শাহনূর শাহীন: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রস্তুতি শুরু করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এরই মধ্যে দলটি সারাদেশে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সেই লক্ষে পুরোদমে চলছে প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম।
ইসলামী আন্দোলনের বিভিন্ন দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনটি ধাপে চলছে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কার্যক্রম। আগামী নির্বাচনে জোরালো অবস্থান জানান দেয়ার জন্য খুব সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলছে দলটি।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি পীর সাহেব চরমোনাই নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও নির্বাচন বর্জন করে। নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সরব ছিল দলটি।
দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলান ইউনুস আহমাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী নির্বাচনকে সামনে নিয়ে তারা ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সারাদেশে প্রার্থী তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
ইতোমধ্যে ঢাকাসহ সারাদেশের প্রায় ৮০ ভাগ আসনের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের তিনশো সংসদীয় আসনকে আমরা তিনটি ক্যাটগরিতে ভাগ করে আলাদা আলাদা টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছি। এরমধ্যে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ আসনগুলোকে ‘এ’ প্রতিযোগিতামূলক আসনকে ‘বি’ এবং বাকিগুলোকে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ফেলে আমরা প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করছি।
অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা তিনটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি। প্রথমত স্থানীয়ভাবে প্রতিটি আসনের বিপরীতে ইসলামী আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলন ও মুজাহিদ কমিটির কাছ থেকে তিনজন প্রার্থীর নাম নিচ্ছি।
এরপর কেন্দ্রীয় কমিটি বিভিন্নভাবে তাদের ব্যাপারে সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা ও প্রভাব, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা, সাংগঠনিক দায়িত্ব ও দক্ষতা বিবেচনা করা হচ্ছে।
প্রার্থীর আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কেউ অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত কিনা এবং গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে আছে কিনা সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
শুধুমাত্র নির্বাচন কেন্দ্রীক জোটের ব্যাপারে ইসলামী আন্দোলনের আপত্তি আছে। কিন্তু ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে কেউ যদি প্রস্তাব করে আমরা তাকে স্বাগত জানাবো। তবে সেটা হতে হবে জোট-মহাজোটের বাইরে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার ভিত্তিতে
তৃতীয় ধাপে প্রার্থীর কাছে থেকে নির্বাচন কমিশনের ফরম অনুযায়ী প্রার্থীতার আবেদন করা হয়েছে। এটা এই জন্য যাতে, নির্বাচনের সময় মনোনয়নপত্র দাখিলে কোনো ভুল না হয়।
প্রার্থীতা আবেদনের পর প্রত্যেক প্রার্থীর আলাদা আলাদা সাক্ষাতকার নিয়ে একটি আসনের বিপরীতে একজন প্রার্থী চুড়ান্ত করে এবং একজনকে বিকল্প রেখে আমীরে অনুমোদনের জন্য প্রার্থী বাছাই কমিটির কাছে জমা রাখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ঢাকাসহ সারাদেশের প্রায় ৮০ ভাগ আসনের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
এ ব্যাপারে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য মুফতি দেলোয়ার হোসাইন সাকী বলেন, ইতোমধ্যে ঢাকা জেলাসহ ঢাকা বিভাগের সবগুলো আসনের প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। আগামী শুরার বৈঠকে বাকী আসনের প্রার্থী তালিকাও আমাদের হাতে চলে আসবে এবং এরপরই তিনশো আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চুড়ান্ত হবে।
তিনি বলেন, প্রার্থী তালিকা যাচাই বাছাইয়ের পরেও আমীরের নির্দেশনা অনুযায়ী উপযুক্ত সময় পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এরপর নির্বাচনের আগে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে ৩০০ আসনের চুড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।
অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ বলেন, বিভিন্ন জেলায় আমীর বা কেন্দ্রীয় কোনো দায়িত্বশীল স্থানীয়ভাবে কাউকে প্রার্থীতা হওয়ার ব্যাপারে ঘোষণা করলেও আমীরের চুড়ান্ত নির্দেশনা অনুযায়ী একসঙ্গে ৩০০ আসনের প্রার্থী তালিকা উপযুক্ত সম্ভাব্য সময়েই প্রকাশ করা হবে।
একান্ত আলাপচারিতার এক পর্যায়ে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ বলেন, শুধুমাত্র নির্বাচন কেন্দ্রীক জোটের ব্যাপারে ইসলামী আন্দোলনের আপত্তি আছে।
কিন্তু ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে কেউ যদি প্রস্তাব করে আমরা তাকে স্বাগত জানাবো। তবে সেটা হতে হবে জোট-মহাজোটের বাইরে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার ভিত্তিতে।
গতানুগতিক সস্তা জোটে ইসলামী আন্দোলন বিশাসী নয়। ইসলামী আন্দোলন চায় চিন্তার ঐক্য, আদর্শের ঐক্য। আদর্শের ভিত্তিতে বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠায় ইসলামী আন্দোলন বদ্ধ পরিকর।
এসএস/