নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে শিগগিরই একটি রূপরেখা তুলে ধরার জন্য কাজ করছে বিএনপির হাইকমান্ড। এজন্য দলটির সংশ্লিষ্ট নেতা, বুদ্ধিজীবী এবং ২০ দলীয় জোটের শরিকদের লিখিত মতামত নিচ্ছে দলটি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি দল তাদের মতামত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে জমা দিয়েছে। বাকি দলগুলো এ সপ্তাহের মধ্যেই তাদের প্রস্তাবনা পেশ করবে। সবার মতামতের ভিত্তিতেই এটি চূড়ান্ত করা হবে। সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে বড় দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের অধীনে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে বিএনপি জোটের অধিকাংশ শরিক। এক্ষেত্রে সংসদ ভেঙে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করার ওপরও জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপেও এসব দল সহায়ক সরকারের বিষয়ে তাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরবেন বলে তাদের নেতারা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ২০ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের বিষয়ে তাদের মতামত জমা দিতে বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসব মতামতের ভিত্তিতেই বিএনপি তাদের রূপরেখার খসড়া চূড়ান্ত করবে। এটি চূড়ান্ত করার আগে আবারও জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে বলে বিএনপি মহাসচিবের পক্ষ থেকে আভাস দেয়া হয়। জোটের এ নেতার নির্দেশনা অনুযায়ী এরই মধ্যে কল্যাণ পার্টি, খেলাফত মজলিস, ডেমোক্র্যাটিক লীগসহ কয়েকটি দল তাদের প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে। অনেকেই সহায়ক সরকারের প্রস্তাবনা জমা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এ বিষয়ে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আবদুল জলিল জানান, সহায়ক সরকারের বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা বিএনপি মহাসচিবকে দেয়া হয়েছে। একই প্রস্তাবনা ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপেও প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তাবনায় নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভেঙে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছি। রাষ্ট্রপতি নিজে অথবা অন্য কাউকে প্রধান করে সাবেক এমপি অথবা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্য থেকে উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন বলেও প্রস্তাব করেছি। বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূইয়া বলেন, বিএনপি মহাসচিবকে দেয়ার জন্য সহায়ক সরকারের একটি প্রস্তাবনা প্রস্তুত করছি। কয়েক দিনের মধ্যেই তা জমা দেয়া হবে। তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তাবনায় যেসব বিষয় থাকবে তার মধ্যে রয়েছে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ১৯৯০ সালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরর মতো একটি সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, প্রধান দুই জোটের ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতিকে প্রধান করে দুই জোট থেকে প্রস্তাবিত ১০ জনের মধ্য থেকে পাঁচজন করে নিয়ে সরকার প্রতিষ্ঠা করা, সহায়ক সরকারকে ৩ মাসের জন্য সংসদের মাধ্যমে নির্বাচিত করা অথবা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করে দিয়ে রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে সহায়ক সরকার করা যেতে পারে। রাষ্ট্রপতি নবম ও দশম সংসদের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সহায়ক সরকার গঠন করতে পারেন। এক্ষেত্রে ওই সদস্যরা জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, আমরা ১২টি প্রস্তাবসংবলিত একটি রূপরেখা মির্জা ফখরুলের কাছে জমা দিয়েছি। আমাদের প্রস্তাব সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই রাখা হয়েছে। আমরা নির্বাচনকালীন ৩ মাসের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছুটিতে থাকার প্রস্তাব দিয়েছি। একটি মন্ত্রিসভা দাফতরিক কাজ করবে। তাদের কোনো পরামর্শ থাকলে তা লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতিকে জানাবে। রাষ্ট্রপতির নির্দেশ অনুযায়ী সব চলবে। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান জানান, সহায়ক সরকারের একটি প্রস্তাবনা আজ বিএনপি মহাসচিবের কাছে জমা দেয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছি তা হলো নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ ব্যক্তির অধীনে সহায়ক সরকার গঠন করতে হবে। এতে সুশীল সমাজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসিদের মধ্য থেকে প্রতিনিধি রাখা যেতে পারে। নির্বাচনের লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হলে বর্তমান রাষ্ট্রপতির অধীনেও সহায়ক সরকার গঠন করা যেতে পারে। নির্বাচনের সময় ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিয়ে সেনা মোতায়েনেরও প্রস্তাব করবেন বলে জাগপা সাধারণ সম্পাদক উল্লেখ করেন।
ডেমোক্র্যাটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি জানান, কয়েক দিন আগে বিএনপি মহাসচিবের কাছে তাদের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। এতে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান করে সহায়ক সরকার গঠনের কথা বলেছি। বিগত সরকারগুলোয় থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্য থেকে ৯ বা তার বেশি সংখ্যক সদস্য রাখা যেতে পারে ওই সরকারে। তবে সহায়ক সরকারে যারা থাকবেন, তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব বলেন, আমরা চাই, নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে রাষ্ট্রপতির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। তিনি (রাষ্ট্রপতি) সংসদ ভেঙে দিয়ে সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি সহায়ক সরকার গঠন করবেন। তবে এ বিষয়ে বিএনপিকে লিখিত কোনো মতামত না দিয়ে তাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে ইসলামী ঐক্যজোট একমত প্রকাশ করবে বলে তিনি জানান। এদিকে কয়েক দিন আগেই কল্যাণ পার্টির পক্ষ থেকে বিএনপি মহাসচিবের কাছে সহায়ক সরকারের বিষয়ে প্রস্তাবনা জমা দেয়া হয়েছে বলে দলটির মহাসচিব আমিনুর রহমান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূইয়া বলেন, শরিক দলগুলোর মতামত নিয়ে সহায়ক সরকারের রূপরেখার খসড়া চূড়ান্ত করবে বিএনপি। ঈদের পর এ নিয়ে শরিকদের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব আবারও বসতে পারেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান জানান, সহায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে কাজ করছে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর এটি চূড়ান্ত করা হবে। খালেদা জিয়া দেশের ফেরার পরই সহায়ক সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত এবং এটি প্রকাশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন।
সূত্র: পূর্বপশ্চিমবিডি