উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্নমধ্যবিত্তের মানুষও এখন দেশের বাইরে ঈদ করতে যাচ্ছে বলে জানায় ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)। টোয়াবের তথ্য মতে এ বছর লম্বা ছুটিতে আনন্দ উপভোগ করতে সাড়ে তিন লাখ মানুষ দেশের বাইরে ঈদ করতে যাচ্ছে।
টোয়াব সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বাইরে ঈদ করা এখন একটি সাধারণ বিনোদন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ১০ বছরে দেশের বাইরে ঈদ করা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ। তবে কমেছে দেশে আসা পর্যটকদের সংখ্যা। যদিও দেশের মধ্যে ভ্রমণের সংখ্যা বাড়ছে তথাপি দেশের বাইরের পর্যটকদের আকৃষ্ট করার পক্ষে যুক্তি দেখান তারা। তারা বলছেন, দুই ঈদে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতের সাথে ভুটান, নেপাল , শ্রীলঙ্কায় ভ্রমণের আগ্রহ বাড়ছে মানুষের। সেই অনুপাতে কোনো একটি বিশেষ সময়কে কেন্দ্র করে ভিনদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারছে না বাংলাদেশ।
রফিকুল ইসলাম দিপু ভারতে গার্মেন্টসে তৈরি কাপড়ের ব্যবসা করেন। তার ভারতীয় পার্টি এরই মধ্যে বাংলাদেশ ঘুরে গেলেও দিপুর যাওয়া হয়নি। তাই বেশি ছুটি বলে ঈদের সময়টা বেছে নিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে তার পাঁচ দিন থাকা হবে। তামান্না খান কাজ করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। ঈদ-উল আযহা তিনি দেশের বাইরে উৎযাপন করেন। এবার এই ঈদে বাবাকে চেকআপের জন্য মা-বাবাসহ তামান্না যাচ্ছেন সিঙ্গাপুরে।
গ্লোকম ট্রাভেলের স্বত্বাধিকারী মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, এবার মানুষের দেশের বাইরে যাওয়ার হার একটু কম দেখা যাচ্ছে। দুই তিন বছর আগে ঈদের এক মাস আগে থেকে সিঙ্গাপুর, থ্যাইল্যান্ডের টিকিট সংকট দেখা যেত। এবার তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। কারণ হয়তবা মানুষের হাতে টাকা কম। ঈদকে সামনে রেখে বিদেশ থেকে অনেকই দেশে আসে আত্মীয়-স্বজনের সাথে ঈদ করতে। এবার সে পরিমাণটাও কম। এবছর তার ট্রাভেল এজেন্সি থেকে সিঙ্গাপুর, বার্লি, থাইল্যান্ডে মানুষ বেশি যাচ্ছে বলে জানান তিনি। এর বাইরে কিছু মানুষ যাচ্ছে ইউরোপে। গত বছর যারা এশিয়ার দেশে ঘুরেছেন তাদের প্রায় ৫০ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ এবার ইউরোপ-আমেরিকা যাচ্ছেন।
টোয়াবের প্রেসিডেন্ট তৌফিক উদ্দিন আহমেদ জানান, সারা বছর ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ দেশের বাইরে ভ্রমণ করে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করে ঈদের এই লম্বা ছুটিতে। দেশের কিছু কিছু এয়ারলাইন্স বিদেশি কিছু হোটেলের সাথে যৌথভাবে এ সময় প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা করে। আমাদের দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি যায় ভারতে। গত বছর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ভারত ভ্রমণে বাংলাদেশ এখন প্রথম স্থানে আছে। প্রতিদিন সাড়ে ছয় হাজার মানুষ ভরতের ভিসা পায়। সেই মতে বছরে ১৫ লাখ লোক ভারত যায়।
তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে কলকাতা যাওয়া কক্সবাজার থেকেও সুলভ। তাই দেশের বাইরে ভ্রমণের কথা এলে আমাদের ভারতের কথাই প্রথম আসে। তিনি বলেন, শুধু অবকাশ নয় এখন মানুষের হাতে টাকা আছে বলেই তারা দেশের বাইরে বেড়ানোর কথা ভাবতে পারেন। দেশের মধ্যেও প্রতিবছর ৫০ হাজার মানুষ ভ্রমণ করে। তবে বিদেশে যাওয়ার সাথে সাথে আমাদের দেশে আসা এবং দেশের মধ্যে ভ্রমণ করাকে উৎসাহিত করতে হবে।
তৌফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১৬-১৭ সালকে ট্যুরিজম ইয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু যে সব পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা দরকার ছিল আমরা তা করতে পারিনি। আমাদের বিজ্ঞাপন চিত্রগুলো ইমিগ্রান্ট বাংলাদেশিদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। আগে প্রবাসী বাংলাদেশিদের টার্গেট করে কাজ করতে হবে।
একই কথা বলেন, ট্যুরিজম ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিডাব) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জামিউল আহমেদ। তিনি বলেন, প্রতি বছর ২৫ লাখ মানুষ দেশের বাইরে ভ্রমণ করলেও বিদেশ থেকে দেশে আসে এক লাখ ৫/৬ হাজার। আমাদের এই দিককে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের দর্শনীয় স্থানগুলোকে আরো আকর্ষণীয় করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের নাইট লাইভ করতে হবে। যা নেই। একজন টুরিস্ট ২৪ ঘণ্টার ১৬ ঘণ্টা বেড়ায়।
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি বিভাগের অধ্যাপক রাশেদুল হাসান বলেন, কোনো একটি বিশেষ সময়কে কেন্দ্র করে ভিনদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারছে না বাংলাদেশ কথাটা সত্যি। এ বিষয়ে সরকারে দায়িত্ব হলো, নীতি করা। কিভাবে ট্যুরিজমকে আকর্ষণীয় করা যায় তা নিয়ে আরো কাজ করতে হবে। যেমন কক্সবাজারকে নিয়ে ওটার গেমস, ওটার শো, একুরিয়াম করা যেতে পারে। এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে বাজেটেও বরাদ্দ রাখতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশে মানুষ আসবে।
সূত্র: ইত্তেফাক