রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


নতুন জীবনে অভিনন্দন অনন্ত; এবার শুদ্ধতার প্রেরণা হোন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

 এ এস এম মাহমুদ হাসান
গণমাধ্যমকর্মী

ইসলামের শুভ সূচনা। গোপনেই চলছে ইসলাম প্রচারের কাজ। মক্কার কাফেরদের হিংস্রতার ভয়ে সদ্য মুসলিম সবাই সাবধানতা অবলম্বন করছেন আর বিশ্ব নবী রাসুলুল্লাহ সা. ক্রন্দন করছেন সে যুগের প্রভাবশালী ওমর অথবা আবু জাহেলের ইসলাম গ্রহণের জন্য।

ইসলামি আদর্শে বদলে যাওয়া জাহেলি ধারায় অতি জনপ্রিয়দের মাধ্যমে ইসলামের প্রচার প্রসার ও রক্ষণাবেক্ষনের সুবিধার কথা চিন্তা থেকেই রাসুলুল্লাহ সা. এর বিশেষ দোয়ার বরকতে ইসলাম গ্রহণ করেন জাহেলি যুগের দোর্দণ্ড প্রভাবশালী ব্যক্তি হযরত ওমর রা.। আর সেদিন থেকেই ইসলামের প্রচার হতে থাকল বলিষ্ঠ আওয়াজে।

এ যুগের জাহেলি পাড়ার জনপ্রিয় ব্যক্তি অনন্ত জলিল। নিজের অজান্তেই যুব সমাজে অশ্লীল ফ্যাশনের রোল মডেল বনে গিয়েছিলেন অনন্ত। কিন্তু হঠাৎ তার জীবনের পট পরিবর্তন হয়ে যায়। অন্ধকার, কুৎসিত সিনেমা জগত থেকে গুটিয়ে নেন নিজেকে। আত্মনিবেশ করেন ইসলাম শেখার কাজে। সভ্যতা, আদর্শ আর পরলৌকিক মুক্তির দিশা খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন দাওয়াত ও মেহনতের কাজে। সহচর্যে থাকেন আলেম উলামাদের।

ইসলামের অমীয় বাণী নিজে শিখছেন, তার অনুসারী ভক্ত অনুরাগীদের শিখাচ্ছেন। আহবান করছেন চির মুক্তির পথে। দাওয়াত দিচ্ছেন অনন্তকালের সুখ শান্তির জন্যে। ছুটে আসার আহবান করছেন জান্নাতের দিকে।

হযরত ওমর রা. ইসলাম গ্রহণের কারণে যেমন ইসলামের প্রচার ও ভিত্তি মজবুত হয়েছিল। জাহেলি পাড়ার ওমর ভক্তরা যেমন ছুটে এসেছিল ওমর রাঃ এর আহবানে। ঠিক তেমনি যদি এ যুগের বদলে যাওয়া শোবিজ তারকা অনন্ত জলিলের ডাকে ইসলামের খেদমত হয়, পাল্টে যায় অসভ্য অসংখ্য ভক্ত অনুরাগীর জীবন সাধনা। তাহলে ইসলামের ক্ষতি কিসের?

অনন্ত জলিল যদি জান্নাতের পথ ধরে আলো পায়। একজন জাহান্নামিও যদি চির মুক্তি পায় অনন্ত জলিলের বদলে যাওয়ার দ্বারা। তাহলে নিশ্চয় একজন ইসলামের প্রকৃত দা’য়ী হিসেবে অনন্ত জলিল সবার গর্বের। আল্লাহর দরবারে অতি প্রিয় একজন একনিষ্ঠ বান্দা।

অসৎ পথকে মাড়িয়ে জীবন সংগ্রাম করে নিশ্চয় অনন্ত আজ বদলে যাওয়ার পথ ধরেছেন। অনেকের মত হয়ত ওয়ারিস সূত্রে তিনি ইসলামের আলোর দিশা পাননি। তাই বলে তার সমালোচনা করে অনন্তের ইসলামের প্রতি আগ্রহকে বিনষ্ট করা আমাদের জন্য সঠিক কাজ হচ্ছে কি?

অনেকেই তার ছবি ছড়িয়ে পড়তে দেখে ‘ফটোশেসন’ বলে কিঞ্চিৎ মনের ক্ষোভ দমানোর কোশেশ করছেন। কিন্তু অনন্তর এই ছবিগুলো যে সাধারণের কাছে অনেক অনেক প্রেরণার তা লুকিয়ে রাখা সম্ভব না।

হতে পারে তিনি এখনো পুরোপুরো অসভ্য সিনেমা জগতকে ছাড়তে পারেননি। হতে পারে তিনি এখনো পুরো সুন্নাহর উপরে উঠতে পারেননি। তাই বলে আমরা সমালোচকরা তার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুকে নস্যাৎ করে আল্লাহর রাসুলের সা. বিরুদ্ধাচারণ করছি না তো ? প্রকৃত পক্ষে তিনি প্রতিনিয়ত নফসের সাথে জিহাদ করে শ্রেষ্ঠ মর্যাদায় আসীন হওয়ার গৌরবই অর্জন করছেন।

