করে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রোগের প্রকোপ কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, কমলা লেবুতে উপস্থিত ভিটামিন সি কোষদের ক্ষত সারাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ফলে সার্বিকভাবে শরীর চাঙা হয়ে উঠতে একেবারে সময়ই লাগে না।
তুলসী পাতা : রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর মধ্যে দিয়ে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ কমাতে তুলসী পাতা দারুণভাবে কাজে আসে। সেই কারণেই বিশেষজ্ঞরা এমন রোগীদের নিয়মিত তুলসী পাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
মেথি : মেথি শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা কমাতে সাহায্যে করে এবং শরীরের ব্যথা নিরাময়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। ফলে নিশ্চিন্ত ঘুম হয়, যা শরীরকে দ্রুত সুস্থ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপযোগী।
পুদিনা পাতা : পুদিনা পাতা চিবিয়ে খাওয়া গেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি পুদিনার তেল ব্যবহার করলে মশা আশপাশে ঘেঁষবে না।
বার্লি পাতা : বার্লি পাতা চিবিয়ে খেলে তা শরীরের রক্ত উৎপাদনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে প্লাটিলেটের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
শাকসবজি : অলিভ, সয়াবিন, ব্রকোলি, ফুলকপি, টমেটো প্রভৃতি সবজি শরীরের রক্তের প্রবাহকে স্বাভাবিক রাখে ফলে রক্ত জমাট বাধতে পারে না। এর ফলে প্লাটিলেটের মাত্রাও সঠিক থাকে। তাই প্রচুর পরিমাণে সবজি খান।
গোল্ডেন সিল : এটি লাল বা হলুদ বর্ণের এক ধরনের ফলবিশেষ যার মধ্যে থাকা অ্যান্টিভাইরাল উপাদান শরীরে উপস্থিত ডেঙ্গুর ভাইরাস দমনে সাহায্য করে। এটি জ্বর, বমি বমি ভাব, ঠাণ্ডা, মাথা ব্যথা ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে। সূত্র : বোল্ড স্কাই
-এজেড