আওয়ার ইসলাম : ফারুকাবাদ থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে বুধবার এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শিকোহাবাদ-কাসগঞ্জ প্যাসেঞ্জার ট্রেনে ফিরছিল ওই মুসলিম পরিবারটি। সব মিলিয়ে দশ জন হবে। তাদের বাড়ি ফারুকাবাদ জেলায়। বিয়েবাড়ি থেকে সেখানেই ফিরছিলেন তারা। এসময় ট্রেনের ভিতরেই তাদের ওপর চড়াও হয় ৩০-৩৫ জনের একটি দল। লোহার রড, লাঠি নিয়ে হামলা চালানো হয়। বেধড়ক মারধর করা হয় সবাইকে। ছিনিয়ে নেয়া হয় গয়না, মোবাইল-সহ বিভিন্নজিনিসপত্র। মহিলাদের শ্লীলতাহানি করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের সবাইকে ফারুকাবাদের রামমোহন লোহিয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎকরা জানিয়েছেন, সবার মাথায় এবং পেটে গুরুতর আঘাত লেগেছে। হামলাকারীদের হাত থেকে পরিবারটিকে বাঁচাতে আহত হয়েছেন ট্রেনের বেশ কয়েক জন সহযাত্রীও।
ওই পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে থাকা বছর সতেরোর শারীরিক ও মানসিকভাবে ভারসাম্যহানী তরুণকেও ছাড় দেয়া হয়নি।
মোবাইল কেড়ে নেয়া থেকেই ওই গণ্ডগোলের সূত্রপাত বলে জানিয়েছে পুলিশ। এর পরেই দুর্বৃত্তরা পাশের কামরা থেকে সঙ্গীদের ডেকে আনে। তার পর, চেন টেনে নিবকারোরি স্টেশনের কাছে ট্রেন থামায়। সেই সময় ভয় পেয়ে যাত্রীরা কামরার সব দরজা-জানলা বন্ধ করে দেন। তখনই কামরার বাইরে থেকে শুরু হয় পাথর নিক্ষেপ। হঠাৎই আপৎকালীন জানলার কাচ ভেঙে কামরায় ঢোকে ট্রেনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েক জন যুবক। এর পরই শুরু হয় মারধর। তবে, অন্য একটি সূত্রের মতে এক নারীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা থেকেই ঘটনার সূত্রপাত।
এ ঘটনায় হাত ভেঙেছে পরিবারের প্রধান বছর পঞ্চাশের মহম্মদ শাকিরের। তার মাথাতেও গুরুতর আঘাত লেগেছে। পরে শাকির বলেন, ‘ওরা আমাদের ওপরে রড নিয়ে চড়াও হয়, নারীদের শ্লীলতাহানি করে। ছাড় দেয়নি আমাদের প্রতিবন্ধী ছেলেকেও। হামলার সময়ে ওরা বলছিল, এরা মুসলিম। এদের মার।’
শাকিরের ছেলে আরসান বলেন, ‘ওরা আমার মা ও বোনের জামাকাপড় ছিঁড়ে দিয়েছিল। সোনার গহনা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। এর পরেই ওরা পালিয়ে যায়।’
কামরার অন্য যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, ১০০ নম্বরে ডায়াল করেও কোনো লাভ হয়নি। প্রতি বারই ফোন কেটে দেয়া হয় বলেও অভিযোগ যাত্রীদের।
ফারুকাবাদের রেল পুলিশ সুপার ও পি সিংহ বলেন, ‘ওই পরিবারের চার জনের মাথায় আঘাত লেগেছে। এবং পরিবারের প্রত্যেকেই পেটে চোট পেয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৯৫ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে আরো ধারা যোগ করা হবে।’ উত্তরপ্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আইন আইনের পথেই চলবে।
গত ২২ জুন ট্রেনের ভিতরই দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়েছিল ১৭ বছরের জুনেইদ ও তার পরিবারের চার সদস্য। জুনেইদকে ছুরি মেরে খুন করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার দিন ইদের বাজার করে দিল্লি থেকে বাড়ি ফিরছিল তারা। হামলার আগে তাদের ‘দেশ বিরোধী’, ‘গরুর মাংস খায়’ ইত্যাদি বলে গালিও দিয়েছিল হামলাকারীরা।
গোরক্ষার নামে মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রবল সমালোচনায় মুখে উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের সরকার। চাপে পড়ে এ ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী। এমনকী, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদীও বলেছিলেন, ‘গোরক্ষার নামে মানুষ খুন বরদাস্ত করা যায় না। কেউই নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারে না।’ কিন্তু, হামলা থামেনি তাতেও।
-এজেড