হুমায়ুন আইয়ুব : ব্রহ্মপুত্রপাড়ের ছেলে মুহিউদ্দীন খান। ময়মনসিংহের গফরগাওয়ে পৈত্রিক বাস। তার জীবন নদীর স্বপ্নপুরুষ মাওলানা শাসসুল হক ফরিদপুরী, মাওলানা নুর মুহাম্মদ আজমী, মাওলানা আকরাম খাঁ। মহার্ঘ এই তিন বটবৃক্ষের মতো জীবন রাঙাতে চেয়েছিলেন তিনি।
মাওলানা খানের চেতনার উৎস মা-বাবা। উভয়ে তার জীবন গাঙের পাল উড়িয়ে পথ চলতে সহায়তা করেছেন।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের লেখক হয়ে ওঠার গল্প জানতে চেয়েছিলাম, শিশুর মতোই সারল্যভাব নিয়ে বলছিলেন তিনি, আমার বাবা মৌলবি আনসার উদ্দীন খান, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একজন নিবিড় পাঠক। বইপ্রেমিক। লেখক। আমার ছেলেবেলা থেকেই দিল্লি কলকাতা, বৈরুত থেকে ডাকযোগে বই আসতো আমাদের বাড়িতে। ঢাকা থেকেও নতুন সব বই কাগজ।
খানের ভাষ্য, আমার বাবা লেখক। মা বোদ্ধাপাঠক। মাসিক মোহাম্মদী, আল ইসলাম, শরিয়তে ইসলাম, মাসিক নেয়ামত, সাপ্তাহিক হানাফী ইত্যাদি বাবা মা পাঠ করতেন। বইপ্রেমিক বাবা-মার কাছেই আমার লেখালেখির হাতেখড়ি।
খান বলেন, আম্মার কাছেই শিখেছি কথা বলার ডঙ, বাবার কাছে বাংলাভাষার আগাগোড়া।
ধৈর্য্য না ফুরালে একটি গল্প বলি,
আমি তখন ঢাকা মাদরাসা-ই আলিয়ার ছাত্র। নতুন ভর্তি হয়ে আব্বাকে কয়েক পাতার পত্র লেখি। হলুদ খামে চিঠি উড়ে যায়- পাঁচবাগে। আমার সবুজ গ্রামে। বাবার কাছে। শাপলাভরা বিল, সবুজ ঘাসবন পেরিয়ে পাঁচবাগে পত্র উড়ে গেলেও আমি ঢাকায়। রীতিমতো ক্লাস। মেধাবী বন্ধুদের মেধার প্রতিযোগিতা। নতুন হলজীবন। অস্থিরতা। গ্রীস্মের ছুটি। অতঃপর বাড়ি।
একজন শায়খুল হাদীস ও তার ভালোবাসা
ছুটি কাটাতে বাড়ি। মানে নেত্রকোনার পাঁচবাগে। সবুজ বাতাসে। বাড়ি ফেরার প্রথম সাক্ষাতেই বাবার উম্ম কণ্ঠের তিনজিজ্ঞাসা, ছুটি কয়দিনের? বাড়ি থাকবে কয়দিন? হাতে নির্ধারিত কোনো কাজ আছে তোমার?
বাবার প্রশ্নবানে ভড়কে গেলাম। নিচু কণ্ঠে বললাম, একমাস সাতদিন ছুটি।
সাতদিন তোমার, একমাস আমার। আমার কাছে পড়তে হবে, বললেন বাবা।
অবাক কাণ্ডে! আমি ঢাকা আলিয়ার তুখোর ছাত্র। আমার ডানে বায়ে প্রতিভার মিছিল। সেখানে আব্বা...!
