আওয়ার ইসলাম : ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলেও আছে ইসলামিক রাজনৈতি দল। সে রাজনৈতিক দলের বয়স প্রায় পঞ্চাশ বছর। তারা ইসরাইলের জাতীয় নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করে। ইসরাইলের সেই রাজনৈতিক দলের নাম ইসলামিক মুভমেন্ট ইন ইসরাইল।
ইসলামিক মুভমেন্ট ইন ইসরাইল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭১ সালে। শায়খ আবদুল্লাহ নিমার দরবেশ ইসলামিক ইসরাইল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দলটি গঠন করেন তিনি এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত টানা বিশ বছর এর নেতৃত্ব দেন। ১৯৯১ সালে ইসলামিক মুভমেন্টের নেতৃত্বে আসেন ইবরাহিম সারসুর।
১৯৯৬ সালে ইসলামিক মুভমেন্ট প্রথমবারের মতো ইসরাইলের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সিদ্ধান্তে বিতর্ক সৃষ্টি হয় দলের অভ্যন্তরে। দলের উত্তরাঞ্চলীয় শাখা যা ‘উম্মুল ফাহাম’ নামে পরিচিত ছিলো অংশগ্রহণের বিরোধিতা করলো এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় শাখা ‘কাফর কাসিম’ নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে অবস্থান নেয়। এ শাখাকে তুলনামূলক আধুনিক মনষ্ক বলা হয়।
হামাস ও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগে ২০১৫ সালে ইসরাইল সরকার উত্তরাঞ্চলীয় শাখাতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
১৯৭০ সালে শায়খ আবদুল্লাহ নিমার উচ্চ শিক্ষা সমাপ্ত করার পর ইসরাইলি মুসলিমদের মাঝে সমাজ সেবামূলক আন্দোলন শুরু করেন। এর অংশ হিসেবে তিনি স্কুল প্রতিষ্ঠা, চ্যারিটি হাউজ, মুসলিম মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থার করেন। এমনকি তিনি মুসলিম কিশোর-তরুণদের জন্য ইসলামিক ফুটবল লিগ প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৭৯ সালে ইসলামিক মুভমেন্টকে দমন করতে ইসরাইল সরকার শায়খ আবদুল্লাহ নিমার ও তার সহযোগীদের মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করে এবং ৩ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে। কিন্তু উল্টো দলের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। ১৯৮০ সালে ইসলামিক মুভমেন্ট ইসরাইলের মুসলিমদের মাঝে সাধারণ গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে।
১৯৮৯ সালে ইসলামিক মুভমেন্ট প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশগ্রহণেন সিন্ধান্ত নেয়। স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলের ৬ জন সিটি কাউন্সিলর বিজয়ী হন।
১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ইসলামিক মুভমেন্ট-এর ৪ জন এমপি নির্বাচিত হন।
এরপর দলের দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। ২০০১ সালে দক্ষিণাঞ্চলীয় শাখা ‘ইউনাইটেড আরব লিস্ট’ নামে পৃথক হয়ে যায়। এ অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হামিদ আবু দাব্বাস। আর উত্তরাঞ্চলীয় শাখা এখনো টিকে আছে ‘ইসলামিক মুভমেন্ট ইন ইসরাইল নামে।’ এ অংশের নেতা শায়খ রায়েদ সালেহ। তাকে কাল ইসরাইলি পুলিশ গ্রেফতার করেছে এবং তার ঘরবাড়িও ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। বস্তুত এ শাখার কার্যক্রম এখন ইসরাইলে নিষিদ্ধ।
দক্ষিণাঞ্চলীয় শাখা যারা উদার হিসেবে পরিচিত তারাও ইসরাইলে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। তাদেরকেও নানা অজুহাতে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা হচ্ছে এবং কার্যক্রমে বাঁধা সৃষ্টি করছে।
প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করলেও ইসলামিক মুভমেন্টের কিছু অর্জনও রয়েছে। যেমন, ইসলামিক মুভমেন্ট ইসরাইলের প্রধান শায়খ আবদুল্লাহ নিমার ১৯৬৭ সালের আরব ইসরাইল যুদ্ধের পর বাস্তুচ্যূত মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। এ সময় তিনি ও তার অনুসারীগণ ব্যাপকভাবে প্রসংশিত হন। এ সময় কিছু ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মেধাবী তরুণদের তিনি ইসরাইলি প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেন। তাদের দাবি ও আন্দোলনের ফলে ইসরাইল সরকার হাজিদের পাসপোর্ট দিতে সম্মত হয় এবং সৌদি আরব সে পাসপোর্ট গ্রহণ করে।