মুহাম্মাদ আতাউর রহমান মারুফ
রাজধানীর গুলশান এলাকায় অবস্থিত দেশের অত্যন্ত সু-পরিচিত ঐতিহ্যবাহী দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা। আশি'র দশকের শেষদিকে প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজব্দি এর মহাপরিচালক বর্ষীয়ান আলেমে দীন, শায়খুল হাদীস, উসতাযুল উলামা আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী। যিনি বাংলাদেশে দীনের সকল কাজ সমানভাবে আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।
আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী- যাকে বলা হয় ‘মানুষ গড়ার কারিগর’। দেশের শতশত শায়খুল হাদীস আর মুহাদ্দিসকে যিনি নিজ হাতে গড়েছেন। যিনি একজন সফল রাজনীতিবিদ। যিনি সিলসিলাপ্রাপ্ত একজন মুহাক্কিক পীর। তাঁর দীর্ঘদিনের সাধনার ফসল হল এই জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা। প্রাণাধিক প্রিয় এই জামিয়াকে টিকিয়ে রাখতে তাঁর সীমাহীন ত্যাগ ও কুরবানির ইতিহাস কারোর অজানা নয়।
দফায় দফায় মাদরাসার জায়গা দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে একদল কুচক্রী মহল। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে মাদরাসাকে জবরদখল করে দীর্ঘদিন পর্যন্ত হজুরকে দূরেও সরিয়ে রাখা হয়েছিল। তখন সব উসতায ও ছাত্রকে নিয়ে নিজহাতে গড়া প্রতিষ্ঠান ছেড়ে ঢাকার বিভিন্ন মসজিদে ঘুরে ফিরে যাযাবরি জীবন পার করার এক কঠিন গল্প রয়েছে আল্লামা কাসেমীর।
বছরের পর বছর ধরে চলে এসেছে মাদরাসার জমি নিয়ে নানা চক্রান্ত। যে কারণে এ পর্যন্ত মাদরাসার কোন স্থায়ী ভবন নির্মাণ করেননি ছাত্রমহলে ‘বাজি’ নামে পরিচিত আল্লামা কাসেমী। তবে গত রমযানের আগে আগে মাদরাসার জায়গা সংক্রান্ত একটি মামলা হাইকোর্ট খারিজ করে দেওয়ায় লোহার পিলার আর স্টিল সিস্টেমে নির্মিত মাদরাসার দুটি ভবন ভেঙে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করছেন এখানের পরিচালনা পর্ষদ।
সরাসরি দেওবন্দের অনুসৃত এ জামিয়ার শুরুর দিকের ছাত্ররা এখন দেশের শীর্ষ ইসলামি বিদ্যাপীঠগুলোর যিম্মাদারিতে রয়েছেন। এ জামিয়ার কিছু নিজস্বতা রয়েছে। রয়েছে চিন্তা চেতনার দিক থেকেও দেশের অন্য সব মাদারেস থেকে কিছুটা ভিন্নতা।
সিয়াসাত তথা ইসলামি রাজনীতি দীনের অপরিহার্য একটি বিষয়। যা ব্যতীত ইসলামের বহু বিধান কার্যকর করা সম্ভব নয়। তাই এ জামিয়ার উস্তাদগণ মনে করেন উলাময়ে কেরামের রাজনীতির মাঠে সরব উপস্থিতি দীনের জন্য ইসলামের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। তাই একেকজন ছাত্রকে পরিণত বয়সে হতে হবে একেকজন আদর্শ রাজনীতিবিদ। সেক্ষেত্রে ছাত্র অবস্থা থেকেই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। তাই তারা তা'লীমের পাশাপাশি তরবিয়তের অংশ হিসেবে ছাত্রদের হাতে কলমে রাজনীতি শিক্ষা দিয়ে থাকেন। যা বর্তমান সময়ানুপাতে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলেই বিবেচিত হয়েছে।
‘রাজনিতি করা নয়; বরং শেখা’ এ কথাকে সামনে রেখে এখানের ছাত্রদের নানাভাবে গড়ে তোলা হয় । শিক্ষা দেওয়া হয় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। এক্ষেত্রে তারা অনুসরণ করে থাকেন দারুল উলূম দেওবন্দের রাজনৈতিক প্লাটফর্ম ‘জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম’কে।