শত বাধা আর পেছনে ফেলে আসা অঢেল সম্পদের প্রাচুর্যতার মোহ ভঙ্গ করে দুনিয়াবী যশ খ্যাতি উপেক্ষা করে দ্বীনি পথে উঠে আসা এমন এক নাবিকের জন্য আমরা আজ অনুপ্রাণিত, গৌরবান্বিত। মহিমান্বিত ইসলামের পথে সব সমালোচনা দূরে ঠেলে দিয়ে এক আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য জীবনধারা পরিচালনা করার ব্যাকুলতা সত্যিই অবাক-বিস্ময়ের ব্যাপার। অনন্ত জলিলের মত বদলে যাওয়া ব্যক্তিত্বদের নিয়ে সমালোচকদের সমালোচনার দম্ভ চূর্ণ হোক। স্বগৌরবে এগিয়ে যাক সব আল্লাহ প্রেমিক অনন্ত জলিলেরা।

Image may contain: 30 people, people smiling, crowd

বদলে যাওয়া অনন্ত জলিলের সংগ্রাম

প্রতিদিন ভোরে ঘুম ভেঙেই নামাজ পড়ছেন অনন্ত জলিল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, আর সময় পেলেই হাদিসের বই অনন্তর হাতে, গাড়িতেও যাত্রাপথে পড়ছেন ইসলামি বই। অফিসের কাজের বিরতিতে কুরআনও পড়ছেন। আর সুযোগ পেলেই ছুটে যাচ্ছেন আলেমদের সান্নিধ্যে । গত এক বছর ধরেই চেষ্টা করছেন জীবন বদলাতে। দীক্ষা নিচ্ছেন ইসলামের।

গত ২৯ জুলাই থেকে টানা তিনদিনের জন্য ধানমন্ডি ৩২ নম্বর একটি মসজিদে তাবলীগ জামাতে অংশ নিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ইসলামি পোশাকে প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করেছেন তিনি। প্রকাশ করেছেন মসজিদের ভেতর তার নানা কর্মকাণ্ড। গত ২৯ জুলাই তিনি মসজিদে শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান। দুপুরের খাবার থেকে শুরু করে রাতের আহারও সারেন শিশুদের সঙ্গেই। এমন একটি ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে। সম্প্রতি তিনি নারায়নগঞ্জের একটি মসজিদে ৩ দিনের দওয়াতের কাজ শেষ করেছেন।

Image may contain: 4 people, people sitting

অনন্তের হঠাৎ কেন এই পরিবর্তন?

বিগত দেড় বছর ধরেই অনন্ত ইসলামের প্রতি অনুরাগী হয়ে ওঠেন। ইসলাম জানার প্রতি আগ্রহী হতে থাকেন। মূলত, গত ছয়মাস ধরেই তার মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসে । মূলত হজ থেকে ফেরার পরই। তিনি এখন যেটা করছেন তা হলো, ব্যবসার পাশাপাশি মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। এখন তিনি ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদের ইমামের তত্বাবধানে আছেন। সর্বশেষ গত তিনদিনও তিনি তাবলীগে ছিলেন।”

ঢাকাই চলচ্চিত্রে শাকিব খান ছাড়া যখন ঢালিউড অচল তখন হঠাৎ আবির্ভাব ঘটে অনন্তর। একের পর এক আলোচিত ও সমালোচিত চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও নির্মাণ করে তিনি দর্শকের কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছান। ২০১০ থেকে এ পর্যন্ত চারটি চলচ্চিত্রের প্রযোজনা ও দুটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন অনন্ত। সবকটিতেই নায়ক হিসেবে ছিলেন তিনি।

তার ব্যবসায়িক তালিকায় ২০১৭ ও ১৮ তে আরো ২টি সিনেমা সিডউলের তালিকায়। তবে আমরা দোয়া করি, যেন তিনি পুরোপুরি দ্বীনের পথে উঠে আসেন এবং অশ্লীল জগত থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে গুটিয়ে নেন।

“অনন্তের প্রতিজ্ঞা হচ্ছে, একজন সফল, দক্ষ ব্যবসায়ী ও চিত্রনায়ক হিসেবে তার যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি আছে তা দিয়েই তিনি ইসলাম প্রচারে ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে মানুষের জন্য ভূমিকা রাখবেন। তিনি তার সন্তানকে হাফেজে কুরআন ও বড় মুত্তাকি আলেম বানানোর নিয়তও করেছেন।

পেশাগত জীবনে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী অনন্ত জলিল সামাজিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে এ পর্যন্ত ৩টি এতিমখানা নির্মাণ করেছেন। মিরপুর ১০ এ বাইতুল আমান হাউজিং ও সাভার মধুমতি মডেল টাউনে আছে এতিমখানাগুলো। এ ছাড়াও সাভারের হেমায়েতপুরের ধল্লা গ্রামে সাড়ে ২৮ বিঘার উপর একটি বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন অনন্ত জলিল। তিনি ঢাকার হেমায়েতপুরে অবস্থিত বায়তুস শাহ জামে মসজিদের নির্মাণকাজেও অবদান রাখেন।

দাওয়াতের কাজ ভালোভাবে করতে সবার দুআ চাইলেন অনন্ত


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