শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

খন্দকার মনসুর আহমদ : আলোকিত অন্তর্লোক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুস সাত্তার আইনী

তিনি লিখছেন গত পনেরো বছর ধরে- লিখবেন আরো বহুদিন- যতদিন বেঁচে থাকেন এই পৃথিবীর আলোতে। আমরা সাধারণত যাঁদের প্রবীণ বলি, সে-অর্থে প্রবীণ নন তিনি; কিন্তু তাঁর অভিজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা প্রবীণত্ব অতিক্রম করেছে। বিপুল বিষয় তাঁর অধীত, বহু অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ তাঁর চেতনা, আত্মভব উপলব্ধি পরিবেশনে তিনি কৌশল-নিপুণ। ইতিহাসের সঙ্গে তাঁর আন্তর যোগাযোগ, নবী-জীবন শিহরণ জাগায় তাঁর অভ্যন্তরে, নবীর সাহাবি-খলিফাগণও আলোক-উজ্জ্বল তাঁর বোধ ও বিশ্বাসে, তাঁর ভালো লাগে কুরআন-হাদিস থেকে আহৃত মুক্তার কারবারি। ঘটনাবহুল সমকালীনতা-বীক্ষণে তিনি পারঙ্গম এবং তিনি সুখ পান ব্যক্তিজীবনের সংবেদ-কাতরতায়। তাঁর আকাশে তিনি নিঃসঙ্গ নক্ষত্র, বহুবর্ণিল নিভৃত কোলাহলে তিনি নিমগ্ন, শুদ্ধি ও সিদ্ধির অন্বেষায় কাটে তাঁর সময়।

আমাদের হাতে আছে তাঁর চারটি বই : নির্বাচিত প্রবন্ধ; এ পৃথিবী একবার পায় তাঁকে; প্রিয়নবীর চার খলীফা; এবং প্রিয়নবীর অসিয়ত।

নির্বাচিত প্রবন্ধ : বইটি সম্পর্কে লেখক তাঁর প্রাক-কথনে লিখেছেন : ‘গত দশকের বিভিন্ন সময়ে নানা বিষয়ে আমি বেশ কতগুলি প্রবন্ধ লিখেছিলাম। বেশির ভাগ লেখাই বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। দু’চারটি সাপ্তাহিকে ও মাসিকে। সে সকল প্রবন্ধ থেকে বাছাই করে নানা স্বাদের আটাশটি প্রবন্ধ এবং অপ্রকাশিত দুটি লেখা দিয়ে এ গ্রন্থটি তৈরি করা হলো।

....তবে ভাষা যেহেতু নিজেকে অনবরত বদল করে চলে তাই আগের লেখা দু’একটি প্রবন্ধের ভাষা ও শিরোনাম কিছুটা বদলে দিয়েছি। আর সাধারণভাবে সব প্রবন্ধের গায়েই কলমের একটু-আধটু ছোঁয়া লাগিয়ে দিয়েছি।’

তাই এই বইয়ের প্রবন্ধগুলো হয়ে উঠেছে সুখপাঠ্য ও আলোসঞ্চারী। বইটির তিরিশটি প্রবন্ধ বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে : ঈমানের আলো ভাগে তিনটি; ইবাদতের উৎসব ভাগে চারটি; মাহাত্ম্য ভাগে একটি; পথনির্দেশ ভাগে দুটি; সেবা ভাগে একটি; জীবন, পৃথিবী, সমাজ ভাগে তিনটি; ভাষা ও সাহিত্য ভাগে দুটি; শিক্ষা-সংস্কৃতি ভাগে তিনটি; স্বাধীনতা ভাগে একটি; তাৎপর্য ভাগে তিনটি; মূল্যায়ন ভাগে দুটি; সান্নিধ্য ভাগে একটি; স্মৃতিচারণ ভাগে চারটি; এবং ভ্রমণ ভাগে তিনটি।

