হাসান আল মাহমুদ : ভালো নেই যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমান। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রায় অর্ধেক মুসলমান গত কয়েক বছরে কোনো না কোনোভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এমনই এক জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য। জরিপটি চালিয়েছেন দেশটির গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার।
গবেষকেরা এক হাজার একজন মুসলমানের সেল্প ফোনে কথা বলে এই গবেষণা করেছেন। জরিপে অংশ নেওয়া তিন-চতুর্থাংশ মুসলমান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানরা ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। ৭৪ ভাগ উত্তরদাতা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁদের প্রতি ‘বিরূপ’ মনোভাব পোষণ করেন। ২০১১ সালে এ ধরনের গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, ৬৪ শতাংশ মুসলমান মনে করতেন, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁদের প্রতি বিরূপ ছিলেন।
জরিপে দেখা যায়, মুসলমানরা সামাজিকভাবে উদার হচ্ছেন। আগের তুলনায় বেশি লোক সমকামিতাকে গ্রহণ করার পক্ষে। ৪৮ শতাংশ মুসলমান বলেছেন, তাঁরা বিগত কয়েক বছরে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। অর্ধেক মুসলমান মনে করেন, মুসলিম হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকাটা আগের তুলনায় কঠিন হয়ে পড়েছে।
মুসলমানদের সন্দেহের চোখে দেখা হয় এ ধরনের বৈষম্যই সবচেয়ে বেশি হয়। ৩২ শতাংশ উত্তরদাতাই এ ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। ১৯ ভাগ মুসলমানকে বিমানবন্দরে আলাদা নিয়ে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ১৮ ভাগ উত্তরদাতাকে খারাপ নামে সম্বোধন করা হয়েছে। ১০ ভাগ মুসলমানকে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন আলাদা করে তল্লাশি করেছেন। ৬ ভাগ লোক শারীরিক আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
জরিপে অংশ নেওয়া এই অভিবাসী মুসলমানরা বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে তাঁদের আশপাশের পরিবেশ এবং লোকদের ব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হচ্ছে। নিজে কী পরিস্থিতিতে আছেন? পাশের লোকটি ইসলাম সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করেন? এ ধরনের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হয়।
পুরুষের তুলনায় নারী মুসলমানরা বেশি সংখ্যায় মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমান হিসেবে বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আর যাঁদের পোশাকে মুসলমান বোঝা যায়, বিশেষ করে হিজাব পরেন, তাঁরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বেশি।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৭ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় থেকে বৈষম্য বাড়তে থাকে। ২০১১ সালে বারাক ওবামার সময় কিছু কিছু ক্ষেত্রে বৈষম্য কমে আসে কিংবা একই পর্যায়ে স্থির থাকে। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে।
তবে এর বিপরীত চিত্রও আছে। জরিপের ৪৯ ভাগ উত্তরদাতা বলেছেন, ধর্মীয় পরিচয়ে বৈষম্যের বিপরীতে তাঁদের প্রতি সমর্থনও বাড়ছে।
গত নভেম্বরের নির্বাচনে বেশির ভাগ মুসলমান ডেমোক্রেটিক পার্টির হিলারির পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। ফলে খুব সম্ভবত ট্রাম্পের শাসনে তাঁরা ক্ষুব্ধ এবং মনে করছেন দেশ ভুল পথে এগোচ্ছে। ক্ষমতায় আসার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েকটি মুসলিমপ্রধান দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এটিকেও ভালোভাবে নেননি মার্কিন মুসলমানরা।
-এজেড