দুদিনপর সন্ধা। হ্যারিকেনের আলোতে ডাক পড়লো আমার বাবার ঘরে।
নতুন শ্লেট, পেন্সিল, ও শিশুতোষ একখানা বাংলাবই আমার হাতে তুলে দিলেন। চোখের সামনে মেলে ধরলেন আব্বাকে লেখা আমার ভুল বানানের দীর্ঘপত্র। ভুলগুলো লালদাগি। গোলাকার। বাবান, শব্দগঠন বাক্যের অসঙ্গতি কোনোটাই বাদ পড়েনি বাবার লালদাগ থেকে। পাতা জুড়ে গোল গোল বৃত্ত।
মাটির শ্লেট শিখি শব্দের বুনন, বাক্যের প্রয়োগ। একমাস অবিরাম অনুশীলন। বিষয় বৈচিত্র ও বাংলা ভাষার নানাভাবনা জড়ো হতো আমাদের সন্ধ্যা ঘরে। বাবার মুখ ফসকে বেরিয়ে আসতো কতো উপমা উদাহরণ। বলতে দ্বিধা নেই, মাটির শ্লেটের অনুশীলনের যোগফল আজকের এই আমি। সেদিন থেকে আজ এই মাটির শ্লেট।
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান আশৈশব সাহিত্যবান্ধব পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন। তার দাদা... বর্ষার দিনে বাড়িতে পুঁথির আসর বসাতো। পুথিয়াল মুন্সি আজিমুদ্দীনের আসরারুস সালাত থেকে পুঁথি সাহিত্যেও কালজয়ী গ্রন্থ গাজী কালু চম্পাবতীও পঠিত হয়েছে তার শৈশবের উঠান ভিটে।
বলার মতো বিষয় হলো, মাওলানা খানের দাদিও নাম কলম জানবিবি দরবেশ আবুল ফাত্তাহর সঙ্গে তার বেশ সখ্য গড়ে উঠে ছিল। তিন বছরের শিশু মুহিউদ্দীনের কানে খাগড়ার কলম গুঁজে দেন সেই মক্কার দরবেশ আবুল ফাত্তাহ। এই বলে,
কলম গুঁজে দেন, সোনা ভাই আমার। তোমাকে দিয়ে গেলাম মুক্তাগাছার জমিদারী লিখে।
শুধু মুক্তাগাছা নয় সময়ের ব্যবধানে দেশজুড়েই ছড়িয়ে পড়েছে মাওলানা খানের কলমের চাষবাস। সাহিত্যের জমিধারী। দেশের সীমানা অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক উচ্চতায় তিনি উজ্জ্বল। তার অনুদিত বিশ্ববিখ্যাত তাফসির, মাঅরিফুল কুরআন বিশ্বময় পঠিত। ভাষা ও সাহিত্যে জমিদারী সম্ভব হয়েছে আশৈশব সাহিত্যবান্ধব পরিবেশে বেড়ে ওঠার কারণেই।
চুলায় রান্না বসিয়ে পাক ঘরের জলচৌকিতে বসে মায়ে গ্রন্থপাঠের গল্প শুনাতেও ভুল করেননি মাওলানা খান। এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় তার গেন্ডারিয়া বাসায় হাজির হই। সঙ্গে ছড়াশিল্পি আমিন আশরাফ। আলাপে উঠে আসে তার জীবন সাহিত্যের মাঠ ঘাট। সাহিত্যের প্রথম পাঠ শান্তিধারা। ড. লুৎফর রহমানের পদ্যগ্রন্থেও মাধ্যমে। প্রথম প্রকাশিত লেখা ফেনির তালিম পত্রিকায়। দিনকয়েকের ব্যবধানে তার লেখা ছাপা হয় সাপ্তাহিক সৈনিকে। লেখালেখির শুরু কবিতার মাধ্যমে হলেও তিনি সিদ্ধি পেয়েছেন গদ্যে। শুরুর জীবনে নামে বেনামে অসংখ্য গল্প কবিতা লিখছেন খান। নুইয়ে পড়া বার্ধক্যে ভরা যৌবনের অনুভাবী ভাঙ্গাগড়ার গল্প কবিতা নিজের বলে স্বীকার করতে নারাজ তিনি।
ছদ্মনামে অনেক গল্প কবিতাই লিখেছেন, আপনার সেই ছদ্মনাম বা লেখাগুলো কী? কবিতার হাত ধরেই লেখালেখি শুরু। তবে কবিতার বীজতলায় ঠাঁই হইনি বেশি দিন। মাঝে গল্প লেখার নেশাও পেয়েছিল। লিখেছি বেনামে।
বেনামটা কী?
