শাহনূর শাহীন: সম্প্রতি রাজধানীর আদাবর রিং রোড এলাকার নিজ বাসা থেকে অপহরণের স্বীকার হন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার। অপহরণের পর খুলনা থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
ফরহাদ মজহার উদ্ধারের পর থেকেই তুমুল বিতর্ক চলছে আসলেই কি তিনি অপহৃত হয়েছন নাকি নিজেই নিজেকে ভিকটিম বানিয়েছেন। পুলিশের উদ্ধৃতিতে বাংলাদেশি গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ফরহাদ মজহার অপহৃত হননি, তিনি নিজেই অপহৃত হওয়ার নাটক করেছেন।
এ নিয়ে গতকাল বুধবার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে এক সাক্ষাৎকারদিয়েছেন।
সাক্ষাৎকার তিনি বলেছেন, তিনি অপহৃত হয়েছেন এবং অপহরণের পর তার সঙ্গে যা ঘটেছে তা তিনি প্রকাশ করতে ভীত নন। কোনো বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে দেয়া এটাই ফরহাদ মজহারের প্রথম সাক্ষাৎকার।
এদিকে পুলিশকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশি গণমাধ্যম বলছে, ফরহাদ মজহারের বক্তব্যের সাথে প্রাপ্ত তথ্যের কোনো মিল নেই। পুলিশের দাবি ফরহাদ মজহার অপরণ হননি বরং তিনি নিজেই তার কথিত ভক্ত প্রেমিকা অর্চনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন এবং তাকে টাকা দেয়ার জন্য মুক্তিপণ নাটক সাজিয়েছেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, অপহরণের পর যারা মুক্তি পান, তারা ফিরে এসে চুপ হয়ে যান কিন্তু তিনি চুপসে যাবেন না।। মানসিকভাবে এখনো ভীষণ বিপর্যস্ত আছেন জানিয়ে বলেন, কাজে ফিরে তিনি সব বলবেন এবং অপহরণের বিরুদ্ধেই সোচ্চার হবেন।
[caption id="" align="alignnone" width="541"] উদ্ধারের পর মেয়ে ও স্ত্রীর সঙ্গে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মজহার[/caption]
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দ্যা গার্ডিয়ানের দক্ষিণ এশিয়া প্রতিবেদক মাইকেল সাফি। দ্যা গার্ডিয়ানের সাক্ষাৎকার ভিত্তিক প্রতিবেদনে মজহারকে সরকারের সমালোচক এবং সরকারবিরোধী অ্যাকটিভিস্টদের মধ্যে অপহরণের সর্বশেষ শিকার ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে মজহার দাবি করেন, গত সপ্তাহে ভোর ৫টার দিকে তাকে অপহরণ করা হয়। তবে কে বা কারা বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে তুলে নেয় তা তিনি বুঝতে পারেননি। ‘সেদিন সকালে চোখে সমস্যা হচ্ছিল, তাই ওষুধ কিনতে বাড়ি থেকে বের হই। হঠাৎ তিন ব্যক্তি আমার পাশে এসে উপস্থিত হয় এবং আমাকে একটি সাদা মিনিবাসে (মাইক্রোবাস) তুলে নেয়।’
এদিকে পুলিশকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশি গণমাধ্যম বলছে, ফরহাদ মজহারের বক্তব্যের সাথে প্রাপ্ত তথ্যের কোনো মিল নেই। পুলিশের দাবি ফরহাদ মজহার অপরণ হননি বরং তিনি নিজেই তার কথিত ভক্ত প্রেমিকা অর্চনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন এবং তাকে টাকা দেয়ার জন্য মুক্তিপণ নাটক সাজিয়েছেন।
পুলিশের দাবি ফরহাদ মজাহার তার “উবিনীগ” নামের এনজিও’র সাবেক কর্মী অর্চনা রানী’র (২৮) সঙ্গে দেখা করতেই বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিলেন।
অর্চনা রানীর সঙ্গে ফরহাদ মজহার শারীরিক মেলামেশা করতেন। ২০০৭ সালে একবার গর্ভপাতের ঘটনাও ঘটে বলেও দাবি মহানগর পুলিশের এক তদন্ত কর্মকর্তার।
পুলিশের দাবি অর্চনা রানীর সাথে অপহরণের দিন ফরহাদ মজহার বেশ কয়েকবার ফোনে কথা বলেন। ফোনে অর্চনা রানী ফরহাদ মজহারকে অপহরণ হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি ঠিক আছেন বলে জানান এবং টাকা তাকে টাকা পাঠাবেন বলে বিকাশ নাম্বার চেয়ে নেন।
পরে ডাচ বাংলা একাউন্ট নাম্বার দিলে তাতে দুইবারে ১৫ হাজার টাকা পাঠান এমনটাই দাবি করছে পুলিশ। পুলিশ বলছে অর্চনা রানীর সঙ্গে ফরহাদ মজহারের এসব ফোনালাপের রেকর্ড পুলিশের হস্তগত হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ফরহাদ মজহারের জবানবন্দির সঙ্গে প্রাপ্ত তথ্যের মিল নেই। তদন্ত শেষে শিগগিরই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
উল্লেখ্য, গত (৩ জুলাই) ভোর সোয়া ৫টার দিকে রাজধানীর আদাবর রিং রোড এলাকার হক গার্ডেনের নিজ বাসা থেকে বের হওয়ার পরপর অপহৃত হওয়ার দাবি করেন ফরহাদ মজহার।
স্ত্রী ফরিদা আখতারের মৌখিক অভিযোগের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুলনা থেকে উদ্ধারের দাবি করে। ৪ জুলাই তাকে ঢাকায় আনার পর আদালতে নেওয়া হলে তিনি ১৬৪ ধারায় ভিকটিম হিসেবে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দেন।
এসএস/