রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


আল্লামা আশরাফ আলী ও আল্লামা আনোয়ার শাহ'র ঈদস্মৃতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ঈদে নতুন জামা-কাপড় পেলে খুব খুশি হতাম

শাইখুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী
শাইখুল হাদিস, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
প্রিন্সিপাল, জামিয়া শরঈয়্যা মালিবাগ

‘ঈদ’ মুসলিম জাতির ঐতিহ্যবাহী উৎসবের দিন। জাতীয় খুশির দিন। এ দিনটি আমাদের বৃদ্ধ বয়সে যেমন খুশির দিন; ছোটবেলায় আরও বেশি খুশির দিন ছিল। তখন ঈদের আগের দিন থেকেই ঈদের আমেজ শুরু হতো। বাড়ি বাড়ি আনন্দ উল্লাস হতো। এদিনে একে অন্যের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন হতো। অন্যায় কাজ ছাড়া ভালো কাজ বেশি বেশি করা হতো। খানাপিনা মেহমানদারী ছিল আমাদের সময়ে বড় বিষয়।

ঈদে নতুন জামা-কাপড় পেলে খুব খুশি লাগতো। এখন বুড়ো বয়সেও নতুন কিছু পেলে আনন্দ পাই। এ আনন্দ সাধারণত সবাই পেয়ে থাকে। ছোটবেলায় সে অনন্দের মাত্রাটা ছিল অনেক। আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো থাকায় প্রতি ঈদেই আল্লাহর রহমতে নতুন জামা পেতাম।

ছোটবেলায় আব্বার সাথে ঈদের নামাজ পড়তে যেতাম। উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে নামাজ আদায় করতাম। নামাজ শেষে বাড়িতে এসে ভালো খাবার খেতাম। এখন ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা মুরব্বিদের থেকে ঈদ সালামি নিয়ে থাকে। আমাদের সময়ে সেটা ছিল না। বড়রা যে ছোটদের ঈদসালামি দিয়ে থাকে- আমার কাছে বিষয়টা উদারতার পরিচয় বহন করে। স্নেহ-ভালোবাসা থেকে এমনটা হয়ে থাকে। এতেকরে নিষ্পাপ ছেলেমেয়েরা অনেক খুশি হয়। পুরোটা দিন তাদের আনন্দে কাটে।

বর্তমান সমাজে ঈদের দিনে অনেক খারাপ কাজ হয়ে থাকে। রাস্তা-ঘাটে নাচ-গানের আসর জমে। বেগানা যুবতীরা বেহায়ার মতো বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। আমাদের মনে রাখা উচিত- মানুষের জীবনটা স্বাধীন নয়। আমাদের জীবন নিয়ন্ত্রিত। আনন্দ খুশি সীমার ভেতরে থেকে করতে হবে। হিসাব করে করে করতে হবে। কারণ, আমার প্রতিটি কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তাই বলব- ঈদের আনন্দ উপভোগ করুন, তবে সকল প্রকার গুনাহ থেকে মুক্ত থেকে। আল্লাহ আমাদের বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

ঈদের দিন সাইকেলে করে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতাম

হজরত মাওলানা আযহার আলী আনোয়ার শাহ
প্রিন্সিপাল, জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ

ছোটবেলার কথা যতটুকু মনে পড়ে- আমাদরে সময়ে এত বেশি প্রাচুর্যের দিকে আকর্ষণ ছিল না। তবে ঈদ উপলক্ষে কৈশর জীবনের যে একটু-আধটু আনন্দ হয়ে থাকে তা উপভোগ করতাম। তাও বেশি না; আমার একটা সাইকেল ছিল, তাতে করে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতাম। একসঙ্গে কিছুক্ষণ ঘুরতাম। এছাড়া মোটামুটি বাসাতেই থাকতাম ঈদের দিন। আব্বা ‘মরহুম’ থাকায় বাইরে ঘুরাঘুরির তেমন সুযোগও ছিল না। এভাবেই বড় হয়েছি।
বর্তমানে ঈদের দিন যে আনন্দ-উল্লাস করা হয় তা আমাদের সময়ে ছিল না। ঈদের মূল বিষয় ছিল- ঈদের জামাত আদায় করা। তারপর বাড়িতে গিয়ে একটু ভালো খাওয়া দাওয়া করা।
ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন জামা-কাপড়ের আবদার ছিল না। তবে ১২ বছর বয়সে যখন তারাবিহ পড়ানো শুরু করি সেসময় সাতাশ রমজানে তারাবিহ শেষ করে যখন বাড়িতে আসি তখন অন্যরকম একটা আনন্দ লাগত। মনের মধ্যে ঈদের অনুভূতি তৈরি হত। বাড়িতে আসার পর থেকেই ঈদের জন্য কিছুটা অপেক্ষা থাকতো। এখন ঈদের রাতে খুব একটা ঘুম হয় না। ঈদের দিনে রাস্তা ঘাটে যা অবস্থা হয়- জোহর পর্যন্ত শুয়েই থাকি। নাতি-নাতনি আছে, তারা আনন্দ উল্লাস করে। ঈদের দিনে তারা সামান্য টাকা পয়সার আবদার করে। তাদের আবদার পূরণ করি। এটা করে নিজে আনন্দ পাই। তারাও বেশ খুশি হয়।

একটি ঘটনা মনে পড়ে- তখন পাকিস্তান আমল। সরকারে ছিল আইয়ুব খান। সে সময় ঈদের ঘোষণা দেয় হতো রেডিওয়ের মাধ্যমে। একবার ঈদের আগের দিন ঈদের ঘোষণা দিলেন সরকার। আব্বা (হজরত মাওলানা আতহার আলী রহ.) সেটা মানলেন না। সবাইকে নিয়ে ঈদ করলেন পরের দিন। এতে করে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। তখন কিছু সরকারি মৌলভি সরকারের সাথে মিলেছে। আব্বা তার উসুলের উপর ছিলেন। হক্কানী আলেম উলামসহ দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণ তখন আব্বার সাথে একাত্ম পোষণ করে রমজানের ৩০ তারিখ রোজা রেখে পরের দিন ঈদুল ফিতর পালন করেছিল।

শ্রুতি লিখন : আমিন ইকবাল


সম্পর্কিত খবর