উজানের ঢলে যমুনা নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে তিন জেলার নদী তীরবর্তী জনপদ। বন্যার কবলে পড়েছে বগুড়ার সারিয়াকান্দি, কুড়িগ্রামের তিন উপজেলা ও সিরাজগঞ্জের পাঁচটি উপজেলা। এসব উপজেলার নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের চর কৈজুরী গ্রামের সান্ত্বনা (৬) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি বাড়ায় অন্য নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। নিরাপদ আশ্রয় নিতে শুরু করেছে অসংখ্য মানুষ। অন্যদিকে মৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনা, সুরমা, কুশিয়ারা, কংস। তবে সুরমা ও কুশিয়ার পানি কমছে।
এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শাহজাদপুরের চর কৈজুরী গ্রামের সান্ত্বনা নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। যমুনার পানি বেড়ে জেলার কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, চৌহালি ও শাহজাদপুর উপজেলার চরাঞ্চলের ২৭টি এবং নদী তীরবর্তী আরও ১০ ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী ইউনিয়নগুলোর অন্তত দুই হাজার ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার ধান-পাটসহ উঠতি ফসল ও সবজি তলিয়ে গেছে। নদী তীরবর্তী অনেক পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় যমুনাসহ বিভিন্ন নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সারিয়াকান্দির চন্দনবাইশা, কামালপুর ও কুতুবপুর তিন ইউনিয়নের ১১টি গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি। পাশাপাশি ধনুট উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বপাশে শহরাবাড়ী, কয়াগাড়ী এবং ভাণ্ডারবাড়ী গ্রামের লোকজন আংশিক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে উঁচু এলাকা ও বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে। দেখা দিয়েছে খাবার পানি, টয়লেটসহ বিভিন্ন সমস্যা।
বগুড়ার সারিয়াকান্দির নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, সারিয়াকান্দির কুতুবপুর ও কামালপুরের বাঁধের পূর্বাংশে পানি প্রবেশ করেছে। এ ছাড়াও কনিবাড়ী ও বোহাইলের কিছু অংশে পানি প্রবেশ করায় এতে প্রায় ২ হাজার ৫শ’ পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার আশঙ্কায় মানুষ বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে। বেড়িবাঁধের ভেতর থেকে মানুষ সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে নদ-নদী তীরবর্তী চর ও দ্বীপ চরের দেড় শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে চিলমারী, উলিপুর ও সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। এসব এলাকার গ্রামীণ কাঁচা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এসব এলাকার মানুষজন নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় যাতায়াত করছে। নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট। চারণ ভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে এসব এলাকার মানুষজন। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম জানান, জেলার চরাঞ্চলের ৩৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকে বন্যার পানি উঠলেও চিকিত্সাসেবা অব্যাহত রয়েছে।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। অনেকের বসতঘরের ভেতর ও নিমজ্জিত রাস্তাঘাটের পানি নামতে শুরু করেছে। দুর্গত এলাকায় ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত নারী-শিশুসহ ২৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং পাঁচজন ভর্তি রয়েছেন। পানিবন্দি মানুষের মধ্যে রোগবালাই যাতে মারাত্মক আকার ধারণ করতে না পারে সে জন্য গত ১ জুলাই ১০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহম্মদ হোসেন জানান, একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের মেডিকেল টিম বন্যাদুর্গত ইউনিয়নে পানিবাহিত রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিচ্ছে। কিছু এলাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে তবে তা নিয়ন্ত্রণে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ রয়েছে। নতুন সময়