জমিয়তের অন্যতম সহযোগী সংগঠন 'ছাত্র জমিয়ত' এর ব্যানারেই সম্পন্ন হয় তাদের সকল সিয়াসাতি কার্যক্রম। প্রতিবছর রমযানের পর ভর্তি কার্যক্রম শেষে অত্র জামিয়ার স্বনামধন্য শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুকের বিশেষ নেগরানিতে সারা মাদরাসা থেকে বাছাইকৃত কিছু মেধাবী ছাত্র নিয়ে গঠন করা হয় ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বারিধারা ক্যাম্পাস শাখা। ১বছর মেয়াদি এই কমিটির মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে তরবিয়তী প্রোগ্রাম, প্রশিক্ষণ মজলিস, কর্মী সম্মেলন ও সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়। হাতে নেওয়া হয় ছাত্রদের কল্যাণে নানামুখী কর্মসূচি।
এই কমিটির অধীনে থাকে আরোও ২৫ টির মত শাখা কমিটি। যেগুলো গঠন করা হয় বারিধারায় অবস্থানরত ছাত্রদের নিজ নিজ জেলাকে কেন্দ্র করে। যে সব জেলার ছাত্র শতাধিক হয় সে সব জেলার নির্বাচিত কিছু ছাত্র নিয়ে গঠিত হয় ওই জেলার বারিধারাস্থ মূল কমিটি। আর বাকিদের নিয়ে থানা ভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়। পঞ্চাশোর্ধ ছাত্র হলে জেলার সবাইকে নিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়। পঞ্চাশের কম হলে কয়েক জেলা মিলে যৌথ কমিটি গঠন করা হয়। ছাত্রসংখ্যা এরচে'ও কম হলে বিভাগ ভিত্তিক বারিধারাস্থ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটির কাজ হয় ক্যাম্পাস শাখাকে সকল কাজে সহায়তা করা।
জেলার প্রত্যেকের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখা এবং প্রতিটা ছুটিতে এলাকায় গিয়ে কীভবে বেশিবেশি দীনের কাজ করা যায় ছুটির পূর্বে সবাই মিলে সেই প্লান প্রোগ্রাম করে যাওয়া। চলতি ১৪৩৮-৩৯ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র জমিয়ত বারিধারা ক্যাম্পাস শাখার কার্যক্রম শুরু হয় এক জাঁকজমকপূর্ণ নবীনবরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতে সেদিন জামিয়ার বরেণ্য উসতায মুফতী জাকির হুসাইন কাসেমীকে সভাপতি করে ৩২ সদস্য বিশিষ্ট ক্যাম্পাস কমিটি ঘোষণা করা হয়। তারপর সময়ে সময়ে ঘোষণা হতে থাকে বারিধারাস্থ বিভিন্ন থানা জেলা ও বিভাগীয় কমিটি। জেলার কিছু নির্বাচিত ছাত্র নিয়ে গঠিত হয় ময়মনসিংহ জেলা কমিটি। আর বাকি ছাত্রদের নিয়ে ঘোষণা হয় বারিধারাস্থ ময়মনসিংহের
থানা ভিত্তিক কমিটি।
জেলার সব ছাত্র নিয়ে একক কমিটি হয় টাঙ্গাইল। জামালপুর, শেরপুর, হবিগঞ্জ, নরসিংদী, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, রাজবাড়ি ও বি বাড়িয়ার। যৌথ কমিটি হয় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের।
সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের। গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরের। শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের।
ছাত্রসংখ্যা কম হওয়ায় বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুরের ছাত্রদের নিয়ে বারিধারাস্থ বিভাগ ভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়।
ইতোমধ্যেই ক্যাম্পাস শাখার পাশাপাশি বারিধারাস্থ সকল শাখা জোর গতিতে তাদের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার ভিত্তিতে আলেমরাই হবেন এ দেশের নেতৃস্থানীয় পদগুলোতে। আলেমরাই কায়েম করবেন সুন্দর স্বপ্নিল বাংলাদেশ।
কুড়িগ্রামে বন্যার্তদের খাবার দিচ্ছে কয়েকটি কওমি মাদরাসা