আনোয়ার আলদীন: ‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’-এই সুর লহরী এখন ভেসে বেড়াচ্ছে আকাশ বাতাস মন্দ্রিত করে। মনপ্রাণ ভরে উঠছে ঈদের আনন্দ রোশনাইয়ে।
রমজানের রোজার শেষে খুশির সওগাত নিয়ে আসছে ঈদ উল ফিতর। আজ রবিবার শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল সোমবার সারাদেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য ও উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদ উল ফিতর। তবে রমজান মাস ৩০ দিন হলে ঈদ হবে আরো একদিন পর মঙ্গলবারে।
সৌদিতে আজ ঈদ হলেও বাংলাদেশে কাল হবে কিনা সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না এখনই। তাই নির্ভর করতে হচ্ছে চাঁদের উপরই।
আজ চাঁদ দেখা কমিটি বৈঠকে বসবে বিকালে। তবে সৌদি আরবে ঈদ হবে আজ রবিবার। ফলে কাল বাংলাদেশে ঈদ হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক।
প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, চাঁদ দেখে রোজা পালন করবে এবং চাঁদ দেখে ঈদ উদযাপন করবে। তিনি বলেছেন, চান্দ্র মাস ২৯ দিনেও হয় আবার ৩০ দিনেও হয়। যদি আকাশে মেঘ থাকায় চাঁদ দেখা না যায় তবে ৩০ দিনের গণনা পূর্ণ করবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন, সংযম সাধনার পর ঈদের দিনে রোজাদারগণ শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যান।
ঈদ উল ফিতর আরবি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে উত্সব, আনন্দ, খুশি। রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজানের অবসানে নতুন চাঁদ দেখামাত্র ছোট-বড়, ধনী-গরীব, প্রতিটি মুসলমানের হৃদয় আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে। এই দিনে ধনী-গরীব, বাদশা-ফকির নির্বিশেষে সব মুসলমান এক কাতারে ঈদের নামাজ আদায় করে, একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে। ঈদ মুসলিম উম্মাহর জাতীয় উৎসব।
ঈদ উল ফিতরের দিনটি প্রতিটি মুসলমান নারী ও পুরুষের জীবনে তাৎপর্যে ও মহিমায় অনন্য।
আইয়্যামে জাহেলিয়াত বা ইসলাম প্রাক্কালীন যুগেও আরবে ‘নওরোয’ ও ‘মেহেরজান’ নামক দুইটি বাৎসরিক উৎসব ছিল অধিক জনপ্রিয়। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম মক্কা হতে মদীনায় হিজরত করে দেখতে পান যে, এই দুইটি জাতীয় উৎসবে মদীনার আবালবৃদ্ধবনিতা নানা প্রকার স্থূল খেলায় মেতে উঠতো। ফলে ওই পদ্ধতির পরিবর্তে মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধির পবিত্র স্পর্শমণ্ডিত এবং বহুবিধ কল্যাণধর্মী ঈদ-উল-ফিতরের কথা ঘোষণা করলেন। তিনি বললেন, লিকুল্লি কওমিন ঈদ, হা-যা ঈদুনা-অর্থাত্ প্রত্যেক জাতির বাৎসরিক আনন্দ-ফূর্তির দিন আছে। ঈদের দিন হচ্ছে আমাদের জন্য সেই আনন্দ-উৎসবের দিন। এইভাবেই হিজরী দ্বিতীয় বর্ষে প্রবর্তিত হ’ল ঈদ।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, ‘আজি আরাফাত ময়দান পাতা গায়ে গায়ে,/কোলাকুলি করে বাদশাহ্ ফকিরে, ভায়ে ভায়ে’।
একমাস রোজার শেষে ঈদের আনন্দ প্রতিটি মানুষের মনে খুশির দ্যোতনা ছড়ালেও দরিদ্ররা কি সেই আনন্দ ভেলায় ভাসতে পারছে? কবির কণ্ঠে তাই ধ্বনিত হয়েছে, “জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিদ/মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?”
পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পৃথক পৃথক বিবৃতিতে দেশবাসীর প্রতি ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।