মুহাম্মাদ ইনআমুল হাসান
কাতার প্রবাসী
অন্যান্য দিনের মত গত বারের ঈদের দিনও ফজরের নামাযের পর বিশ্রামের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ ফোনকল এলো এক সাথীর কাছ থেকে, ঈদের নামায কোথায় পড়বো সেটা জিজ্ঞেস করার জন্য তার এই ফোনকল। তখনই খেয়াল হলো, ওহহো, আজতো ঈদুল ফিতর!
কাতারে যেহেতু সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই ঈদের জামাত আরম্ভ হয় সেহেতু দেরি করার কোনো সুযোগ ছিলোনা। দ্রুত প্রস্তুত হয়ে বের হলাম ঈদগাহের উদ্দেশে।
যথা সময়ে জামাত হলো। জামাতের পর কোলাকুলিও হলো। কিন্তু দেশের মাটিতে ঈদের জামাতে অংশ গ্রহণের জন্য যে ব্যকুলতা থাকে, জামাত শেষে কোলাকুলির মাঝে যে প্রফুল্লতা ও আন্তরিকতা থাকে- তা কোথায় মিলবে কাতারের এই ধুসর মরুতে!
ঈদের নামাযের পর ঘুম...। একেবারে সাড়ে বারোটায় উঠলাম নাঈম ভাইয়ের ফোনকলে। বেচারার মনটা ভীষণ খারাপ। একেবারে কাঁদোকাঁদো গলায় কথা বলছিলেন বলে মনে হলো আমার কাছে। জিজ্ঞেস করলাম এর কারন। তিনি বললেন, ভাই, বাসায় কথা বলার জন্য কল করেছিলাম। কিন্তু আম্মুর সে কি কান্না! কান্নার গমকে কথাই বলতে পারছিলেন না। এবারই প্রথম বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন থেকে বহুদূরে ঈদ করলাম। আম্মুর কান্না শুনে আমারো বুকভেঙ্গে কান্না আসছিলো...। তাকে শান্ত্বনা দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম খানিক।
ওনার সাথে কথা শেষ করে আমি চমকে উঠে মোবাইলের দিকে ভালোকরে তাকিয়ে দেখি, আমার আম্মুও বারকয়েক কল করেছিলেন। তখনই হৃদয় মাঝে ভেসে উঠলো আম্মুর মলিন মুখচ্ছবি। কান্নাভেজা কন্ঠের করুণ গোঙ্গানো-ধ্বনি। হায়, আমার আম্মুও তো নাইম ভাইয়ের আম্মুর মতই কান্না করবেন! তখন কি আমি পারবো নিজেকে সংযত রাখতে, না-কি আমিও...!
প্রবাসের ঈদে কোনো সুখস্মৃতি থাকেনা। যা থাকে, তা কেবলই অশ্রুর হরফে লেখা কোনো শোকগাঁথা। যেখানে কান্নারা জয়ধ্বনি করে, ব্যথারা করে শোকার্ত মিছিল।
আজ আবারও ঈদুল ফিতর। জীবনের দায় শোধ করতে যারা আক্ষরিক অর্থেই বুকে পাথর বেঁধে আসেন এই প্রবাসে, তাদের ঈদ বলতে কিছু থাকেনা। এটাই চরম সত্য ও তিক্ত বাস্তবতা। খুশি আর আনন্দ যেনো এখানে অমূল্য রত্ন, যার দেখা কালেভদ্রেই মেলে।
তারপরো, ঈদ আসে হাসি-আনন্দের বার্তা নিয়ে। সকলের মত প্রবাসিদেরও হৃদয়-অলিন্দে বয়ে যাক সুখের ফল্গুধারা। জীবন ভরে যাক হাসি-আনন্দের প্রাচুর্যতায়।