ভারতের দিল্লির সোনিয়া বিহার এলাকায় অম্বে এনক্লেভে সম্প্রতি নির্মিত একটি মসজিদ ভেঙে ফেলার ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ। সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা মাহমুদ মাদানী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কাছে চিঠি দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার মুসলিমদের নিরাপত্তা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন। খবর ইকনা
মাওলানা মাদানী বলেন, দিল্লির সোনিয়া বিহার এলাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকজনের পক্ষ থেকে মসজিদ ধ্বংসের পরে স্থানীয় সংখ্যালঘু মুসলিমদের হুমকি দেয়া হয়েছে সেজন্য সেখানকার পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ। এজন্য সরকারকে দ্রুত ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে।
মাওলানা মাদানী তার চিঠিতে দ্রুত সংশ্লিষ্ট মসজিদটি পুনর্নির্মাণের আদেশ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের এক প্রতিনিধিদল সম্প্রতি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
মাওলানা মাদানী সেখানকার উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এর পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, দুর্ঘটনার ৮ দিন আগে ২৯ মে এ নিয়ে তথ্য থাকা সত্ত্বেও কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার ফলে এটি ঘটেছে।
তিনি বলেন, রমজানের পবিত্র মাসে কিছু দুর্বৃত্ত তাদের মসজিদ ভেঙে দিয়েছে যেখানে ৫ ওয়াক্ত নামাজ এবং তারাবীহ নামাজ পড়া হতো। মসজিদ ভাঙার ৬ দিন পরেও সেখানে আতঙ্কের পরিবেশ রয়েছে, কারণ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সংখ্যালঘুদের সাহায্য করছে না।
একটি সূত্রে প্রকাশ, সমাজকর্মী নাদীম খান বলেন, চলতি রমজান মাসের আগে গ্রামের কিছু মানুষ একত্রিত হয়ে এলাকার এক প্রপার্টি ডিলার হাজী আকবর আলীর কাছে মসজিদের জন্য জমি দেয়ার আবেদন জানালে আকবর আলী তাদের ১০০ গজের একটি প্লট দেন। গ্রামবাসীরা এজন্য চাঁদা তুলে কিছু অর্থ তাকে দেন এবং বাকি টাকা ঈদের পরে দেয়ার কথা ছিল। সেখানে মসজিদ তৈরি হলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং তারাবীহ নামাজ হচ্ছিল। পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিন আগে বেলা ২ টার সময় একদল উন্মত্ত জনতা হাতুড়ি, কুড়ুল, কোদাল ইত্যাদি নিয়ে এসে মসজিদটি মাটিতে মিশিয়ে দেয়।
নাদীম খানের মতে, ঘটনাস্থলে যেয়ে বোঝা যায় সেখানে আরএসএসের এক কর্মকর্তা গিয়ে এলাকায় উসকানি দেন যে, এখানে ইসলামীকরণ করা হচ্ছে। এর আগে কখনো এখানে ধরণের কথা শোনা যায়নি। বহুবছর ধরে সেখানে হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গে রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোনো সম্পন্ন মুসলিম বাস করেন না। সাধারণত দিনমজুর এবং ফেরিওয়ালার কাজ করে এলাকার গরীব মুসলিমরা। তারা এখন বাড়ির বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন। তাদের মারধর করা হতে পারে বলে আশঙ্কায় রয়েছেন। চলাফেরার পথে গুজ্জর সম্প্রদায়ের যুবকরা তাদের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ।
কিছু মুসলিম ওই এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তাদের বাসা খালি করে দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। পুলিশ ২ জনকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়েছে। যদিও অভিযুক্তের সংখ্যা আরো অনেক বেশি।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওয়েলফেয়ার পার্টি অব ইন্ডিয়ার নেতা সাইয়্যেদ কাশেম রসুল ইলিয়াস, জামায়াতে ইসলামী হিন্দের ইনামূর রহমানদের বক্তব্য- মসজিদ শহীদ হওয়া তো ইস্যু আছেই। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মুসলিম পরিবার তাদের বাসা থেকে বেরোতে পারছেন না। এদের রুটি-রুজির উপরে প্রভাব পড়েছে।
এদিকে, পুলিশের দাবি, যেখানে মসজিদ বানানো হয়েছিল সেটি বিতর্কিত জমি। কিন্তু মুসলিমরা বলছেন, যদি জমি বিতর্কিত হয় তাহলে যার জমি তিনি আসতেন এবং কথা বলতেন। কিন্তু তা না করে এভাবে মসজিদ ভেঙে ফেলা আসলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা।
সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিবিসি হিন্দি’র সাংবাদিক জানতে পারেন- বেশ কিছু মুসলিম পরিবার অম্বে কলোনি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এক মুসলিম ব্যক্তিকে তার চুল কাটার সেলুন বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বাড়ির মালিক নাকি তাকে বলেছেন দোকান ছেড়ে চলে যেতে। তিনি এখন নিজের ঘরেই সেলুনটা পুনরায় চালু করার কথা ভাবছেন।
যারা মসজিদ ভাঙতে এসেছিল, তাদেরকে দেখেছিলেন বিমলেশ মৌর্য নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘চার-পাঁচশো লোক জড়ো হয়েছিল। ওই লোকগুলো কোথা থেকে এসেছিল বলতে পারব না। তবে ওরাই মসজিদটা ভেঙেছে।’
সংশ্লিষ্ট এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে এমন ম্যাসেজও ছড়ানো হচ্ছে যে, অম্বে কলোনীর ওই জায়গায় ৮/১০ ঘর মুসলমান থাকে, তাই সেখানে কেন একটা মসজিদ বানানো হবে? সেসব মেসেজের মাধ্যমে হিন্দুদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে যে, 'ইসলামীকরণের প্রক্রিয়া' যেন সকলে মিলে বন্ধ করতে সচেষ্ট হয়।
মসজিদের পাশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং তারা বিশেষ করে ইফতারের সময় এলাকায় টহল দিচ্ছেন। জমির মালিক আকবর আলীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
ভাষা ও সাহিত্যের জমিদার মাওলানা মুহিউদ্দন খান