পুলিশ কনস্টেবল পারভেজের বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতায় কুমিল্লার দাউদকান্দিতে প্রাণে বেঁচে গেছে দুর্ঘটনা কবলিত একটি বাসের অন্তত ৩০ থেকে ৩৪ জন যাত্রী। সেই সাহসিকতার বড় পুরস্কার পাচ্ছেন কনস্টেবল পারভেজ। হাইওয়ে রেঞ্জ ডিআইজি কর্তৃক ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার পাচ্ছেন তিনি।
উল্লেখ্য গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের গৌরীপুরে প্রায় ৩০ থেকে ৩৪ জন যাত্রী নিয়ে মতলবগামী বাস ‘মতলব এক্সপ্রেস’ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে ডোবায় পড়ে যায়।
এ সময় গৌরীপুরে দায়িত্বরত ছিলেন দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার কনস্টেবল পারভেজ মিয়া। তিনি গৌরীপুরে ডিউটি করাকালীন সময় হাইওয়ে রোডের পাশে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। হঠাৎ তার চোখে পড়ল একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে ডোবায় পড়ে গেছে। সে সাথে–সাথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পঁচা ও গন্ধযুক্ত ময়লা ডোবার পানিতে তাৎক্ষণিক লাফিয়ে পড়েন। যাত্রীদের প্রান বাঁচাতে তিনি প্রথমে দ্রুত গাড়ির জানালার গ্লাসগুলো ভেঙে দেন। জানালা ভেঙে দিলে গাড়ির ভিতরে থাকা যাত্রীরা সহজে বেরিয়ে আসেন।
তিনি বলেন- গাড়িতে আটকা পড়া যাত্রীদের উদ্ধার করার জন্য ময়লা পানিতে ডুব দিয়ে গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে ভেতর গিয়ে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ২৫ থেকে ২৬ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। তিনি আরো জানান- দূর্ঘটনায় কবলিত গাড়ির ভেতর আটকা পড়া ৫ থেকে ৬ মাসের একটি শিশুকেও তিনি কোন প্রকার ক্ষতি ছাড়াই উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
কনস্টবল পারভেজ যখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ময়লা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে দূর্ঘটনায় কবলিত যাত্রীদের উদ্ধার করছিলেন তখন তিনি ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষদেরকে উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানান। তার অনুরোধে সাড়া দিয়ে পরবর্তীতে কয়েকজন সাধারণ লোক তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে।
তিনি আরো জানান, একে-একে বাসের সব যাত্রীকে নিরাপদে বের করে আনার পর তিনি দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ’কে রেকার দিয়ে গাড়ি তোলার জন্য অনুরোধ জানান। রেকার দিয়ে গাড়ি ওপরে তোলার পর তিনি ময়লা পানিতে ডুব দিয়ে ভাল করে দেখেন কোন যাত্রী পানির নিচে আছে কিনা। পানির নিচে কোন যাত্রী না পেয়ে তিনি নিশ্চিত হন যে, বাসের মধ্যে থাকা সবাইকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে।
পারভেজ মিয়া জানান, যাত্রীদেরকে উদ্ধার করতে যেয়ে তার ডান হাতের দু’জায়গায় কেটে যায় এবং বাম হাতে ও বুকে ব্যাথা পান।
তিনি জানান, তার কর্মতৎপরতায় ও সাহসিকতায় হাইওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি পঞ্চাশ হাজার টাকা, কুমিল্লা রিজিয়ন হাইওয়ে পুলিশ সুপার পরিতোষ ঘোষ দশ হাজার টাকা ও স্থানীয় পেন্নাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পাঁচ হাজার টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করেছেন।
কনস্টবল মোঃ পারভেজ মিয়ার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার হোসেনদি গ্রামে। তিনি নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার হতে ৪২তম ব্যাচে প্রশিক্ষণ শেষে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তিনি বর্তমানে কুমিল্লা রিজিয়ন হাইওয়ে পুলিশের দাউদকান্দি হাইওয়ে থানায় কর্মরত রয়েছেন।
পারভেজ মিয়া জানান- আমরা বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের সেবা করার জন্য আমরা ২৪ ঘন্টা দায়িত্ব পালন করে আসছি। তাই জনগণের বিপদে নিজের জীবনের মায়া না করে ময়লা আবর্জনাযুক্ত পানিতে নেমে তাদেরকে উদ্ধার করেছি।
উদ্ধার করার সময় আমার একটি জীবনের চেয়ে বাসের মধ্যে থাকা ৩০ থেকে ৩৪ জন যাত্রীর জীবনের মূল্য আমার কাছে অনেক বেশি ছিল। তাই নিজের সাহসিকতা দিয়েই তাদেরকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে পেরেছি।
পারভেজ মিয়া আরো জানায়, দুর্ঘটনার সঙ্গে-সঙ্গে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পচা ও গন্ধযুক্ত ময়লা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাৎক্ষণিক যাত্রীদের উদ্ধারের ফলে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তার এ বীরত্বের জন্য উপস্থিত হাজারো মানুষ তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। খবর ডিএমপি নিউজ।
আরআর