কিছুটা রেগে গেলেন খান। বললেন, যে হালকা লেখাগুলো আমার বলে স্বীকার করছি না সেই লেখার ব্যবহৃত নাম বলবো কেন?
কেন?
কারণ হলো আমি আপদমস্তক একজন আলেম ঘরনার মানুষ। আমার ভবিষ্যৎ জীবনের স্বপ্নপুরুষ, মাওলানা মুহাম্মদ আকরাম খা, মাওলানা নুর মুহাম্মদ আজমী, মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী। জীবনের বেলা অবেলায় কোনো মুহুর্তেই হালকা কোনো লেখা আমার নামের সঙ্গে যুক্ত হোক তা আমি চাই না। গল্প বলার মিথ্যা ঢেঁকুড়, কবিতার আনন্দ বিষাদ আমার জীবন অভিধানে নেই।
পাঠের গভীরতায় পৌঁছাতে লেখকের নিজস্ব পাঠশালা আবশ্যক, আপনার ব্যক্তিগত পাঠশালা কতটা সমৃদ্ধ।
পাঠাগার আমার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। পাঠ আমার নেশা। এই ভেঙ্গে পড়া বার্ধকেও। পাঠেই যৌবনের স্বাদ পাই। শৈশবে বাবার কাছে ডাকযোগে আসা নতুন বইয়ের গন্ধ আমার কাঁচা নাকে যেমন আমোদিত করেছে। আজও তা অক্ষয়। নাক বড়ো হয়ে গেলেও গন্ধ স্বাদ স্পর্শের ক্ষমতা ফুরিয়ে যায়নি। দেশি বিদেশি দুস্প্রাপ অনেক বইয়ের সন্ধান পেয়েছি বাবার ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা থেকে। বই কেনা, সংগ্রহ ও পাঠ আমার রোগ।
বই দিবস পালনে লাইব্রেরিতে যাতায়াত এবং লাইব্রেরি ঘিরে জন্ম নেওয়া কোনো গল্পের কথা বলুন
আপনার বই দিবস উচ্চারণটা বেশ ভালো লাগলো। প্রাণীত হলাম। এত শত আবর্জনা দিবসের ভিড়ে বই দিবস উৎযাপন করতে পারলে বাংলাদেশের তরুণরা মেধা ও মননে অগ্রসর হবে। বইয়ের নতুন জগৎ সৃষ্টির জন্য, তরুণদের কণ্ঠে বারবার উচ্চারিত হোক বই দিবসের শ্লোগান।
ধন্যবাদ আপনাকে এতোটা দৃঢ়ভাবে বলার জন্য।
লাইব্রেরি ঘিরে জন্ম নেওয়া কোনো গল্পের কথা জানতে চেয়েছিলাম।
ঢাকা আলিয়া মাদরাসার লাইব্রেরি তন্নতন্ন করে পড়েছি। কোন সেলফে কোন বই মুখস্ত ছিল। এখনতো বইগুলো পঁচে গেছে।
কেন্দ্রিয় পাবলিক লাইব্রেরিতেও যাতায়াত ছিল। এদিকে বই পাড়ার ঘনিষ্ঠ দুইজন বিদগ্ধ পাঠকের সঙ্গে আমার সখ্য ছিল। তাদের ব্যক্তিগত পাঠাগারের কাছে আমি অনেক ঋণী। দুইজনই আমাকে সমান ¯েœহ করতেন। নতুন বই এলেই আমার হাতে তুলে দিতেন। একজন মাওলানা আব্দুল্লাহির কাফী আল কুরাইশী, অন্যজন পশ্চিমবঙ্গেও মৌলবি বশির উদ্দিন। তবে পাঠে আমি বাচ বিচারী ছিলাম না। সামনে পেয়েছি তো ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো টেনে হিচড়ে খেয়েছি।
পাঠেগুন বিচার ও বাছবিচার শিখিয়েছেন মাওলানা নুর মোহাম্মদ আজমী র.। দিল্লির আজমঘর, দারুল মুসান্নিফ, দারুন নদওয়া ইত্যাদিও প্রকাশনার নির্বাচিত গ্রন্থের তিনিই প্রথম খোঁজ দিয়েছেন।
বাংলা সাহিত্য আপনার গুরু ও দীক্ষাগুরু আছে?