বোঝাই যাচ্ছে প্রবন্ধের বিষয়-বৈচিত্র্যে বইটি অনন্য এবং লেখকের শ্রেষ্ঠ লেখাগুলোর সংকলন। ইসলামি প্রকাশনার জগতে ‘নির্বাচিত প্রবন্ধে’র প্রচেষ্ট বিরল; তাই লেখকের এই প্রয়াস প্রমাণ করে তাঁর প্রাতিস্বিকতা এবং পাঠকের ভেতর জাগিয়ে তোলে একান্ত অনুভব। অফসেট পেপারে ছাপা ১৬০ পৃষ্ঠার নির্বাচিত প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে সত্যালোক প্রকাশনী এবং পরিবেশন করেছে মাকতাবাতুল আযহার। বইটির বিনিময়মূল্য সামান্য : একশো আশি টাকামাত্র।

এ পৃথিবী একবার পায় তাঁকে : বইটির শিরোনামই পাঠকের আকর্ষণ সৃষ্টি করে বইয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে এবং লেখকের আবেদনময় পটভূমিকা স্মৃতির আয়নায় পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশের পর পাঠক আহরণ করতে পারবেন নবী-জীবনের মণিমুক্তা। নবী-জীবনের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে রচিত বারোটি প্রবন্ধ আছে বইটিতে; প্রতিটি প্রবন্ধের রূপ ও ঘ্রাণ ভিন্ন ভিন্ন : এ পৃথিবী একবার পায় তাঁকে-এ ব্যঞ্জনা পেয়েছে এ-পৃথিবীতে নবীর আগমনের মহিমা ও তাৎপর্য, তাঁর আগমনের ফলে মানবতার পূর্ণতা, চারিত্রিক উৎকর্ষ ও মাকামে মাহমুদে নবীর অধিষ্ঠান; হৃদয়ের গভীরে মুদ্রিত তাঁর প্রেম-এ ব্যঞ্জনাময় হয়ে উঠেছে নবীজীর প্রতি সাহাবিদের ভালোবাসা, কিশোর ও নারীর ব্যাকুলতা, জীব-জন্তুর ভালোবাসা এবং নবীর প্রতি মানুষের চিরকালীন প্রেম; রসূলের মহব্বত ও আমাদের জীবন-এ বিবৃত হয়েছে রাসূলকে ভালোবেসে তাঁর অনুসরণ ও অনুকরণ, মানবজীবনের প্রতিটি সমস্যায় নবীজী-প্রদত্ত সমাধান মেনে নেওয়া, দরুদ পাঠ ও তাঁর সাহাবিদের প্রতি ভালোবাসা এবং এই উপমহাদেশের কয়েকজন মহান রাসূল-প্রেমিকের কথা; এবং এভাবে মহানবীর সুন্নাহ : সভ্যতার আলোকিত পথ; যে পথে বিজয় এনেছিলেন মহানবী সা.; মহানবীর বাণীতে হৃদয়ছোঁয়া উপমা; আলোকিত সমাজের জন্য; আরশ-দেশে প্রিয়নবী সা.; অনন্য অলৌকিকতার দীপ্ত প্রতীক; একটি শান্তিময় পৃথিবীর জন্য; হাদীসের আলোয় প্রিয়নবীর শিক্ষা ও বৈশিষ্ট্যের নানা দিক; এবং প্রিয়তমের কদম মোবারকের কাছে- প্রতিটি প্রবন্ধে বিবৃত হয়েছে অন্ধকার ও অশিষ্টের বিরুদ্ধে নবীজীর সংগ্রাম, আলোকিত সভ্যতার জন্য নবীজীর অবদান, তাঁর জীবনজুড়ে ঘটে যাওয়া অলৌকিক ঘটনাবলি, শিক্ষার প্রতি নবীজীর প্রেরণা ও নির্দেশনা এবং শেষ প্রবন্ধটিতে আছে নবীজীর প্রতি লেখকের গাঢ় প্রেম থেকে উৎসারিত দীর্ঘ পাঁচটি কবিতা।

বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে সীরাতচর্চার অগ্রপথিক মাওলানা মুহিউদ্দিন খানকে এবং বইটির শুরুতে জুড়ে দেওয়া হয়েছে লেখককে পাঠানো তাঁর একটি পত্র। অফসেট পেপারে মুদ্রিত ১২৮ পৃষ্ঠার এই বইটিও প্রকাশ করেছে সত্যালোক প্রকাশনী এবং পরিবেশন করেছে মাকতাবতুল আযহার। বইটির দাম তার পৃষ্ঠাসংখ্যার চেয়ে ২৮ টাকা কম : একশো টাকামাত্র।

প্রিয়নবীর চার খলীফা : বইটি প্রথম প্রকাশ করেছিলো মদীনা পাবলিকেশান্স, ২০০২ সালে, দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হলো এই বছরের র্ফেরুয়ারিতে এবং ইতোমধ্যে বইটির মুদ্রিত প্রায় সব কপিই চলে গেছে পাঠকের হাতে। বইটি ছোটোদের জন্য লেখা, কিন্তু বড়দেরও প্রিয়। লেখকের কথায় লেখক বলেছেন, ‘নির্ভরযোগ্য ইতিহাসের আলোকে কচি-কাঁচাদের কাছে মহান সাহাবীদের উজ্জ্বল জীবনাদর্শ তুলে ধরা আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য। এই কর্তব্যবোধের ফলেই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস- প্রিয়নবীর চার খলীফা।

.... শিশুদের জন্য লেখা খুব সহজ কাজ নয়। বড়োদের জন্য লেখার চেয়েও অনেক দায়িত্বপূর্ণ কাজ এটি।’ এই দায়িত্বপূর্ণ কাজটিই খন্দকার মনসুর আহমদ অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন এবং চার খলীফার জীবনকে শিশুতোষ রচনাশৈলীতে পরিবেশন করেছেন। বইটি ছোটোদের আদর কুড়াবে যেমন, তিমনি পাবে বড়দের যত্নও। বইটিতে চার খলীফার জীবন-কাহিনী শিরোনাম-উপশিরোনামে ভাগ করে পরিবেশন করা হয়েছে যা বইটি থেকে তথ্য ও জ্ঞানরস আহরণে সব শ্রেণীর পাঠকেরই সহায়ক হবে।

শুরুতে মরহুম সৈয়দ আলী আহসানের অনবদ্য ভূমিকা বইটির মূল্যায়নে ভিন্নতর মহিমা সংযোজন করেছে। তিনি বলেছেন, ‘খন্দকার মনসুর আহমদ যে আন্তরিক দরদ দিয়ে রসূলের খলীফাদের কাহিনী লিখেছেন তা অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের হৃদয় স্পর্শ করবে। আমি মনে করি তাঁর চেষ্টায় তরলমতি ছেলে-মেয়েদের মানসিক উন্নতি ঘটবে এবং তারা সত্যপথের সাধক হবে।’ সত্যপথের সাধক হতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই সত্যপথের সন্ধান পেতে হবে এবং আমরা তা পেতে পারি প্রিয়নবীর চার খলীফা থেকেই। অফসেট পেপারে মুদ্রিত ১১২ পৃষ্ঠার এই বইটির দামও একশো টাকা এবং এটিও প্রকাশ করেছে সত্যালোক প্রকাশনী আর পরিবেশন করেছে মাকতাবাতুল আযহার।

প্রিয়নবীর অসিয়ত : এই বইয়ের শেষে সংযোজিত পুস্তিকার নাম : হজ্জ কার ওপর ফরয? এই পুস্তিকাটি নিয়েই বইটির পূর্ণাঙ্গ রূপ দাঁড়িয়েছে। নিঃসন্দেহে বইটি সাধারণ মুসলমানের জীবনচলার পাথেয়-ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করবে। আমাদের দৈনন্দিন জীবন-যাপনে, লেনদেন ও শিষ্টাচারে, ইবাদত ও পরকাল-চর্চায় রাসূলের অমূল্য উপদেশবাণী ধারণ করে বইটি গড়ে উঠেছে। শিরোনাম ও উপশিরোনামে ভাগ করে রাসূলের পবিত্র কথামালা উপস্থাপন করা হয়েছে।