আমার মনে হয় না। আমি কারো মাধ্যমে প্রভাবিত নই।
আজন্ম প্রতিবাদী কণ্ঠ মাওলানা মুহিউদ্দীন খান। বাংলা ও বিশ্বসাহিত্যে অগাধ জ্ঞান, বহুশাস্ত্রের পাÐিত্য তাকে দেশে-বিদেশে শ্রদ্ধেয় করে তুলেছে। দীর্ঘ তফসিরে মাঅরিফুল কুরআন, রুমির মসনবি, মাওলানা শিবলি নোমানির আল ফারুক অনুবাদের মাধ্যমে খান বিশ্ব সাহিত্যে বাংলা ভাষার নতুন সেতু স্থাপন করেছেন।
প্রতিবাদী তিনি। অস্থির রাজনীতি তার নিত্য সঙ্গী। ‘খানের রাজনৈতিক অস্থিরতা রয়েছে’ মন্তব্য করেছেন মাওলানা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহও। অতি প্রগতি আর বাম রামদের কীটনাশক মাওলানা মুহিউদ্দিন খান। সরকার ও বামসুবিধাভোগীরা যখনই দেশ স্বাধীনতা ও ধর্মে আঘাত করেছেন তখনই মুহিউদ্দীন খানের নির্ভীক বক্তৃতা বিবৃতিতে উতপ্ত হয়েছে পল্টনের রাজপথ রাজনীতি। সভাবসুলভ ভদ্র বিনয়ী হাসি খুশির মানুষ হলেও ধর্মীয় সঙ্কট মুহূর্তে তিনি বারবারই গর্জে উঠেন। প্রতিবাদ, প্রতিঘাত দ্রোহ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে প্রজ্ঞাশাসিত জ্ঞানগম্যির কারণেই।
পাঠের গভীরতায় পৌঁছা ও সব রকম বৈরী প্রাচীরের বন্ধন উচিয়ে স্বতন্ত্র বলয় সৃষ্টিই তার প্রধান উদ্দেশ্য। জ্ঞান সমুদ্রের ¯্রােতে আশি উর্ধ্ব মগ্নপাঠক মাওলানা খান। তার নিঃস্বঙ্গ জীবনের বন্ধু বই। নিয়ম নেমে সন্ধ্যা থেকে রাত ডুবে থাকেন পাঠে। ইতিহাস ঐতিহ্য পাঠে আগ্রহ প্রবল। সাহিত্যে রসে জলে ভিজতেও ভালবাসেন। এখনো খোঁজেন নতুন পাঠ। নতুন স্বাদ। তাজা অনুভূতি- উপলব্ধি। হালে বড় ফ্রেমের চশমায় আরবি ভাষায় রচিত ইমাম আবু যহরার অসাধারণ গ্রন্থ ইমাম আজম আবু হানিফা, সৈয়দ আবুল হাসান আলি নদবির আলমুরতাজা-র অলি গলি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। স্বাদ নিচ্ছেন নতুনত্বের। যোদ্ধে যাওয়ার সেই ভরা যৌবনে পাঠ করেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের, গীতাঞ্জলি, গোরা, ঘরে বাইরে, যোগাযোগ, শেষের কবিতা, দুই বোন ও গল্পগুচ্ছ। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস-দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা, বিষবৃক্ষ, ইন্দিরা, সীতারাম উপন্যাস। গোলাম মোস্তফার- হাসনাহেনা, খোশরোজ, সাহারা (কাব্যগ্রন্থ), রূপের নেশা, ভাঙ্গাবুক ইত্যাদি উপন্যাস।
কবি জসিম উদ্দিনের সুজন বাদিয়ার ঘাট।
বাংলা সাহিত্যে খানের প্রিয় লেখক ফররুখ আহমদ। খানের ভাষায় ফররুখ চেতনা বিশ্বাসে দ্রোহ জ্বালা ও জাগরণের কবি। আরবি সাহিত্যে আলফে লায়লা থেকে আধুনিক সাহিত্যেও আবু যহরা, আলি মিয়া নদবি, আলি তানতাবির বিস্তৃত পাঠভূমি বিচরণ করছেন তিনি।
উর্দু সাহিত্যের প্রান্তরেও তার নীরব বিচরণ।
সাহিত্যেও কোনো আলাপ আড্ডায় অংশ নিয়েছেন কখনো। আছে সাহিত্যের কোনো বন্ধু?