শিরোনাম : ঈমান, আমল ও আখলাক; ফযীলত; হককুল ইবাদ; রমযান, রোযা ও ঈদ; এবং অমূল্য উপদেশ। প্রতিটি হাদিসের আরবি ভাষ্য উল্লেখ করা হয়েছে এবং টীকায় উৎস নির্দেশ করা হয়েছে। তাই লেখকের বক্তব্য হয়ে উঠেছে প্রমাণ-ঋদ্ধ ও বিশ্বাস-গ্রাহ্য। প্রিয়নবীর অসিয়তের ব্যাপ্তি ১৩৮ পৃষ্ঠা পর্যন্ত এবং তারপর ২২৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত হজ্জ কার ওপর ফরয। সংযোজিত পুস্তিকাটিও যে-কারো জন্য অমূল্য সংগ্রহ হয়ে থাকবে। পুস্তিকাটির ভূমিকায় লেখক লিখেছেন, হজ্জ সম্পর্কিত এ আলোচনাটি যদিও প্রিয়নবীজীর অসিয়তমূলক একটি হাদীসের সূত্রেই এসেছে, তবুও নানা বিষয় নিয়ে দীর্ঘ হয়ে যাওয়ায় আলোচনাটি আলাদা পুস্তিকারূপেই সংযোজিত হলো। আশা করি এ পুস্তিকা থেকে নানা শ্রেণীর পাঠক অনেক অজানা বিষয় জানতে পারবেন এবং উপকৃত হবেন।’

লেখক যা আশা করেছেন তা যথার্থ; পাঠক অজানাকে জানার আনন্দ পাবেন এবং লাভ করবেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের সহজ উপায় । পুস্তিাকটির অনেকাংশে প্রশ্নোত্তরের কাঠামোতে আলোচ্য বিষয় বিবৃত হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া বাংলাদেশ, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার এবং জামিয়া আরাবিয়া এমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ কর্তৃক প্রদত্ত বেশ কয়েকটি ফতোয়া প্রমাণাদিসহ উল্লেখ করা হয়েছে। ফতোয়াগুলো এই পুস্তিকার মূল্যবান সংযোজন। হজের বিধি-বিধান ও ফযিলত সম্বলিত এই পুস্তিকাটি হাজি ও মুয়াল্লিম সাহেবদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। একের-ভেতর-দুই বইটির দাম দুইশো বিশ টাকা এবং প্রকাশ ও পরিবেশনায় আছে- আগের তিনটি বইয়ের মতই- সত্যালোক প্রকাশনী ও মাকতাবাতুল আযহার।

খন্দকার মনসুর আহমদের বইগুলো পড়লেই পাঠক তাঁর আলোকিত অন্তর্লোকের সন্ধান পাবেন। হাদিসের পাঠদানের পাশাপাশি তিনি নিভৃত সাধক ও স্রষ্টার মহিমার অভিসারী। তাঁর জ্ঞান ও চেতনা এবং বোধ ও বিশ্বাস কুরআন-হাদিস জারিত ও আকাবিরদের সাহচর্যপুষ্ট। আত্মশ্লাঘা ও আত্মপ্রচারে তিনি সময় বিনাশ করেন না এবং এসব তাঁর জন্য উপযোগীও নয়। সব বৃত্তের বাইরে তিনি আছেন আপন বৃত্তে, তিনি খন্দকার মনসুর আহমদ, তাঁর মত আর কেউ নেই।

লেখক: প্রাবন্ধিক, অনুবাদক

‘হাফেজ্জি হুজুর আব্বাজানকে বললেন, তুমি বিকল্প প্রাইমারির ব্যবস্থা করো’


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