ভাষা আন্দোলনের মুখপাত্র সাপ্তাহিক সৈনিক- এর নিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠান তমদ্দুন মজলিস ঘিরে নিয়মিত সাহিত্যেও আড্ডা বসতো। সে সময়ের সমমনা কবি লেখকরা মজে যেত সেই আড্ডায়। বোদ্ধা সমালোচকদের আলোচনা সমালোচনাও শ্রোতাদের বাড়িতে পাওয়া।
লিখতে এসে সন্ধান পেয়েছিলাম আমার প্রজন্মের অনেক অপ্রতিরুদ্ধ প্রতিভার। তাদের কয়েজনের কথা বলবো- দেওয়ান আব্দুল হামিদ, কবি জহির বিন কুদ্দুস, কবি মহিউদ্দিন আহমদ, প্রমুখ। প্রায় সবাই তো চির ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছেন।
ভাষা ও সাহিত্যেও জমিদার মাওলানা মুহিউদ্দীন খান। পারিবারিক অস্বচ্ছলতায় বেড়ে উঠলেও শ্রম মেধা ও প্রতিভার গুণেই তিনি আজ কলমের রাজ্যে সার্থক কৃষক। শ্রেষ্ঠ জমিদার। গোলাভরা ধান নয়; রাজ্যের জমিদারী করে ঘরে তুলেছেন একশো বারোটি অমূল্য গ্রন্থ।
বিস্তৃত সবুজ মাঠে কৃষক চাষ করে লাঙ্গল হাতে। মাওলানা খান কাগজের মাঠে। কলমের চাষী। চাষবাসের অসামান্য ফসল -বিশ্ববিখ্যাত তাফসিরগ্রন্থ মাআরেফুল কুরআন, প্রিয় নবীজীর প্রিয় প্রসঙ্গ, খাসায়েসুল কুবরা, ওসওয়োয়ে রাসুলে আকরাম, এসইয়াউ উলুমিদ্দীন।
মাওলানা খানের মৌলিক ও অনুবাদ গ্রন্থের বিষয়বৈচিত্র্যও বেশ উপভোগ্য। মানব জীবনের লক্ষ্য উপলক্ষ্য, প্রসঙ্গ অপ্রসঙ্গ সবই আলোচনা হয়েছে এই জমিদারের কলমে। ধর্মীয় পঠন সামগ্রী প্রস্তুতের অদ্যম আগ্রহ, নিবিড় পথচলা তার চোখ এড়াইনি... মতো গৌণ্য বিষয়ও।
কুরআনুল কারিমের তাফসির রচনা ও নবী জীবনের গবেষণার জন্যই মাওলানা খান বাংলা বাষা ও সাহিত্যে হাজার বছর বেঁচে থাকবেন। তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ আদাবুল মসজিদ, সবশেষ হাদিসের দৃষ্টিতে কেয়ামতের আলামত। শুরু শেষ যাই হোক মাওলানা খানের লেখালেখির টার্নিং পয়েন্ট আল ফারুক। জগৎ বিখ্যাত সাহাবি, খেজুর। তার মসনদধারি হজরত ওমর রা. এর জীবন সংসার বিষয়ক কালজয়ী গ্রন্থ।
তবে এতো কাজ তিনি কীভাবে একা করেছেন? বিস্ময়ের সুরে প্রশ্ন ছুড়ে দিই তার কাছে। সবগুলোই কী আপনার একার কর্ম?
আমি সব একাই করেছি। আমি কামলা লইয়া কোনো দিন কাজ করি নাই। আমার পছন্দ হয় না। আমার যৌথ কোনো অনুবাদ নেই। কোথাও সামান্য সহযোগিতা নিয়েছি। তাদের ঋণ স্বীকারেও ভুলিনি। শুরু দিকে দুই একটা লেখায় যৌথ করেছি বটে, সেখানে আমার নাম নেই। সহকর্মীদের দিয়ে দিছি।